করোনায় ডাক্তার, প্রশাসন ও সমাজের করণীয়

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আমার মন খুব খারাপ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সংবাদ পড়ে পড়ে। ব্যক্তিগতভাবে বলব না, আমি ভীত নই! বলব না, আমি ভয় পাচ্ছি না করোনার! পাচ্ছি, ভীষণ ভয় পাচ্ছি। কিন্তু সঙ্গে আমাকে মনে রাখতে হচ্ছে আমার রোগীদের কথাও!

আমার নিজেরও ভীষণ ডাস্ট, পলেন এলার্জি। আর পলেনের মৌসুম ফুল দমে চলছে আমার এলাকায়! (কয়েক দিন আগে) হাফ ডে কাজ করে চলে এসেছি, আমার রোগীদের সবার ব্যবস্থা করেই! সকালবেলা ম্যানেজারকে বললাম, ‘জ্বর নাই।’ ও বলল, ‘তাহলে চলে আসো।’ যদিও আমরা খুব বেশি ফিজিক্যালি রোগী ক্লিনিকে দেখছি না। তার পরও অসুস্থদের ক্লিনিকে ঠিকই সেবা দিচ্ছি! টেলিফিল্ম চলছে, সঙ্গে প্রতিটি ৫০+ বছরের রোগীদের ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছি এটলিস্ট কেমন আছে!

যাঁরা টেলিহেলথ সুবিধা চাচ্ছেন কিন্তু তাঁদের রোগ বর্ণনায় কোনো রকম সন্দেহ জাগালেই আমি তাঁদের ফিজিক্যালি ক্লিনিকে চলে আসতে বলছি! কারণ অনেক লোকজনই জানেন না তাঁদের শরীর কতটা খারাপ! অথবা বোঝেন না!

আজও তা-ই হলো, আমি অফিস থেকে রোগীকে ফোন দিতে বললাম তার সাক্ষাতের আগে, অফিসে চলে আসতে। কারণ আমার মনে হলো আমার তাঁকে ফিজিক্যালি দেখার দরকার!

প্রোটেকশন বলতে মাস্ক আর গ্লাভস। দু-একটা করোনা টেস্ট কিট আছে। নিজে যদিও ১০০ শতাংশ ভালো ফিল করছি না, কিন্তু আমি স্ট্যাবল কথা-চালাচালির মাঝেই জানলাম, ওরা সপ্তাহখানেক আগে আফ্রিকা ঘুরে এসেছে। তার পর থেকে জ্বর, কাশি! রোগীর স্বামী বরং বেশি খারাপ! দুজনই এখন ক্লিনিকে আসবেন!

সত্যি বলতে, ওনারা যদি হাসপাতালে যেতেন, আমি খুব খুশি হতাম! কিন্তু এখন আমার দায়িত্ব তাঁদের চেক করা।

কেন এ গল্পের অবতারণা করলাম?

আমাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিতে!

দুজনকেই দেখলাম। আরও হিস্ট্রি নিয়ে জানলাম, হাজবেন্ডের গত সপ্তাহে করোনা টেস্ট হয়নি, কারণ হসপিটালে ভর্তি হননি! এক্স-রে নরমাল ছিল! তাঁর যা যা ল্যাব করার, ওরা ঠিকঠাক করেছে। ইনহেলার দিয়েছে, কিন্তু তাঁর অবস্থা খারাপ বই ভালো হয়নি!

যেহেতু এক্স-রে করেছেন গত সপ্তাহে, তাঁর এক্স-রে করার আগ্রহ কম। কিন্তু স্টেথো বসাতেই জানালাম, আমি তাঁর এক্স-রে আবার করাব। নিউমোনিয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছি! এর মাঝেই তাঁদের ব্রিদিং টেস্ট হয়েছে। প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট চলছে! আমার সঙ্গে যারা কাজ করে, তারা জানে আমি তাদের প্রপার চিকিৎসা দিয়ে তারপর স্ট্যাবল করে দরকার হলে হসপিটালে পাঠাব! এরাও ভীত, কিন্তু কেউ কারও জায়গা থেকে রোগীর চিকিৎসার ত্রুটি করবে না! আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম করোনার টেস্ট করব না, কারণ জ্বর ছিল না ক্লিনিকে, কিন্তু যেহেতু ঘণ্টাখানেক আগেও জ্বর ছিল, ঠিক করলাম চেক করব! রেজাল্ট আসতে যদিও কয়েক দিন লাগবে।

