তথ্য মহামারি এবং খবরের কাগজ: সত্যের দ্বার যেন না রুখি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কয়েক মাস হয়ে গেল, বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের ঘুঁটি চালাচালি করছে করোনাভাইরাস। তা ছাড়া আর কী! ভেবে দেখুন, কী নিঃশব্দে, অদৃশ্যভাবে মানুষের হাতকে বাহন করে এই ভাইরাস ওত পেতে আছে। কথায় বলে, ‘লোকে ফাঁদ পেতে ঘুঘু ধরে।’ এই কোভিড-১৯ ভাইরাসটি মনে হচ্ছে বেশ বড়সড় ফাঁদ পাতার অভিসন্ধি করে চলেছে। একটু ছোঁয়ার সুযোগ পেলেই সে মৃত্যুমাল্য ছুড়ে দেবে।

অনিশ্চয়তার চাপা দীর্ঘশ্বাসের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। সহমর্মিতা, সহানুভূতিশীল আর দায়িত্বপূর্ণ আচরণের পরিবেশ যেন আমাদের কাছ থেকে অবলুপ্ত হয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে আছে অদ্ভুত অনাস্থা। করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে এবং সামাজিকভাবে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা নিশ্চিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার বেশ কয়েক দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে এই ছুটিই আবার অনেকের কাছে বেশ জম্পেশ হয়ে ধরা দিয়েছে। মানুষের জীবনে যখন অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তখন কিছুটা ভেঙে পড়াই স্বাভাবিক। কারণ, তখন ‘কর্তব্যের’ কথাটা প্রথমে ভাবার মতো পরিস্থিতি কিংবা সচেতনতা অনেকের থাকে না। এমন সময়ে একমাত্র খবরের কাগজই পারে সামাজিক দূরত্বায়ন নিশ্চিত করে সচেতনমূলক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সবার সামনে উন্মোচন করার দায়িত্বটি সম্পন্ন করতে।

বুঝতে এক মুহূর্ত দেরি হবে না, এ সময়ে সংবাদপত্র নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকেই ভ্রুকুটি করে উঠবেন। যে ভাইরাস হাত দিয়ে সংক্রমিত হতে পারে, তার আবার মুদ্রিত খবরের কাগজকে বাহক হিসেবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা কতটুকু, সেটা সন্দিগ্ধ মনে প্রশ্ন হিসেবে উঁকি দিতেই পারে। অনেকেই বলেন, কবিতা আর লেজ নাকি টেনে বের করা যায় না, যার হওয়ার তার হয়। এখানে ‘সংবাদপত্র পাঠের অভ্যাস’কে নিয়ে বলি, তাও কিন্তু জোর করে কারও হয় না। যার পড়ার অভ্যাস আছে, কেবল তারই সংবাদপত্র পড়া হয়। কাউকে জোর করছি না কথাগুলো একবার অন্তত আমলে নেওয়ার। তবে আমলে নিলে অনেক ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়ে যাবে।

সম্প্রতি নিউ ইংল্যান্ডে ‘জার্নাল অব মেডিসিন’-এর একটি বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা থেকে জানা যায়, যেসব পৃষ্ঠ (সারফেস) অমসৃণ ও ছিদ্রযুক্ত, সে রকম পৃষ্ঠে এই ভাইরাসের টিকে থাকার এবং সংক্রমণের সক্ষমতা উভয়ই কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতামতেও আলোচ্য গবেষণার ফলাফলের প্রতি সমর্থন পাওয়া যায়। খবরের কাগজ সাধারণত অমসৃণ, কর্কশ ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ ভাইরাস যে জলীয় ফোঁটা বা ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, সেই জলীয় কণা অমসৃণ বা ছিদ্রযুক্ত খবরের কাগজে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারে না।

আমরা যদি সংবাদপত্র আর নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করি, তাহলে আমরাই সত্য খবরের নির্বিঘ্ন প্রবাহে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াব, যা সুযোগ তৈরি করে দেবে গুজব আর ভ্রান্ত ধারণা জন্মানোর। খবরের কাগজে ভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. তেদরোস আধানোম গেব্রোয়াসুস তো বলেই ফেলেছেন, ‘আমরা শুধু রোগের মহামারির (এপিডেমিক ) বিরুদ্ধে নয়, তথ্য মহামারির (মানে, ইনফোডেমিক) বিরুদ্ধেও লড়ছি।’ তাই সবিনয় অনুরোধ, সামাজিক দূরত্বায়ন বজায় রাখুন; খবরের কাগজ পড়ুন; আর তথ্য মহামারির বিরুদ্ধে অবস্থান নিন।

*লেখক: পিএইচডি অধ্যয়নরত, টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র