আটলান্টিকের তীর থেকে

এখন সকাল ছয়টা (১৮ মার্চ)। এখানে এই পৃথিবী এখন নিস্তব্ধ। কোথাও পাখির কিচিরমিচির শুনতে পাচ্ছি না। পাখিরা কোথায় গেল? পৃথিবী এখানে বিরলভাবেই নিরিবিলি। এখানে পৃথিবী ঘুমিয়ে আছে এখনো। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয়ে যাবে আহাজারি। শুনতে পাব মৃত্যুর খবর।

এ সুন্দর ধরণি বিলিয়ে দিয়েছে নিজেকে মানবের তরে। কিন্তু মানুষ! এ মানুষগোষ্ঠী কি দিয়েছে ফিরিয়ে? বিনিময়ে? দিয়েছে শুধুই মৃত্যু। মানুষ মেরেছে মানুষ, হাজারে হাজারে, লাখে লাখে; কখনো করেছে নিঃশেষ পুরো এক আবাসভূমি, নিঃশেষ করেছে পুরো এক জাতি। এক জাতি মেরেছে আরেক জাতি। ধর্মের দোহাই দিয়ে। মানুষ মেরেছে মানবের মৃত্যুর নেশায়। মানুষ আবাস ভূমিরে করেছে বিরান ভূমি মৃত্যুর হোলিখেলায়। আমরা দেখেছি কীভাবে দেশে দেশে চণ্ডালিরা দাঁড়িয়েছে বল্লম হাতে শুধুই প্রতিহিংসার আগুনে, করেছে তাণ্ডব, আর উল্লাস। আমরা সাক্ষী হয়েছি আপন বাড়িছাড়া পিতার হাতে তার পুত্রের লাশ সাগরে, দেখেছি ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা পুরো পরিবারের লাশ। দেখেছি রক্তাক্ত বিরান ভূমি।

লাশ দেখেছি ঘরের মেঝে, সরু পথে, উঠানে, লাশ দেখেছি সর্বত্র। আমরা দেখেছি কীভাবে গর্ববতী মায়ের ওপর নেমে এসেছিল তারই ঘরের ছাদ, কারণ বোমা নিক্ষেপ করেছিল আরেক মানুষকুল অথবা আরও এক মানুষরূপী দানব, মানুষ নামের কলঙ্ক। আমরা দেখেছি কত মায়ের আহাজারি পাসে রক্তাক্ত মরদেহ তার সন্তানের; আমরা দেখেছি মানুষ ইতর হয়ে গিয়েছিল। নেমেছিল মৃত্যুর হোলিখেলায় বারবার।

আজ সেই পুরো মানুষকুল বিলীনের মুখোমুখি। আজ মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে যে জীবনেরই প্রকৃত অর্থ। মানুষ বুঝতে পেরেছে প্রতিমুহূর্তে জীবন মানেই মৃত্যুর মিছিল। জীবন মানেই দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্যুর কাছাকাছি। আজ আমরা দেখতে পাই, মানুষ কত অসহায় এই প্রকৃতির কাছে। এখন প্রতিমুহূর্তে লাশের গন্ধ পাই। এখন মানুষ মরিছে হাজারে আত্মসমর্পণ নেশায়।

আজ মানুষ নামের প্রজাতি পৃথিবীতে বিলীনের কাছাকাছি। আমার জানতে ইচ্ছে করে, মানুষ কি জানিতে পারিয়াছে তাদের আমলনামা কত নিকৃষ্ট ছিল। আমার এই প্রশ্ন পুরো পৃথিবীবাসীর কাছে। আমার জানতে ইচ্ছে করে, আমরা এখনো কী রয়ে গেছি হিংসুক, স্বার্থপর, লোভী। যদি পরিবর্তন করতে পারি নিজকে তবে চলেন মৃত্যুর আগে একটি ভালো কাজ করি। একজনের জীবন রক্ষায় নিজেকে বিলিয়ে দিই। অন্যকে ভালোবাসতে শেখার মাঝে অনেক আনন্দ আছে। তবেই এই মরাকে করা যাবে জয়। তবেই করিতে পারিব এই বিশ্ব জয়। মানুষ জন্মের সার্থকতা খুঁজে পাব। চলেন এক মুঠো চাল আর ডাল তুলে দিই ক্ষুধার্ত সেই বৃদ্ধ প্রতিবেশীর হাতে, কিংবা ক্ষুধার্ত পঙ্গু লোকটির হাতে কিংবা একটি এতিম বাচ্চার হাতে। চলেন তাদের মুখে দিই এক বেলার খাবার, যারা আজও একবেলা খাবার নিয়েই চিন্তা করে, কিন্তু মৃত্যুকে নিয়ে নয়।

আর কিছু না করতে পারলে আসুন আজ মৃত্যুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে নিজেদের জন্য এক মাসের খরচ ঘরে তুলে না এনে রেখে আসি কিছু অন্যের জন্য। তাহলেও হয়তো ভালো কিছু করে আনন্দ পাব।