মানবিক পর্তুগাল সরকারকে ধন্যবাদ

অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত করতে পর্তুগাল সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি: লেখক
অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত করতে পর্তুগাল সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি: লেখক

পর্তুগাল অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত করার ঘোষণা দিয়েছে। কোভিড-১৯–এর মতো জাতীয় দুর্যোগে স্থানীয় নাগরিকদের পাশাপাশি অনিয়মিত অভিবাসীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার।

গত শুক্রবার রাতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণায় বলা হয়, কোভিড-১৯–এর মতো জাতীয় দুর্যোগে যেসব অভিবাসী বৈধ কাগজ না থাকায় সরকারি বিভিন্ন সেবা, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা, সোশ্যাল সিকিউরিটি থেকে সহায়তা নিশ্চিত করতে সরকার সব অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অ্যাসাইলামের মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীরাও এর আওতাধীন থাকবেন।

পর্তুগিজ নাগরিকদের পাশাপাশি অনিয়মিত অভিবাসীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার এই সিদ্ধান্তে নিয়েছে। আপাতত চলতি বছরের জুলাই মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত এটি জারি থাকতে পারে।

চলতি বছরের ১৮ মার্চ পর্তুগালের বর্তমান জরুরি অবস্থা জারির দিন পর্যন্ত যাঁরা ইমিগ্রেশন সেন্টারে নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরা এর আওতাধীন থাকবেন। ইমিগ্রেশন আর্টিকেল ৮৮ ও ৮৯, ৯০ অনুচ্ছেদের অধীনে যাঁরা আবেদন করেছেন।

এ ছাড়া সাধারণ নাগরিকদের যাদের ডকুমেন্টের মেয়াদ শেষ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত, তাদের সবার ডকুমেন্ট ভ্যালিড থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে সরকার।

শুক্রবার রাতে ইমিগ্রেশন সার্ভিসকে সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো নির্দেশনায় এমনটা জানানো হয়। ইমিগ্রেশন সার্ভিসে নিবন্ধনের প্রমাণস্বরূপ যে কাগজ অভিবাসীদের হাতে রয়েছে, সেটি সব সরকারি সেবা, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা, সোশ্যাল সিকিউরিটি থেকে সহায়তা, কাজের কন্ট্রাক্ট সই করা, নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ সব ধরনের সরকারি কাজে নিবন্ধনের সেই কাগজ বৈধ বলে গণ্য হবে। দুর্যোগকালে এটিই তাদের বৈধতার প্রমাণ।

পর্তুগিজ সরকারের জাতীয় মুদ্রণ দিয়ারা দ্য রিপাবলিকাতে প্রকাশিত আইন ৬২/২০২০-এ উল্লেখ করা হয় এই আইনের মাধ্যমে পর্তুগালে বসবাসরত অভিবাসীদের সমান অধিকার নিশ্চিতের দ্বিধাহীন গ্যারান্টি প্রদান করা হয়েছে। এমনকি অভিবাসীর কাছে থাকা ডকুমেন্ট হারিয়ে গেছে কিংবা চুরি হয়ে গেছে এমন পরিস্থিতিতে যদি ওই অভিবাসীর জরুরি কোথাও ভ্রমণ করতে হয়, তাহলে তাঁকে উপযুক্ত প্রমাণ প্রদর্শনের শর্তে যাতায়াতের অনুমতি প্রদান করতে বলা হয়েছে ইমিগ্রেশন সেন্টারের আঞ্চলিক পরিচালকদের।

সরকারের নির্দেশনা এলেও ইমিগ্রেশন সেন্টার এখনো নিশ্চিত করে বলেনি ঠিক কত সংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসী তাদের কাছে নিবন্ধিত রয়েছেন।

গেল সপ্তাহে অভিবাসীদের ২০টি অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়ে তাদের শঙ্কা সরকারের কাছে তুলে ধরে। তারা সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানায় যে অভিবাসীরা এ দেশের সোশ্যাল সিকিউরিটিতে অবদান রাখছেন, তাই দুর্যোগকালে তাঁদের যদি কাজ না থাকে কিংবা পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনা করতে হয়, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ নাগরিকদের মতো তাঁরাও সরকারের এসব সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাই তাঁদের এই অধিকার নিশ্চিত করা হোক।

গেল সপ্তাহে ব্রাজিলিয়ান অভিবাসীদের বড় একটি অংশ এ নিয়ে আন্দোলন করেন। ব্রাজিলিয়ানরা পর্তুগালে অভিবাসীদের সংখ্যায় সর্বোচ্চ প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার অভিবাসী পর্তুগালে বসবাস করেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অংশ নেন শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্র, লেখক, নিরাপত্তাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার অভিবাসী মানুষেরা। তারা কোভিড-১৯–এর মতো জাতীয় দুর্যোগে সব অভিবাসীর সমান অধিকার নিশ্চিতকরণের দাবি জানান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পর্তুগিজ সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী ক্লাউদিয়া ভেলোসো বলেন, অনিয়মিত হওয়ার কারণে, অভিবাসীরা স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে দূরে থাকতে পারেন না। দেশের এমন দুর্যোগ মুহূর্তে তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।

পর্তুগিজ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী ক্লাউদিয়া ভেলোসো। ছবি: লেখক
পর্তুগিজ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী ক্লাউদিয়া ভেলোসো। ছবি: লেখক

সরকারের এমন ঘোষণায় পর প্রতিবেদনটি তৈরি করার সময় বাংলাদেশ দূতাবাস লিসবনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে টেলিফোনে রাষ্ট্রদূত মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান, এমন একটি খবর খুবই আনন্দের। বিশেষ করে অনিয়মিত বাংলাদেশি যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। আমি মানবিক পর্তুগিজ সরকারকে অভিনন্দন জানাই।

২০১৮ সালে মোট ৬৬৫ জন এবং ২০১৯ সালে মোট ১ হাজার ৮৫১ জন অনিয়মিত অভিবাসী দূতাবাসে নিবন্ধন করেন। তবে তাঁদের বেশির ভাগই ভিসাবিহীন। ধারণা করা যাচ্ছে, ভিসাবিহীন ও ভিসাসহ মোট তিন থেকে চার হাজার বাংলাদেশি এই মুহূর্তে পর্তুগালে অবস্থান করছেন।

এ খবর পেয়ে অনিয়মিত থাকা প্রবাসী এক বাংলাদেশি জানান, অনিয়মিত অবস্থায় সোশ্যাল সিকিউরিটিতে অবদান রাখলেও দুর্যোগকালে আমরা বেশ শঙ্কিত ছিলাম! ধন্যবাদ মানবিক পর্তুগিজ সরকারকে, যাঁরা আমাদের তাঁদের স্থানীয় নাগরিকদের মতো সমান অধিকার নিশ্চিত করেছেন।

অভিবাসীরা পর্তুগালের সোশ্যাল সিকিউরিটিতে বছরে প্রায় ৬৫১ মিলিয়ন ইউরো অবদান রাখেন। তাই তাঁদের সব অধিকার নিশ্চিত করার দাবিটি যথার্থ বলেই মনে করছেন আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।