করোনা প্রতিরোধে কেন তাইওয়ান এত সফল

তাইওয়ান নানা পদক্ষেপ নিয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
তাইওয়ান নানা পদক্ষেপ নিয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

এত চেষ্টার পরও অনেক উন্নত দেশে মানুষ প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে করোনাভাইরাসে। বাড়ছে জীবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, আর আমাদের দেশে কী হচ্ছে?

আমার কিছু লেখার উদ্দেশ্য হলো, করোনা প্রতিরোধে কেন তাইওয়ান এত সফলতা দেখাচ্ছে, তার একটা ছোট উদাহরণ উপস্থাপন করা এবং যদি সম্ভব হয় আমাদের দেশে অল্প হলেও প্রয়োগ করা।

তাইওয়ানের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা পু্রোটাই গবেষণাকেন্দ্রিক। এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলা পিএইচডি স্তরে ডিগ্রি প্রধান করে থাকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবোরেশনের মাধ্যমে। আমরা যারা বিভিন্ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধীনে পিএইচডি স্টুডেন্ট হিসেবে আছি, আমাদের প্রতি সপ্তাহে কয়েকটি ক্লাস করার জন্য সংযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়। এ রকম অন্য ক্যাম্পাস থেকে এক ছাত্র গিয়েছিল ক্লাস করতে সংযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েক দিন আগে ছাত্রটির রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ল্যাবের অধ্যাপক করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়েছে। ছেলেটি কিন্তু পজিটিভ বলে এখনো শনাক্ত হয়নি, তারপরও সে কোয়ারেন্টিনে আছে এখন। আর এদিকে সতর্কতা হিসেবে সংযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে একটু দেখুন—

১.
ওই ছাত্র কোথায় কোথায় গিয়েছিল, কার সঙ্গে মিশেছিল—সব তথ্য অ্যানালাইসিস করে তার যাতায়াত স্থান দ্রুততম সময়ের ভেতর জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।

২.
এই ছাত্র যেদিন ক্লাস করতে এসেছিল, ওই ক্লাসের অধ্যাপকসহ সব স্টুডেন্টকে আলাদা রুমে কোয়ারেন্টিনে দেওয়া হয়েছে।

৩.
সবাইকে ভাইরাস কিট বাক্স সঙ্গে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সবার টেম্পারেচার অনলাইনে রেগুলার আপডেট করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

৪.
স্টুডেন্ট অফিস থেকে তাদের নিয়মিত ফোনে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু সাপ্লাই করা হচ্ছে। আর বাকি সব ছাত্রকে প্রতিদিন ক্লাসে ঢোকার আগে টেম্পারেচার চেক করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ব্যবহার—এগুলো অনেক আগে থেকেই নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে প্রয়োগ করা হয়েছিল।

লেখক।
লেখক।

আজ সব দেশ বলছে করোনা প্রতিরোধে কেন তাইওয়ান এত সফল, কিন্তু এই সফলতা এমনি এমনি আসেনি। তার পেছনে রয়েছে অনেক রকম ত্যাগ, পরিশ্রম আর দেশকে নিরাপদ রাখার জন্য অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছু করার তীব্র ইচ্ছা। তাইওয়ানের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল দিনরাত বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই ত্যাগের ফলাফল ভোগ করতে পারছে তাদের দুই কোটির ওপর মানুষ। তাই তাদের জনপ্রিয় র‌্যাপ সিঙ্গার এই পর্দার পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া লোকদের ক্যাপ্টেন তাইওয়ান উপাধি দিয়ে গান গেয়েছে, ‘শিশিয়ে ক্যাপ্টেন তাইওয়ান, ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন তাইওয়ান।

*লেখক: পিএচডি স্টুডেন্ট ইন মলিকুলার মেডিসিন, ন্যাশন্যাল হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট, তাইওয়ান