তাদের প্রপার চিকিৎসা, ম্যানেজমেন্ট বারবার বুঝিয়ে দিয়ে, যদি হাসপাতালে যেতে হয়, কখন যাবে বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় পাঠালাম! আমার কিন্তু এত কিছু না করলেও চলত। কয়েকটা ওষুধ লিখে দিয়ে দায় সারতে পারতাম, কিন্তু নিজের বিবেকের কাছে উত্তর দিতে পারতাম না! এখন যদি তাঁদের কিছু হয়ও, আমি জানি, তাঁদের জন্য এর বেশি আর করার কিছু নাই! আর যদি প্রপারলি মেনে চলেন যা বলেছি, আমার মনে হয় যদি করোনাও হয়, ভালো হয়ে যাবে দু-এক দিনেই।

হুম করোনা! সত্যিই আর লিখতে ইচ্ছে হয় না এটা নিয়ে আর! আর সবার মতো আমিও বিরক্ত, ভীত আর ফ্রাস্ট্রেটেড! ভাবছি কবে সব ঠিক হবে? কবে আমরা আবার নিশ্চিন্তে শ্বাস নিতে পারব?

আমাদের ভীষণ ব্যস্ত রাস্তাঘাটে লোকজন নেই, দোকানে লোকজন নেই! আমরা কেউ দরকার ছাড়া বের হই না! হাসিমুখে কাউকে জড়িয়ে ধরি না। ভয় পাচ্ছি আমাদের করোনা আছে কি না? আমরা সেটা বাচ্চাদের বা পরিবারের কাউকে দিচ্ছি কি না?

দু-চার সপ্তাহ ছুটি পেয়ে ঘরে বসে থাকতে পারলে মন্দ হতো না! কাজ কি খুব দরকার? না হলে কী করব?

নাহ। দুম করে কাজ ছেড়ে ঘরে বসে থাকতে পারি না, সেটা বলব না! পারি। কিন্তু সেটা স্বাভাবিক নয়! নিজের জন্য নয়, পরিবারের জন্য নয়, সমাজের জন্য নয়! আমার একটা স্কিলসেট আছে, সেটা কাজে লাগানোর যেহেতু স্কোপ আমার আছে, আমি শুকরিয়া করি; আমি সে স্কিল কাজে লাগাতে পারি।

প্রফেশনাল হ্যাজার্ড অবশ্যই আছে, যতটা সম্ভব নিজেকে সেভ করেই সেটা মেইনটেন করি।

আসলে আমার মনে হয়, আমাদের দেশে কোনো কারণে কোনো কিছুরই বিকেন্দ্রীকরণ হয় না! ছোট একটি দেশ, কিন্তু তার যাতায়াত ব্যবস্থা অনুন্নত! প্রতিটি জেলায় টেস্ট করার ব্যবস্থা করা উচিত, একটি-দুটি করোনা হসপিটাল প্রতিটা জেলায় করে বাকিগুলোতে সাধারণ জনগণের অন্যান্য চিকিৎসা কনটিনিউ করা উচিত! সেই সব বাকি হসপিটাল এবং ক্লিনিকের ও সিক কর্নার করে, করোনা টেস্ট করার ব্যবস্থা করা উচিত।

আমাদের মেডিকেল হসপিটাল আছে অনেক, প্রত্যেকের টেস্ট করার ক্যাপাসিটি থাকা উচিত! সেটা চিকিৎসকের এখতিয়ারে নয়, প্রশাসনের। কিন্তু বদনাম হচ্ছে আমাদের চিকিৎসকদের চিকিৎসা না দেওয়ার! প্লিজ আপনারা সবার চিকিৎসা করুন! সাপোর্টিভ হলেও! ভেন্টিলেটরের কথা ভুলে যান, প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করুন কয়েক শ নেবুলাইজার মেশিন আছে কি না, প্রতিটি ওয়ার্ডে? সেটার ব্যবহার করুন!

অ্যাজমা রোগী শ্বাস না নিতে পেরে মারা যাচ্ছে, সেটার মতো দুঃখ হয় না! পাঁচ ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে একজন মারা গেলেন। কার্ডিওলজিস্টরা কেন রোগী দেখবেন না? ইন্টারনিস্ট কেন তার রোগী দেখবেন না? পেডিয়ার্ট্রিস্ট কেন দেখবেন না? গাইনি, ওবি কেন দেখবেন না? অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্ট কেন হসপিটালে রোগী ম্যানেজ করবেন না? শেইম ইমারজেন্সি সার্জারি!

