করোনার প্রতিষেধক খুব একটা দূরে নেই

করোনাভাইরাসে থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। মুখোশের অন্তরালে চলে গেছে আমাদের পৃথিবী। মনে হয় আমাদের শহরগুলো দখল করে নিয়েছে ভিনগ্রহের মুখোশধারী কিছু প্রাণী। বিশ্বব্যাপী প্লেগ, মহামারির কথা এত দিন শুনেছি, পড়েছি বইয়ের পাতায়। এবার আমরা সবাই করোনাভাইরাসে জিম্মি হয়ে কাটাচ্ছি দিন।

তবে থেমে নেই মানুষ। করোনাভাইরাসের আগ্রাসী হানা রুখে দেওয়ার জন্য প্রতিষেধক আবিষ্কারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, গবেষণাগারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এ পর্যন্ত বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১ হাজার। করোনোর মরণ কামড়ে প্রতি মুহূর্তে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। এ যেন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার যুদ্ধ। আরেকটি মানুষ লাশ হওয়ার আগে বের করতে হবে প্রতিষেধক। ভেঙে দিতে হবে করোনার বিষদাঁত।

আশার কথা হলো, পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিছু ধাপ বাকি থাকলেও করোনার প্রতিষেধক খুঁজে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে বেশ কিছু গবেষকের দল। সুইজারল্যান্ডের ওষুধ কোম্পানি রোচের তৈরি বাতের ওষুধ ‘অ্যাকটামরা’ ফুসফুস থেকে করোনাভাইরাস সমূলে বিনাশ করতে সক্ষম বলে দাবি করেছে। ইতিমধ্যে চীনের উহানে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে।
আমেরিকার বায়োটেক কোম্পানি মডার্না এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসাচ ডিজিজ (এনআইএআইডি) যৌথ গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করেছে ‘এমআরএনএ-১২৭৩’ নামের এটি প্রতিষেধক টিকা। পরীক্ষামূলক প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে জেনিফার হ্যালার নামের এক মার্কিন নারীর শরীরে। তবে টিকা কাজ করছে কি না, তা জানতে দুই মাসও লেগে যেতে পারে। পরীক্ষা সফল হলে প্রতিষেধকটি বাজারজাত করা হবে।

ক্যানসাইনো বায়োলজিক্স নামের চীনের একটি প্রতিষ্ঠান চীনা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যৌথ গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করেছে একটি প্রতিষেধক। অসুস্থ রোগী নয়, এমন ১০৮ স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে।

নতুন ধরনের ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইনোভিয়োর সানিডয়াগো ল্যাবরেটরিতে ‘আইএনও-৪৮০০’ নামের করোনভাইরাসের একটি প্রতিষেধক তৈরা করা হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে এটি মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরাও পিছিয়ে নেই। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস নির্মূলে দুটো প্রতিষেধক পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এ দুটির মধ্যে একটি হচ্ছে পুরোনো এইচআইভির ওষুধ আর অন্যটি ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হতো। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর দুটি ওষুধ খুব ভালো কাজ করেছে বলে দাবি কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। অস্ট্রেলিয়ার ৫০টি হাসপাতালে এগুলোর পরীক্ষা চালানো হবে।
চীন জানাচ্ছে, ফ্যাভিপিরাভির নামের জাপানের তৈরি একটি ওষুধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। চীনের সর্বাধিক করোনা প্রভাবিত উহান এবং শেনঝেন প্রদেশে একটি হাসপাতালে ৩৪০ জন রোগীর ওপরে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল।

এদিকে ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ নামে পরিচিত কিউবার একটি ওষুধ কোভিড-১৯ সারানোর ক্ষেত্রে অসাধারণ ফল দিচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। মিডল ইস্ট নর্থ আফ্রিকা ফিন্যান্সিয়াল নেটওয়ার্ক ও মিন্ট প্রেস নিউজ জানাচ্ছে, এটি ব্যবহার করে চীনে দেড় হাজারের বেশি রোগী করোনামুক্ত হয়েছে। এরপর সারা বিশ্ব থেকে ওষুধ কেনার ফরমাশ পাচ্ছে কিউবা। এর মধ্যে ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’র একটি চালান কিউবা ইতালিতে পাঠিয়েছে।
ইবোলা, জিকা, মার্সের মতো ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করতে গবেষকদের কয়েক বছর লেগে গিয়েছিল। ফলে প্রতিষেধকের অভাবে মারা যায় মানুষ, কিন্তু এবার বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে চীনা কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোড বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়ায় ফলে প্রতিষেধক তৈরির কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে। আমেরিকান কোম্পানি মডার্না জেনেটিক কোড পাওয়ার মাত্র ৪২ দিনের মধ্যে তৈরি করেছে করোনা প্রতিষেধক। আশা করছি, খুব শিগগির বাজারে আসবে করোনোর প্রতিষেধক টিকা। নির্মূল হবে করোনা–আতঙ্ক, মৃত্যুর করাল থাবা থেকে রক্ষা পাবে হাজারো প্রাণ।

লেখক: প্রকৌশলী