বিশ্ববাসী মুখোমুখি অদৃশ্য শক্তি কোভিড-১৯-এর

তৌহিদা রহমান
তৌহিদা রহমান

ভীষণ মনঃক্ষুণ্ন, হতাশা আবেগ আর অভিমানকে নিজ মস্তিষ্কে পোষণ করে দীর্ঘদিন বাসায় বন্দী! এমন নয় যে বাসায় বন্দী হয়ে কোর্মা-পোলাও আরাম-আয়েশে খাচ্ছি আর ঘুমাচ্ছি। দীর্ঘ বন্দী এই দশা আমার কাছে মনে হয় সোমালিয়ায় আটকে যাওয়া নাবিকের চেয়ে বেশি জঘন্য। খুবই উৎকণ্ঠায় প্রতিটি সেকেন্ড ব্যয় করছি আমরা। ইতিমধ্যে অঘোষিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে বিশ্বব্যাপী।

মৃত্যুর কফিনে চেনা-অচেনা কত মানিক–রতন, কত বধূ সন্তানসম্ভবা মা, বৃদ্ধ, ছাত্র সর্বশ্রেণি! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধনী দেশগুলো তাদের সামরিক শক্তির মহড়া বাড়াতে কত মারণাস্ত্র, পারমাণবিক, রাসায়নিক আবিষ্কারের প্রতিযোগিতা করেছিল! ফলে বিশ্ববাসী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়, তবে আজকে ধরণির বুকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝনঝনানি বেজে উঠেছে। এ যুদ্ধে কোনো সামরিক মহড়া নেই! নেই কোনো রক্তপাত–ধ্বংসলীলা! তবু মৃত ব্যক্তির স্বজনের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ!

চীনের উহান অঞ্চল থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও আজ পুরো বিশ্বকে তা গ্রাস করে ফেলেছে! করোনাভাইরাসের প্রলয়ংকরী করুণ থাবাই লন্ডভন্ড বিশ্বের হৃৎপিণ্ড। আজকের বিশ্ব মোড়ল দেশগুলো এই করোনাকে মোকাবিলায় হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে! তাদের অর্থনীতি, জীবনব্যবস্থাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা একধরনের স্থবির হয়ে পড়েছে! রক্তপাতহীন এই যুদ্ধে সভ্যতার প্রতিটি দালান দাঁড়িয়ে আছে তার নিজস্ব ঠিকানায়! কিন্তু দালানের কারিগরগুলো আর তা স্পর্শ করতে পারছে না, ক্ষুদ্র এই কোভিড-১৯ থামিয়ে দিয়েছে বিশ্ব প্লেনের চাকা! অথচ যারা মহাকাশ জয়ের এক অদম্য অহংকার প্রকাশ করত! বিশ্বজয়ের অন্ধকার চোরাবালিতে আজ তারাই ঘরের চার দেয়ালে বন্দী! অহংকারের সভ্যতা আজ চুরমার হয়ে জাগতিক পৃথিবীকে করেছে মৃত্যুপুরী! এই সংকটকালীন মুহূর্তে আমাদের ধৈর্য ধারণ করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলাসহ মানবিক পৃথিবীর দায়বদ্ধতায় জাগ্রত করবে। হে আল্লাহ, এই করোনার প্রকোপ থেকে তোমার মাখলুকাতকে রক্ষা করো।

আবার যেন হয়ে ওঠে এই পৃথিবী প্রাণবন্ত। সৌদি আরবে আবার বেজে উঠুক ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’।


*লেখক: পিএইচডি অধ্যয়নরত, সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রান্স