হসপিটালে রোগী যায় তার কমপ্রিহেনসিভ কেয়ারের জন্য। কারণ মেডিসিনের পুরো টিম সেখানে। লাগলে রেফারেল চিকিৎসকেরা তাঁদের দেখে যাবেন। আসলে আমার মনে হয় কোথাও সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে! মেডিকেল হসপিটালে কারও এমন ছুটি থাকে না! কোথাও গরমিল হচ্ছে।

এত নেগলিজেন্সের অভিযোগ অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে! আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি! রোগীরা ভয়ে বা স্বেচ্ছায় তথ্য লুকাচ্ছে, আমরা সেটা জেনে তাদের দেখতে অস্বীকার করছি! দুপক্ষই লুজ লুজ সিচুয়েশনে! কেউ বাঁচব না এর শেষে!

আমাদের এখানে আজ অল মোস্ট চার হাজার মৃত, অলমোস্ট দুই লাখ মানুষ করোনা-আক্রান্ত! হয়তো আক্রান্ত সংখ্যা এর দ্বিগুণ, কিন্তু আমরা এদের টেস্ট ঠিকই করব! প্রতিটি আক্রান্ত বা অনাক্রান্ত মানুষ তার বেসিক চিকিৎসা পাবে! কেউ বিনা চিকিৎসায় মরবে না!

দুর্ঘটনা, স্ট্রোক, হার্টের চিকিৎসা বা যেকোনো নন-করোনার চিকিৎসা থেমে নেই করোনা মহামারি চলছে বলে!

আমি আসলে এটাই বলতে চাচ্ছি, করোনার ভয়ে আমরা যাদের বাঁচাতে পারতাম, দেশে আমরা তাদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছি বিনা চিকিৎসায়! জানি আমাদের অনেক সমস্যা, প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নেই! কিন্তু জনবল আছে, সেবা করার মানসিকতা আছে, জ্ঞান আছে। প্লিজ অকারণ মৃত্যু বন্ধ করি!

হ্যাঁ প্রশাসনের দায়িত্বে গাফিলতি আছে, উচ্চপর্যায়ে ডিসিশন নেওয়ার অক্ষমতা আছে, তবু যেন নিজেদের দায়িত্ব ছেড়ে সরে না আসি।

আমরা সবার দোষ খুঁজতে ব্যস্ত এই মুহূর্তে! জনগণের মূর্খতা, এর এটা, তার সেটা কিন্তু ঘুম থেকে জেগে নিজেকে মনে করিয়ে দিন, আপনার দায়িত্বের কথা, ঘুমানোর আগে ভাবুন কতটুকু নাগরিক দায়িত্ব আজ আপনি পালন করলেন! কতটুকু প্রফেশনাল দায়িত্ব আপনি পালন করলেন?

হ্যাঁ, আমি আপনাদের মতোই, আপনাদের অক্ষমতার সাক্ষী, মরণাপন্ন রোগীকে আইসিইউ বেডে পাঠানোর জন্য গালি খেয়েছি, কিন্তু নিজের দায়িত্ব ছেড়ে আসিনি। আমরা আমাদের রোগীর প্রতিনিধি! জানি আমাদের নিজেদেরই কণ্ঠ রোহিত, রোগীদের অসহায়ত্ব আমরা ছাড়া আর কে ভালো বুঝি?

হ্যাঁ, চিকিৎসকদের মধ্যেও ভেদাভেদ আছে, কিন্তু কোনো কোনো সময় সে ভেদাভেদ ভুলে কখনো কখনো বৃহত্তর স্বার্থ দেখতে হয়, যেমন এখন এই ভীত, অসুস্থ মানুষের কথা আমাদের ভাবতে হবে।

অবশ্যই নিজেদের কথা, পরিবারের কথাও ভাবতে হবে, তাদের ছাড়া আমরা কিছু নই। আবার আমরা সবাই বৃহত্তর পরিবারেরই অংশমাত্র।

দেখছি জনগণ করোনায় কেউ মারা গেলে, লাশ হসপিটালে ফেলে চলে যাচ্ছে!

করোনা কারও আছে জানলে, বাড়িতে, ফ্ল্যাটে, পাড়ায় জায়গা দিচ্ছে না।

চিকিৎসকদের বাড়ি ছাড়ার জন্য বলছে। করোনাভাইরাসের জন্য হাসপাতাল বানাতে দিতেই অস্বীকার করছে!

