কেমন আছেন বসনিয়ায় বাংলাদেশি শরণার্থীরা

উন্নত জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিবছর হাজারো বাংলাদেশি পাড়ি জমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। কেউ বৈধ কাজের অনুমতিপত্র নিয়ে যান, আবার কেউবা সুনির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য ছাড়াই বেরিয়ে পড়েন অজানার উদ্দেশে।

বিশেষ করে ইউরোপের যেকোনো দেশে কোনোমতে প্রবেশ করাই থাকে তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। আর তাদের ইউরোপ–যাত্রার এ বীরোচিত ও দুঃসাহসী গল্প যেন মাঝেমধ্যে সিনেমাকেও হার মানায়। ইউরোপে প্রবেশের জন্য তাঁরা বিভিন্ন রুট ব্যবহার করেন।

সম্প্রতি পূর্ব ইউরোপের বসনিয়া-হার্জেগোভিনা বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় রুট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ইতিমধ্যে সহস্রাধিক বাংলাদেশি শরণার্থী বসনিয়ার বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে অবস্থান করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁরা বসনিয়ায় এসেছেন বলে জানা গেছে। সাধারণত এখান থেকে ইতালি যাওয়ার পর ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন।

ক্রোয়েশিয়া সীমান্তবর্তী বসনিয়ার এক শরণার্থীশিবিরে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশ থেকে প্রথমে ওমান গিয়েছিলেন। ওমান থেকে ইরান, ইরান থেকে তুরস্ক, তুরস্ক থেকে গ্রিস, অবেশেষে গ্রিস থেকে বসনিয়ায় এসেছেন ক্রোয়েশিয়া হয়ে ইতালিতে প্রবেশ করবেন বলে। কীভাবে তিনি ইতালিতে যাবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন, বিভিন্ন ধরনের দালাল আছে এখানে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার চুক্তির মাধ্যমে দালালদের সহায়তায় ক্রোয়েশিয়া যাওয়ার পর সেখানে দালালদের পূর্ব থেকে নির্ধারিত গাড়িতে করে ইতালি যাওয়া যায়। আর এ জন্য রুটভেদে বিভিন্ন রকম প্যাকেজ আছে। সে ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কও হেরফের হয়। সাধারণত দুই থেকে ছয় হাজার ইউরো দালালকে দিতে হয়। যাত্রাপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার হতে কয়েক দিন লাগে। পানি ও কয়েক দিনের শুকনা খাবার তাঁরা সঙ্গে নিয়ে রাজা-বাদশাহদের রাজ্য জয়ের মতো বর্ডার জয় করতে বেরিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে জঙ্গলেই রাত কাটান। এত কষ্ট করে সীমান্তে পৌঁছানোর পর বর্ডার পুলিশের হাতে ধরা পড়লে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়। কেউ কেউ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকতে পারেন। কেউবা কয়েকবার চেষ্টার পর অবশেষে সফল হন।

ক্যাম্পে বসবাসের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশি শরণার্থীদের কয়েকজন বলেন, ক্যাম্পে তেমন কোনো সমস্যা নেই। দিনে দুবার খাবার, জামাকাপড়, চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এক দিন বসনিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ক্যাম্পে গিয়ে খোঁজখবর নেন এবং কেউ অ্যাসাইলামের জন্য আবেদন করতে চান কি না, জানতে চান। তবে আফগান ও পাকিস্তানি শরণার্থীদের দ্বারা তাঁরা মাঝেমধ্যে ছিনতাই-চাঁদাবাজির শিকার হন। টাকা না দিলে ওঁরা অনেককে ছুরিকাঘাত করে আহত করেন।

বসনিয়াসহ বলকানের দেশগুলোর সঙ্গে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক জোরদার করে এসব দেশে বাংলাদেশি শরণার্থীদের পুনর্বাসনের সুব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট তাঁরা দাবি জানান।

*লেখক: গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব সারায়েভো