সুখ দিবসে ১৮ ধাপ এগোল বাংলাদেশ

গত শুক্রবার (২০ মার্চ) আন্তর্জাতিক সুখ দিবসে বিশ্বে সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ১৮ ধাপ উন্নতি করে ১৫৩টি দেশের মধ্যে ১০৭তম স্থানে আছে। প্রতিবেদন প্রকাশের এই দিনে বিশ্ব এমন একটা সময় অতিক্রম করছে, যখন মানুষের সুখ দুঃখ নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ নেই।

প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, এটা এমন একটি সময়, যখন করোনার প্রাদুর্ভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ১০ হাজারের বেশি জীবন কেড়ে নিয়েছে তখন আমাদের কিছু সুসংবাদ প্রয়োজন। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে একটাই ভাবনা করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির পথ কী? তাই এ দুঃসময়ে সুখী দিবসের তালিকায় বাংলাদেশের উন্নতি দেখে সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গানটা আজ খুব মনে পড়ছে, ‘কখনো সময় আসে জীবন মুচকি হাসে’।

জাতিসংঘের উপদেষ্টা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা অর্থনীতিবিদদের প্রতিনিধি জেম এলিয়েন দিবসটির প্রতিষ্ঠাতা। তবে আন্তর্জাতিক সুখ দিবস প্রচলনের প্রচারটি শুরু হয় মূলত আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটানের হাত ধরে। দেশটিতে ইতিমধ্যে সুখ-সূচকের ভিত্তিতে জাতীয় সমৃদ্ধির পরিমাপের প্রচলন করা হয়েছে। তারা জাতিসংঘের কাছে বছরের একটি দিন সুখ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানায়। এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২৮ জুন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অধিবেশনে জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধিরা সুখ দিবসকে স্বীকৃতি দেন। দিবসটি পালনসংক্রান্ত বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রস্তাবে বলা হয় সুখের অনুসন্ধান একটি মৌলিক মানবিক লক্ষ্য। মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য সুখে থাকা। ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য দিবসটি পালন করা হবে। প্রস্তাবে জাতিসংঘের সব সদস্যরাষ্ট্রকে শিক্ষা ও জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডসহ যথাযথ রীতিতে আন্তর্জাতিক সুখ দিবস পালনের আহ্বান জানানো হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর বিশ্বের অনেক দেশেই দিবসটি নানা আয়োজনে পালন হয়। যদিও করোনার আতঙ্কে এ বছরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

জাতিসংঘ তাদের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর ওপর পূর্ণ এক বছর জরিপ পরিচালনা করে এ দিবসে সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করে। এই কাজ করে মূলত জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক।

জনমত জরিপ সংস্থা গ্যালপের উপাত্তের ভিত্তিতে সংস্থাটি এই তালিকা তৈরি করে। ছয়টি মানদণ্ডকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের সুখী দেশের এ তালিকা তৈরি করা হয়। এগুলো হলো মোট দেশজ উৎপাদন, জীবনের প্রত্যাশা, উদারতা, সামাজিক সহযোগিতা, সামাজিক স্বাধীনতা এবং সমাজে দুর্নীতির মাত্রা।

গত বছরের সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ তার আগের বছরের তুলনায় ১০ ধাপ নিচে নেমেছিল। ২০১৯ সালের লিস্ট অনুযায়ী ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৫তম এবং তার আগের বছর ছিল ১১৫তম। ২০২০ সালের তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থান ১৫৩টি দেশের মধ্যে ১০৭ যেখানে শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের অবস্থান যথাক্রমে ১৩০ ও ১৪৪তম। তালিকায় ভারত ও শ্রীলঙ্কার ওপরে বাংলাদেশের নাম দেখে আমাদের মনে যেমন স্বস্তি অনুভব হয়, তেমন পাকিস্তানের ৬৬তম এবং নেপালের ৯২তম অবস্থান দেখে শুধু অস্বস্তি নয়, তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ার প্রতিই সন্দেহ তৈরি হয়। এ তালিকায় সবচেয়ে কম সুখী দেশ হিসাবে ১৫৩তম স্থানে আছে আফগানিস্তান এবং তার ওপরে পর্যায়ক্রমে আছে দক্ষিণ সুদান, জিম্বাবুয়ে ও রুয়ান্ডা।

এ বছরের তালিকায় তৃতীয়বারের মতো বিশ্বের সেরা সুখী দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে আছে ফিনল্যান্ড, দ্বিতীয় স্থানে ডেনমার্ক এবং নরওয়েকে পেছনে ফেলে সুইজারল্যান্ড তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে আইসল্যান্ড ও নরওয়ে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পর্যায়ক্রমে ১১, ১২, ১৩, ১৭ ও ১৮তম। তালিকার মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে রাশিয়া ও চীন, ৭৩ ও ৯৪তম স্থানে।

দুর্নীতির রাহুগ্রাস বাংলাদেশের সমস্ত অর্জনকে গিলে খাচ্ছে। তারপরও আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করছি। মাথাপিছু আয় বাড়ছে। সামাজিক সহযোগিতা, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও উদারতা আমাদের সামনে আগানোর জন্য একটি বড় শক্তি। পরস্পরের প্রতি আমাদের এই উদার ভালোবাসা দিয়েই সুখী দেশের তালিকায় আমরা তুলনামূলকভাবে একটি ভালো অবস্থান করে নিতে পেরেছি।

ভালোবেসে সুখী হতে বলো কে না চায়? অথচ করোনাভাইরাসের আঘাতে আজ বিশ্ববাসীর জীবন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো হয়ে গেছে।

‘ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে
ওকে আমি কেমন করে যেতে বলি
ও কি কোনো ভদ্রতা মানবে না?’