করোনা আছে সন্দেহে মারামারি করে মাথা ফাটাচ্ছে, খুনোখুনি করছে।

করোনার মৃতদেহ কবর দিতে গোরস্থানে জায়গা দিতে অস্বীকার করছে।

চিকিৎসকদের থাকা, খাওয়া, যাতায়াত, প্রোটেকশনের ব্যবস্থা তো সেন্ট্রালি হওয়া উচিত! যেন প্রোটেকশন ছাড়া এইচআইভির, সিফিলিস, গনোরিয়ার জীবাণু নিয়ে খেলে—আসলে এসবেরও চিকিৎসা আজ আছে, করোনার নেই!

অবশ্য এখন অনেক সুন্দর খবর দেখছি—প্রোটেকশন ইত্যাদির ব্যবস্থা হচ্ছে। জল ঘোলা করে নোংরা না করলেও হতো!

জনগণ ভাবে, চিকিৎসক অনেক ইনকাম করেন, তাঁরাই সব জোগাড় করুন! তাঁরা চেইন অব কমান্ড জানেন না! চিকিৎসা করার জন্য অনেক কিছু লাগে! নার্স লাগে, সহকারী লাগে, ম্যানেজার লাগে, ক্লিনার লাগে, যন্ত্রপাতি লাগে, প্রোটেকশন লাগে! সাধারণ মানুষ বোঝে না!

ইচ্ছে হলেই রাস্তার মাঝে আমরা পেট কেটে ফেলি না! আমাদের রোগীকে পরানোর কাপড় লাগে, তাদের জীবাণুমুক্ত করা লাগে, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি লাগে, ওষুধ লাগে, এক্সপার্ট সার্জন লাগে, অজ্ঞান করার চিকিৎসক লাগে, সহযোগী লাগে, প্রপার বেড লাগে। সাধারণ জনগণ হয়তো ভাবে, আমরা ধুতুরা দিয়ে অজ্ঞান করে, দাও দিয়ে পেট ফেড়ে, লেপ সেলানোর সুই-সুতা দিয়ে সেলাই দিই! সেলাই দিলেই তারা যেন পুরোপুরি সুস্থ; নাচতে নাচতে, গাইতে গাইতে, প্রিয়ার আঁচল টানতে টানতে ঘরে ফিরতে পারবে!

যেমন একজনকে দেখলাম বলছে, চোখ দেখলেই বলতে পারা উচিত কী রোগ!

ভাই কী বলব?

এই জনগণ বড় হয়েছে দেখে নাড়ি ধরে বলে দেওয়া যায় মেয়েরা প্রেগন্যান্ট! রক্ত খেয়ে জসীমের শরীরে রক্ত আসে, তাগত বাড়ে, ইয়া হু বলে শত্রুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ে শাবানাকে বাঁচিয়ে দর্শকের তালি খেয়ে ঘরে ফেরে! ভালোবাসলে হার্ট বের করলেও মানুষ বেঁচে যায় ভালোবাসার জোরে!

তারাও ওইটুকুই তো চাচ্ছে! চাচ্ছে চিকিৎসকেরা ভালোবেসে, তাঁদের হার্ট বের করে প্রমাণ করুন তাঁরা জনগণকে ভালোবাসেন, তারপর কোলাকুলি করে দুজন দুজনের ঘরে ফিরবেন! পাপ তো আমরা করেছি এসব কাঁঠালপাতা সবাইকে খেতে দিয়ে। কখনো বলিনি এসব মনগড়া কাহিনি না গেলানোর জন্য!

কন্টাক্ট ট্রান্সমিশন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন জনতা কীভাবে বুঝবে, যখন অতিশিক্ষিত নামধারী লোকজন ভাবেন, মেডিকেলে পড়ায় আমাদের এক্স-রে ভিশন আছে?

এদের সঙ্গে ওঠবস করতে হবে আমাদের, সেটা সত্য। এদের সুস্থ রাখতে হবে, সেটা সত্য। কিন্তু তর্ক করতে গেলে ঠিক কোন লেভেলে নামতে হবে, জানা আছে? সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব? হয় আমাদের গোড়ার গলদ ঠিক। করতে হবে, নয়তো মুখ বুজে সহ্য করতে হবে!

আসলে এসব ভাঁড়দের মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। তাদের এডুকেট করার ব্যবস্থা আমাদের অধ্যাপকেরা নিতে পারেন। প্রশাসনে প্রচুর বিজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। এটির দায়ভার তাদের।

প্রণোদনা
চিকিৎসকদের প্রণোদনার দরকার অবশ্যই আছে। একটু প্রশংসার ভাগীদার আমরা সবাই।

এখানে কফি শপে হেল্থকেয়ার ওয়ার্কারদের ফ্রি কফি দিচ্ছে! ডোনাট ফ্রি দিচ্ছে ডোনাট শপ। এত কিছু না-ই হলো, অন্তত কাজের সময় তাদের ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনারের ব্যবস্থা হাসপাতালগুলো করতে পারে। কমপক্ষে তাঁদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারে লকডাউনের দিনগুলোতে।

জনগণ দয়া করে ঘরে থাকুন! মনে রাখুন, করোনার বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধই একমাত্র ভরসা।

আমরা প্রথম বললাম, কানে কেন ধরায়?

