করোনাভাইরাস: তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক দূরত্ব
গোটা বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কম্পমান। এ যেন এক মহা আতঙ্ক আমাদের সুন্দর স্বাভাবিক জীবনকে গ্রাস করে ফেলেছে। সবাই নিজেদের যেন গৃহবন্দী করে রাখাটাই নিরাপদ মনে করছে।
‘হোম কোয়ারেন্টিন’ শব্দটি এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে আমরা অনেকবার শুনে ফেলেছি। কিন্তু অনেকের মাথায় চিন্তা আসছে যে সব বন্ধ করে রেখে দিয়ে এভাবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা আসলে করোনাভাইরাসকে কি দুর্বল করতে পারবে? এখন কথা হচ্ছে যে এ ভাইরাসের যেহেতু কোনো প্রতিষেধক নেই, সেহেতু এর থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরই কোনো এক উদ্যোগ নিতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টে একটি আর্টিকেল সেদিন চোখে পড়ল। লেখক হেরি স্টিভেন্স সেখানে একটি পরীক্ষা চালান কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে। সিমুলেশনে ধরে নেওয়া হয়, একটি ভাইরাসবাহিত রোগ, যেমন করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে। সিমুলেশনের পরিবেশে কিছু আক্রান্ত লোক আছে, কিছু লোক রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে। আক্রান্ত লোক থেকে আবার সুস্থ লোক আক্রান্ত হচ্ছে। রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া লোক, আক্রান্ত লোকের থেকে আর আক্রান্ত হচ্ছে না এবং তারা আর ভাইরাস ছড়াচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে থাকা, অনেক মানুষের সমাবেশ থেকে দূরে থাকা, নিজেকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা অনেকাংশেই এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বিস্তার হ্রাস করে।
এই সিমুলেশন আলাস্কার একটি ছোট শহরের লোকসংখ্যা ধরে নিয়ে করা হয়েছে। পুরো যুক্তরাষ্ট্র চিন্তা করলে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা প্রথমে আরও দ্রুত অনেক বাড়বে, কিন্তু মানুষ সমাগম এড়িয়ে চলে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করলে ধীরে ধীরে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা কমে যাবে, মানুষ রোগমুক্তি লাভ করতে থাকবে এবং সুস্থ লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এ জন্যই গোটা পৃথিবী এখন চেষ্টা করে যাচ্ছে সবাইকে সামাজিক সমাবেশ এড়িয়ে চলতে, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে, সামাজিক দূরত্ব তৈরি করতে।
আধুনিক বিজ্ঞানের দুটি খুব শক্তিশালী বিষয় হচ্ছে, ডেটা অ্যানালিটিকস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমরা যদি আক্রান্ত লোকের সংখ্যা যথাযথভাবে রেকর্ড করি তাঁদের সম্ভাব্য চলাফেরা, সামাজিকভাবে কোনো একটা সমাজে মেশার গতি–প্রকৃতির উপাত্ত গ্রহণ করতে পারি, তাহলে খুব সহজেই আমরা মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ডেটা অ্যানালিটিকস করে বের করতে পারব। আর তা করা গেলে সম্ভাব্য পরবর্তী আক্রান্ত লোকের প্রাপ্তিস্থান এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকে এই ধরনের ডেটা সেট নিয়ে কাজ করতে পারে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স ভার্সিটির দ্বারা রেকর্ডকৃত ।
একজন কম্পিউটার প্রকৌশলের শিক্ষক হিসেবে আমি আশা করব, আমাদের দেশের ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি শিক্ষার্থীরা যেন এ রকম একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন। আমাদের দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন সব ডিপার্টমেন্ট একসঙ্গে মিলে কাজ করে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে এই মহা আতঙ্ক প্রতিরোধের একটি উপায় বের করি।
*লেখক: সিনিয়র লেকচারার, তালিন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, তালিন, এস্তোনিয়া। [email protected]।