প্রতিরোধের শেষ অস্ত্র হোম আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টিন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কী করিনি, কী করতে পারতাম, সে বিতর্ক আজ পড়ে থাক। কী করব, কী করতে পারি, সেই ভাবনা হোক আজ আসল প্রতিপাদ্য। অণুজীব করোনা আজ আঘাত করেছে বিশ্বব্যাপী (pandemic)। আক্রান্ত হয়েছে পরাশক্তির চীন, আক্রান্ত মহাশক্তিধর ইউরোপ–আমেরিকা। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক খাত আজ অথর্ব। তবে কোথায় কার কী ঘাটতি ছিল, সে পর্যালোচনা আপাতত অবান্তর।

করোনা সংক্রমণ রোধে আজকের সমাধান হোম আইসোলেশন, সেলফ কোয়ারেন্টিন। অণুজীবের বিরুদ্ধে এই বিশ্বযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক, চিকিৎসক এবং নার্স, বীরদর্পে সম্মুখসমরে চীনের মাটিতে পিছু হটিয়ে দিয়েছে ভয়াবহ করোনা সংক্রমণকে। তাকে সবংশে পরাজিত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বিশ্বের অসংখ্য অণুজীববিজ্ঞানী, জেনেটিকস বিজ্ঞানীরাও। স্যালুট সেই বীর সেনানিদের।

লকডাউন, আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন শক্ত হাতে সবাইকে পালনে বাধ্য করেছে চীন এবং লক্ষ্য অর্জনে শতভাগ সফল। চীনের ‘desperate times ask desperate measures’—এই রণকৌশলকে যারা গুরুত্ব দেয়নি, তারা আজ বিপর্যস্ত। ইতালি, আমেরিকা আজ বিরান। দক্ষিণ এশিয়া নিয়েও বিশেষজ্ঞরা শঙ্কায় আছেন, ভয়াবহ রূপ ধারণ করার অসংখ্য কারণ এখানে উপস্থিত। ধার্মিক যাঁরা, আপন আপন বিশ্বাসে আপন আপন নিবাসে বসে প্রার্থনা করুন কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু চিকিৎসক সাজবেন কোন যোগ্যতায়? অতি আধ্যাত্মিক বয়ানে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মানুষকে হোম আইসোলেশন পালনে নিরুৎসাহিত করবেন কোন স্বার্থে? ঘুমিয়ে থাকুন আপত্তি নেই, স্বপ্নে করোনার সঙ্গে কথা বলার মতো ব্যক্তি ভাইরাস ছড়াবেন কোন কারণে? ধর্ম আপনাদেরই হাতে প্রতিদিনই লাঞ্ছিত হচ্ছে, হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে।

করোনার কোনো ধর্ম নেই, রাজনীতি নেই, রাষ্ট্রীয় সীমানা নেই। মানুষকে বিপদের মুখোমুখি ঠেলে দিয়ে ইতালির মতো ভয়াবহ সংকট সৃষ্টির দায়ভার কাঁধে নেওয়ার যোগ্যতা কোথায় আপনাদের? সাধারণের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে যাঁরা ‘আইসোলেশনে গেলে খাবে কী’ প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখি, আপনি কি এই মহাসংকটে সামান্য চাল-ডাল নিয়ে আপনার পাশের আইসোলেটেড মানুষটির পাশে দাঁড়াতে পারবেন না? অঢেল সম্পদের, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার বিত্তবান মানুষগুলো কেন আজ মহাদুর্দিনে চিত্ত প্রসারিত করে পাশের হোম আইসোলেটেড মানুষকে একমুঠো খাবার দিতে পারবেন না? কেন সব চাওয়া, সব দাবি রাষ্ট্রের কাছে? মহান একাত্তরে আমাদের তো রাষ্ট্র অথবা সরকার কোনোটাই ছিল না, যখন আমরা আক্রান্ত হই। বন্যায়, প্লাবনে, সুনামির দুর্যোগে মানুষ এসে মানুষের পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছাসেবক হয়ে। সমাজসেবকেরা যাঁরা নির্বাচন এলে টাকার বস্তা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা কেন আজ মানুষ আইসোলেটেড হলে এই দুঃসময়ে এক বস্তা চাল, এক বস্তা ডাল মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে মানুষকে সাহস জোগাবেন না? হাত জোড় করে বলতে হয়, হোম আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টিনের আপাতত কোনো বিকল্প নেই।

মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না, এর বিপরীতে এসব প্রতিরক্ষার দাবি কঠোরভাবে পালনে মানুষকে উৎসাহিত করুন। কোনো রকম জমায়েত, ধর্মীয় হোক, সামাজিক হোক অথবা হোক রাজনৈতিক, অবশ্যই পরিত্যাজ্য। নিজে সতর্ক হোন, অন্যকে সতর্ক হতে সাহস জোগান। এই সংকট কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ইউরোপ–আমেরিকার দিকে তাকান। আমাদের সামর্থ্য ওদের তুলনা একেবারেই নগণ্য। অতএব, এই মুহূর্তেই ‘যার যা আছে তা–ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’।

সচেতন ও সাহসী যুবসমাজ, তরুণসমাজ ধর্মের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের জবাব দিতে এগিয়ে আসুক। সংকটাপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়াক সাহসী প্রজন্ম।