করোনায় কুপোকাত, কী করবেন

করোনাভাইরাস। বর্তমান সময়ে দুনিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে শুরু। এই ভাইরাসের আক্রমণে দিনে দিনে জনজীবন সেখানে বিপর্যস্ত। আতঙ্ক না ছড়াতে চীন সরকারের বিরামহীন চেষ্টা। বেসামাল পরিস্থিতি। ভাইরাস ছড়িয়েছে দ্রুতগতিতে। একজন থেকে অন্যদের। উহানে করোনাভাইরাসে কুপোকাত হয়েছে মানুষের জীবনের। মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

বাণিজ্য আর অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাপী চীনের আধিপত্য প্রায় শীর্ষে। বিশ্বের যেকোনো দেশের সব ধরনের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল আর পণ্যদ্রব্য অতিদ্রুততার সঙ্গে জোগান দিয়ে থাকে। তাই বিশ্ববাজারটা চীনের দখলে। এই প্রভাবকে টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন নিজেদের যেকোনো সংকটকে দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করবে—সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নতুন এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করে মানুষের জীবন বাঁচাতে তাদের সব চেষ্টা প্রায় ব্যর্থ।

মানবদেহে করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে কোভিড-১৯। কোভিড-১৯ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। চীনকে ছাড়িয়েছে এ রোগ। কোরিয়া আর জাপানে ছড়িয়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার এখন প্রায় সারা দুনিয়ায়। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা—সবখানে। ইতালি, স্পেন, ইরান, ফ্রান্স, কোরিয়ায় ভয়াবহ অবস্থা। সময় গড়িয়ে করোনায় আক্রমণের পরিস্থিতি আসলে মহামারিতে রূপ নিয়েছে। ১১ মার্চে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ঘোষণা এল এই মহামারির। প্যান্ডেমিক।

বৈশ্বিক এই মহামারিতে দেড় লক্ষাধিক মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্য প্রায় ছয় হাজার। প্রতিদিনই বাড়ছে এ সংখ্যা। ইউরোপের জার্মানিতে প্রায় ৬০-৭০ ভাগ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ররার্ট কক ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ সদস্যদের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই রোগের বিস্তার¯রোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করছে। আমেরিকায় এই জীবাণুতে আক্রান্তšতিন সহস্রাধিক মানুষ, সেখানে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সে দেশে ইতিমধ্যেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

কানাডায় আজ অবধি প্রায় ২৫০ জন আক্রান্ত। ফেব্রুয়ারিতে চীন থেকে আসা এক যুগল দিয়ে এই গগণার শুরু। অন্টারিও প্রদেশ আর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। তবে আশার কথা, এ দেশে মারা গেছে মাত্র একজন। ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দুই সপ্তাহের জন্য নিজেকে কটেজ কোয়ারেন্টিনে রেখেছেন। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন। কটেজে থেকেই আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনি দেশ পরিচালনা করছেন। কয়েক দিন আগে তাঁর স্ত্রী সোফি ট্রুডো যুক্তরাজ্য সফর শেষে ফিরেই অসুস্থ বোধ করছিলেন। টেস্টে সোফির দেহে করোনাভাইরাসের কোভিড-১৯ রোগ ধরা পড়ে।

উন্নত দেশ কানাডায় চিকিৎসাব্যবস্থা অত্যন্তšপ্রশংসনীয়। আর আছে সুন্দর সরকারি ব্যবস্থাপনা। তবুও দিন দিন নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্তšমানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রীও আক্রান্ত হওয়ায় দেশব্যাপী শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চারদিকে হঠাৎই ভীতিভয় পরিবেশ। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকেটায়। এতে খাবার দ্রব্যাদি, টয়লেট পেপার আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার অন্যতম। সুপার মার্কেটগুলোতে এসব জিনিসপত্রের শেলফগুলো এখন প্রায় খালি। অন্টারিও প্রাদেশিক সরকার ইতিমধ্যেই সব স্কুল তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধ করেছে। ৪ এপ্রিল পর্যন্তšবন্ধ থাকবে। অনেক অফিস, শিল্পকারখানায় আইটি সেক্টরের জনবলকে বাসায় বসে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কেনাকেটায় বাড়াবাড়িটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমেরিকা আর কানাডায় এই বাড়াবাড়ি খাদ্যদ্রব্যদি, টয়লেট পেপার আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার পেতে। তবে বাংলাদেশে হচ্ছে মাস্ক নিয়ে। অহেতুক। শুধু মাস্ক করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারবে না। ভাইরাসের আকার এতটা ক্ষুদ্র যে সাধারণ মাস্কের ভেতর দিয়ে এটা সহজেই চলাচল করে শ্বাসনালি ও মুখের ভেতর যাবে। হাঁচি-কাশির তরল কণার সঙ্গে মিশে এই জীবাণু একজন থেকে অন্যজনে ছড়াবে। তাই সুস্থ মানুষকে জীবাণু না দিতে এ ক্ষেত্রে রোগীর জন্যই মাস্কের বেশি প্রয়োজন। ডাক্তার আর নার্সদের ব্যাপারটা ভিন্ন। উপরন্তু একই মাস্ক অনেক সময়ব্যাপী ব্যবহার করলে নিজেই জীবাণুতে আক্রান্তšহওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি এড়িয়ে কিছুটা দূরত্ব রেখে কথা বলা নিরাপদ। যত দূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলা দরকার। সাবান দিয়ে ভালোভাবে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করা খুবই জরুরি। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে সাবান বেশি কার্যকর হবে। ঘরের বাইরে পরিধেয় কাপড়চোপড় যথাসম্ভব পরিষ্কার করা উচিত। কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে সবকিছুর আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে সুন্দর একটা গোসল অতিপ্রয়োজন।

করোনার এই মহামারিতে শেয়ারবাজারে বিশাল ধস। কুপোকাত। বিভিন্ন সূচকে ব্যবসা–বাণিজ্য আর শিল্পকারখানায় অবনতি। অর্থনৈতিক মন্দা কি তবে আসছে? বিশেষজ্ঞ আর বিশ্বনেতারা তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সম্বল দিয়ে মহামারিকবলিত এই বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন—এই আশা।

*লেখক: রিসার্চ সায়েন্টিস্ট, টরন্টো, কানাডা। [email protected]