মেডিকেল ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর সময় এখনই

আমি যখন নেপাল গেলাম তখন ওদের রাজা-রানি খুন হন! দুটো মৃতদেহ চরম অবজ্ঞায় পড়ে ছিল পশুপতিনাথ মন্দিরের নদীর পাড়ে!

করোনার মৃতদেহ দেখে আমার আজ সে কথা মনে হলো। নেপালজুড়ে ভয় আর ফিসফিসানি!

এখানে আমাদের জীবনযাত্রা স্থবির! সবাই আতঙ্কিত! যাদের রিফিল লাগবে কিন্তু ফিজিক্যালি আসতে চায় না, তাদের জন্য নতুন নিয়ম করছে!

ফাইনালি আমরা মাত্র একটি করে N95 mask পেয়েছি! দেখে রিয়েল জিনিস মনে হচ্ছে না, কারণ আমরা এমরি তে ৯-১০ বছর আগে রিয়েল মাস্কের ফিটিং দিয়েছিলাম! যা পেলাম তা-ই! দেখে মনে হচ্ছে গরুর মুখের ঠুলি!

সে যা-ই হোক, পেয়েছি তাতেই খুশি! এত দিন সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়ে চলেছে, সঙ্গে গ্লাভস! আমাদের প্রতিদিন আপডেট থাকে কোন সাপ্লাই কবে পাচ্ছি- রেসপনসিবিলিটি, বিশ্বাস সেটা মিউচুয়াল!

এখানে হসপিটাল, ক্লিনিকের দায়িত্ব সাপ্লাই প্রোভাইড করা! আমাদের দরকার, তাদের জানানো কী প্রয়োজন! তারা দরদাম, লোকজন ঠিক করে! যেহেতু মাস্ক, পিপিইর স্বল্পতা চলছে, প্রতিটি স্টেট চেষ্টা করছে তাদের চিকিৎসকদের সুরক্ষা করতে, পরিণামে দাম বেড়ে যাচ্ছে—এ জন্য ফেডারেল গভর্নমেন্টকে বলা হচ্ছে টেক ওভার করতে সাপ্লাই চেন চালু রাখতে!

সিএনএন বা অন্য সংবাদদাতারা জনগণের কাছে আরজি জানাচ্ছে তারা যদি এক্সট্রা সাপ্লাই কিনে থাকে তবে তা হসপিটালে ডোনেট করতে।

কেন বললাম?

আমাদের জনগণ এবং সাংবাদিকদের দূরদর্শিতা দেখে!

হ্যাঁ, নরমালিই আমাদের দেশে গ্লাভস পাওয়া যায় না। সেটাই সবাই স্বাভাবিক ভাবে! কিন্তু আসলে কি তা হওয়া উচিত? যেখানে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়, আর আমরা শুনি, এটা বেশি টাকা নয়? তাহলে কেন সাপ্লাই নেই?

এখানে আপনি যথাযথ প্রোটেকশন না নিয়ে রোগী দেখছেন, এ কথা বলে রোগীই অভিযোগ করবে। পার্থক্য এখানে!

ভদ্রতা, রেসপনসিবিলিটি এদের কাছে সহজাত! অভদ্র লোকজন যে নেই, তা বলব না, কিন্তু সেটা প্রকাশ কম! যা আমাদের জন্য উল্টো! আমাদের গায়ের এবং মুখের জোরের প্রকাশ বেশি! সারা দেশ চলে সেভাবে—জনগণ যেমন তার শাসকও সে রকমই হবে। নয়তো সবাই মাথায় বসে ডিসকো ড্যান্স করবে!

কী যে এক অবস্থা!

কিট নেই, পিপিই নেই, জনগণের দেমাগ ছাড়া বুদ্ধি নেই, পয়সা নেই। আসলে বুদ্ধি আছে, ঠকানোর বুদ্ধি! সবাই তো এক ঝুড়ির ফল আমরা। রাগ উঠলে ঝাড়ু হাতে যুদ্ধে যাই! ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার! মনে, শরীরে জোশ আসে, দেশ সেবায় শহীদ হতে যাচ্ছি!

কেন ভাই? কেন শহীদ হতে হবে, যে মৃত্যু ঠেকানো যায় তাতে? কেন প্রোটেকশন নিব না?

কেন বাড়ন্ত সময়ে, সব চেটেপুটে প্লেট পরিষ্কার করে ফেলি? দুর্যোগ মোকাবিলা কে করবে? প্ল্যান কী?

আমরা সব সময় বলছি, চিকিৎসকদের কী কী সমস্যা। কেউ কি তাঁর জন্য কিছু করছে?

ডিজি অফিসে ঘুষ, কলেজে সিট-বাণিজ্য, রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ, চা-নাশতার পয়সা, পদোন্নতি বাণিজ্য, এক অফিস থেকে অন্য অফিসে ট্রান্সফার বাণিজ্য, থাকার জায়গা নেই, জরাজীর্ণ আবাস, বছরের পর বছর লক্ষ-কোটি টাকার বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট! চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর দৌরাত্ম্য স্বাভাবিক জীবন বিপর্যয়!

চিকিৎসকদের কেন হা-হুতাশ করতে হবে, এ নাই সে নাই বলে? বরং তাঁদের কী লাগবে, সেটার ম্যানেজ করাই প্রতিটা হসপিটাল, ক্লিনিকের, প্রশাসনের দায়িত্ব! চিকিৎসকের দায়িত্ব তাঁর স্টেথো হাতে কাজে যাবেন, কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব তাঁদের বসার জায়গা দেওয়া, প্রোটেকটিভ গিয়ার দেওয়া, ১০০ শতাংশ প্রোটেকশন দেওয়া। চিকিৎসকেরা ওয়েট করতে পারেন পেশেন্টলি, কিন্তু যথাযথ গিয়ার না আসা পর্যন্ত তাঁদের কাজে যেতে কেউ বাধ্য করতে পারেন না।

চিকিৎসকদের দায়িত্ব নয়, ওয়ার্ড ক্লিন রাখা, হসপিটালে ক্লিনারদের কাজ কী? ডাক্তারদের হাত ধোয়ার সাবানটাও হসপিটাল সাপ্লাই দেয় না! চিকিৎসকদের অভিযোগ করতে শুনেছেন? রোগীদের টয়লেটের কথা কী বলব, চিকিৎসকদের টয়লেটও সাবানবিহীন। সাপ্লাই কোথায়? সেটা কোথায় যায়? চার্জে কে?

কর্মক্ষেত্রে ইনজুরি বিশাল ব্যাপার—আমার মনে হয় না এই কনসেপ্টটা আমাদের দেশে মেডিকেল ফিল্ডে কেউ জানে! কেউ তার যথাযথ প্রয়োগ মানে!

মনে হয় এটা একটা বাজে এবং কঠিন সময়, কিন্তু সঠিক সময় স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানোর!