করোনা, তুমি কি করুণা করবে

করোনাভাইরাস পৃথিবীর সব মানুষকে এককাতারে নিয়ে এসেছে। ধনী, গরিব, খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া কাউকেই ভিন্নভাবে খাতির করেনি। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও মৃত্যুভীতি সৃষ্টি করা ছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে করোনা পৃথিবীর চাক্ষুস দানব। লক্ষণীয় বিষয়, এই ভাইরাস প্রথমেই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীনকে আক্রমণ করে। তারপর সবচেয়ে শক্তিধর ও অপ্রতিরোধ্য যুক্তরাষ্ট্রের ইকোনমিকে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে মোটামুটি গর্তে ফেলে দেয়। এখনো নিচের দিকে টানছে। কত দূর টেনে নিচে নিয়ে যাবে, কেউ জানে না।

কয়েকটি উদাহরণ দিই, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাভেল ও ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির আকার ১ হাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলার, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ৪৩ বিলিয়ন, ডে কেয়ার ৫৭ বিলিয়ন, এয়ারলাইনস ইন্ডাস্ট্রি ১ হাজার ৭০০ বিলিয়ন ডলার এবং এতে এক কোটি জনবল নিয়োজিত। এই রকম প্রায় কয়েক শ ইন্ডাস্ট্রি এখন করোনার করুণার ওপর নির্ভরশীল। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল বহির্বিশ্ব।

করোনা মানুষকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি আকৃষ্ট হতে উৎসাহিত করছে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানুষের যে অবিশ্বাসের পাহাড় উঁচু হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ধীরে ধীরে তা নেমে আসছে। ইতালি ও আমেরিকার অনেক গির্জায় দৈনিক পাঁচবার করে ঘণ্টা বাজানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, আকাশে–বাতাসে আওয়াজ তোলা ‘হে সৃষ্টিকর্তা, তুমিই মহান। এ যাত্রায় আমাদের রক্ষা করো।’

করোনার আরও লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে সে ক্ষমতাবান কিংবা ধনীদের পালানোর পথ খোলা রাখেনি। তাদের পিছু ধাওয়া করছে। তাদের দেহরক্ষীরাও এখন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

করোনার প্রতিকার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে সে সময় পর্যন্ত মানুষের কাজকর্ম ও জীবন যাত্রা স্তব্ধ হয়ে আছে। অন্যদিকে মানুষের সামাজিকতায় করোনা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। মানুষে মানুষে মেলামেশায় আসবে নতুন নতুন দিকনির্দেশনা। মানুষ অভ্যস্ত হবে নতুন সব নিয়মে। কী হতে পারে সেসব নিয়ম? হয়তো সময়ই বলে দেবে।