তারপর আমরা বললাম, কেন পেটায়? কেন সালাম দিয়ে কথা বলে না?

ফলাফল, ভয়হীন জনতা রাস্তায়, আমরা আবার সার্কাস দেখি! দলে দলে লোকজন করোনার ভয় ভুলে, আইনের প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান দেখাতে ভুলে রাস্তায় নেমে আসে!

আল্লাহ তো বলেছেন, আমি তাদের সাহায্য করি, যারা নিজেদের সাহায্য করে। আমরা যেন কারও সাহায্যের তোয়াক্কাই করছি না।

যদি কারও করোনার উপসর্গ থাকে কিন্তু অবস্থা বেশি খারাপ না, তাহলে ২ সপ্তাহ নিজ ঘরে কোয়ারেন্টিন করুন, ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যদি এই দুই সপ্তাহে কোনো একদিন উপসর্গ খারাপ হয়, তবে হাসপাতালে চলে যান! কিন্তু যাওয়ার আগে জেনে নিন কোথায়, কোন হাসপাতালে যেতে পারবেন। সঙ্গে এক দঙ্গল লোক নেবেন না! বাচ্চাদের অবশ্যই সঙ্গে নেবেন না।

জ্বর হলে ওষুধ খান, তিন বেলার বেশি নয়, ডোজের বেশি নয়! এলার্জি থাকলে তার ওষুধ খান।
অ্যাজমা থাকলে, আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া ইনহেলার ব্যবহার করুন! কাশির ওষুধ খান।

শুধু অবস্থা খারাপ হলে, তবেই হাসপাতালে যান!

দুই সপ্তাহ নিজেদের ভালোবাসার মানুষদের কাছ থেকে দূরে রাখুন! ফোনে কথা বলুন। ভিডিও চ্যাট করুন। শুধু দূরে থাকুন! নিজের ঘরে থাকুন!

নিজের কাজ নিজে করুন! পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন! বাবা, মা, পরিবারের কাজে সাহায্য করুন। নতুন কিছু শিখুন অথবা না হয় পড়াশোনাটাই ঝালিয়ে নিন।

কারও মুখের ওপর হাঁচি-কাশি দেবেন না!

ঘন ঘন হাত সাবান দিয়ে ধোয়ার অভ্যাস করুন।

চিকিৎসকদের অকারণে বিরক্ত করবেন না। তাঁদের যোগ্য সম্মান দিন, আপনাদের সাহায্য করতে দিন।

হ্যাঁ, আমরা সবাই ঘরে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছি। বাচ্চারা বাসায় বোরড। কোথাও যাওয়ার উপায় নাই! করোনা যে কবে আমাদের ছেড়ে যাবে? আমরা এ রকম বন্দী জীবনে অভ্যস্ত নই! কিন্তু এটা আপাতত মানতে হবে সবার স্বার্থে। প্রিয়জনদের বাঁচাতে, নিজেকে বাঁচাতে।
করোনা কি প্রতিবছর ফিরে আসবে? এ বছর কি ট্রায়াল ফেজ? আমরা জানি না অনেক কিছুই।

ফ্লু তো প্রতিবছর আসে, তার পরও আমরা সাবধান নই! হয়তো ভবিষ্যতে করোনাতেও অভ্যস্ত হয়ে যাব!

সে দিন কত দূরে?

হাসপাতালগুলো ইমারজেন্সি সার্জারি বাদে সব ইলেকটিভ সার্জারি এবং প্রসিডিওর বন্ধ রাখুন, হাসপাতালে রোটেশন করে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নিন যাতে পিপিইর সংকট মোকাবিলা করা যায়। ফ্রন্ট লাইনারদের পিপিই সুনিশ্চিত করুন। নিদেন পক্ষে সার্জিক্যাল মাস্ক, গ্লাভস। চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিন, নিজেদের বাঁচান।

জনগণ আবারও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না দুই সপ্তাহ।

চিকিৎসকেরা সেবা করতে চান, তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিন, সহযোগিতা করুন আপনাদের সাহায্য করতে।

*লেখক: চিকিৎসক