কোয়ারেন্টিন থেকে কীভাবে এন্টারটেইন

অনেক দিন আগেকার একটি কাহিনি মনে পড়ে গেল। রোগী ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করছেন, স্যার, এই দুর্ঘটনা থেকে সেরে উঠতে আমার কত দিন লাগবে? ডাক্তার সাহেব বললেন, শারীরিকভাবে ছয় মাস, তবে অর্থনৈতিকভাবে ১২ বছর।

আপনি হয়তো বলবেন এটা একটি সিলি জোক, কিন্তু আমরা কি ক্ষতি থেকে কিছু লাভ করতে পারি না? কোয়ারেন্টিন হয়েছে তো কি হয়েছে? গৃহে থাকা দিনগুলো কেন বিরক্তিকর লাগবে?

আমি আপনাদের কতগুলো পন্থা বলছি। এগুলো যদি অনুসরণ করেন দেখবেন কোয়ারেন্টিন থেকেও আনন্দ পাচ্ছেন।

১.
প্রতিদিন একটি করে বই পড়ুন। এত দিন বলেছেন, বই কখন পড়ব, সময়ই পাই না। এখন তো অঢেল সময়। আত্মউন্নয়নের ওপর বই পড়ুন। জীবনটিকে বদলে দিন। এ ছাড়া উপন্যাস, গল্প, নাটক, কবিতার বই পড়তে পারেন।

২.
প্রতিদিন একটু করে হলেও ব্যায়াম করুন, সে হোক না মাত্র ৫ মিনিট। প্রয়োজনে টেলিভিশনের সামনে মাদুর বিছিয়ে বুকডন দিন কিম্বা মোবাইলে ভিডিও দেখেও করতে পারেন। এতে রথ দেখা আর কলা বেচা উভয়ই হবে।

৩.
এত দিন কর্মব্যস্ত থাকায় নিজের প্রতি হয়তো তেমন নজর দেওয়া হয়নি, তাই নিজের শরীরের প্রতি বিশেষভাবে যত্ন নেওয়ার এটি একটি মোক্ষম সুযোগ। একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে গোসল করুন। এ ছাড়া ঘরে বসেই করতে পারেন ম্যানিকিউর, পেডিকিউর, হেয়ার ম্যাসাজ, ফেস ম্যাসাজ ইত্যাদি। তা ছাড়া ইন্টারনেটে এ–সংক্রান্ত অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন। এতে এই ভাইরাসের দিনে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি রূপচর্চাও হয়ে যাবে।

৪.
এই ঘরে থাকার দিনগুলোতে খুব সহজেই ওজন কমিয়ে ফেলুন। চিনি খাবেন না, শর্করা যতটা পারেন পরিহার করুন। কোমল পানীয় একদম হারাম। পরিমিত আহার গ্রহণের দিকে বিশেষ নজর দিন, খাবার সময় নিয়ে চিবিয়ে খান। দেখবেন ওজন কমছে।

৫.
প্রতিদিন ঘর ঝাড়ু দিন এবং মুছুন। ঘরের আসবাবপত্রের স্থান পরিবর্তন করে নতুনভাবে ঘরকে সাজাতে পারেন। এতে একঘেয়ে ভাব কমবে, ঘরে থাকা বিরক্তিকর মনে হবে না। পাশাপাশি ঘরেও ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কম হবে।

৬.
ফেসবুকে কে কোথায় কী স্ট্যাটাস দিয়েছেন, কী মন্তব্য করেছেন, তাতে আপনার কোনো লাভ আছে? তার চেয়ে আপনি যা করতে চান, তার একটি লক্ষ্য স্থির করুন, নতুন কোনো অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৭.
যাঁরা বিদেশি ভাষা শিখতে চান, এর চেয়ে মোক্ষম সুযোগ আর কখনো পাবেন না। ইউটিউবে গিয়ে সে ভাষার ভিডিও দেখুন, সেখানে অভিনেতা-অভিনেত্রী যা বলছেন, তোতা পাখির মতো সেভাবে বলার চেষ্টা করুন, দেখবেন সুন্দর উচ্চারণ করতে পারছেন। ভাষা শেখাটাও তখন আর কঠিন মনে হবে না।

৮.
পরিবারের সঙ্গে কত দিন লুডু খেলেননি বলুন তো? বাচ্চাদের কত দিন জিজ্ঞেস করেননি ওরা স্কুল–কলেজে কেমন করছে? তাই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মন খুলে গল্প করার দারুণ সময় এখন। এ ছাড়া ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারেন গৃহে থাকার এই দিনগুলোতে।

৯.
এখন যেহেতু গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন, তাই মাকে কিম্বা বউকে রান্নার কাজ থেকে ছুটি দিয়ে নিজে রান্না করতে পারেন। যাঁরা রান্নায় তেমন অভ্যস্ত নন, তাঁরা রান্না শিখতে পারেন। হয়তো আপনি নতুন কোনো আয়েশা সিদ্দিকা হয়ে যাতে পারেন।

১০.
অনলাইনে নতুন কিছু শিখতে পারেন, যা পরবর্তী সময়ে আপনার চাকরি-ব্যবসা-পড়ালেখায় আপনাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

১১.
যে কাজগুলোতে আপনার সফলতা ধরা দিচ্ছে না, সেগুলো একটু সময় নিয়ে বিশ্লেষণ করুন এবং ভবিষ্যতে কীভাবে আপনি সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবেন, সেই পরিকল্পনা করুন।

সর্বোপরি সবাই যে যাঁর ধর্মগ্রন্থ দিনে একবার হলেও পড়বেন। এটা আপনাকে মনে শান্তি এনে দিতে সাহায্য করবে। আপনি এই কয়েকটি বিষয় যদি মেনে চলেন, দেখবেন সময় কীভাবে পার হচ্ছে, আপনি বুঝতেও পারছেন না, তখন নিজেকে আর গৃহবন্দী মনে হবে না।