ওরা জানত না ফিরে আসা হবে কি না

নিঃসন্দেহে তোমরাই শ্রেষ্ঠ বীর
তোমরা আগে কখনো রাইফেল দ্যাখোনি
আর ঘাতকের সাথে যুদ্ধও করোনি।

তোমাদের মজদুর হাতে ছিল লাঙল-জোয়াল
জোয়ালে জুড়ানো ছিল হালের বলদ
বর্ষামাঠে বিনয়াবনত থেকে ধান বোনার জন্য
ব্যস্ত ছিলে জমিন চাষে
দেখলে একঝাঁক অস্ত্র-বোঝাই জলপাই রঙের ট্রাক
প্রধান সড়ক থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনে এগোচ্ছে
আশপাশের দোকানগুলো আগুনে পুড়ছে
আর গুলি খাওয়া মানুষ চিত হয়ে
পড়ে আছে যেখানে-সেখানে!

ওরা মোড় ঘুরে ট্রাকের বহর থামাল
পায়ে হেঁটে গলিপথে নেমে গেল গ্রামের ভেতর
লুটতরাজ শেষ হলে আগুনে ঘরবাড়ি দাউ দাউ জ্বলছে
প্রবীণদের চোখ বেঁধে সারিবদ্ধ দাঁড় করানো হলো
এবং বোঝার আগেই গুলি ছুড়ল ব্রাশ ফায়ারে
মা-বোনদের ধরে নিয়ে গেল নিষিদ্ধ ঘাঁটিতে
তারপর বীভৎস চিৎকার-বিবস্ত্র-রক্তপাত
পবিত্র দেহ কলুষিত হলো রক্তে রক্তে
হিংস্র নরপিশাচের নৃশংস লালসায়!

মাঠের ফসল নিয়ে বেঁচে থাকা
মনে হলো এই শুধু নিরর্থক বাঁচা
অর্থহীন জীবন থেকে মুখ ফিরালে ততক্ষণে
প্রতিজ্ঞা অটল রাইফেল নিরাপদ বুকে তুলে নিলে

গেরিলাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লে শত্রু-শিবিরে
হালের গরু লাঙল জোয়াল ইষ শাঁউলি ফাল
এখন আর তোমার স্বপ্নের ভেতর জেগে ওঠে না
জেগে ওঠে রাইফেলের বাঁট বডি ব্যারেল
ম্যাগাজিন ট্রিগার বুলেট ও বেয়নেট।

মায়ের কান্নায় সাত-আসমান কেঁপে উঠল
ওপর থেকে শক্তি জোগাল অফুরন্ত
হিংস্র জন্তুর পতন অনিবার্য-
অসহায় বীরদর্প পিশাচের
বিজয় ত্বরান্বিত, গৌরবোজ্জ্বল শির
রাত্রি হলো শেষ।

তোমরা সেক্টর কমান্ডার ছিলে না
ব্রিগেডিয়ার নও
ফিল্ড মার্শাল হওনি
হয়তো কোনো খেতাব পদবিও পাওনি
কিন্তু তোমাদের বীরত্ব কোনো অংশে কম নয়-
তোমরা যখন কৃষিকাজ ফেলে গেরিলাযুদ্ধে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে
তখন জানতে না আবার ফিরে আসা হবে কি না
এখানেই তোমাদের শ্রেষ্ঠ বীরত্ব।

*আলী রেজা মুহম্মদ আব্দুল মজিদ, পরিচালক, বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়