করোনায় বিপাকে মধ্যপ্রাচ্যের কর্মহীন প্রবাসীরা

মহামারি করোনাভাইরাসে দিশেহারা পুরো পৃথিবী। ইউরোপের দেশগুলোর মতো মধ্যপ্রাচ্যেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই ভাইরাস। সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমানের মতো দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বন্ধ রয়েছে প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অফিস আদালত। চলছে লকডাউন ও কারফিউ।

করোনার কারণে ব্যস্তময় শহরগুলোতে নীরবতা বিরাজ করছে। দিনের বেলা নগর জেগে উঠলেও বন্ধ প্রায় প্রতিটি কর্মক্ষেত্র। এমন অবস্থায় আর্থিকভাবে সংকটে পড়ছেন প্রবাসীরা। একদিকে যেমন দিন কাটছে আতঙ্কে, অন্যদিকে ঘরে বন্দী থাকায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা।

অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষ। অনেকেই আছেন চাকরি হারানোর ভয়ে। কাজ বন্ধ হওয়ার কারণে তাঁরাও আছেন বিপাকে। ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান মাসিক বেতন কমিয়ে অর্ধেক করছে। কেউ কেউ বিনা বেতনে ছুটি দিয়েছেন কর্মীদের। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার বেতনও দিতে পারেনি। অনেকে দেশে গিয়েও আর ফিরতে পারেননি।

কয়েক লাখ টাকা খরচ করে এসব প্রবাসীর কেউ এসেছেন নতুন ভিসায়, যাঁদের প্রতি মাসে ধারদেনা শোধ করতে হয়। একদিকে যেমন নিজে চলতে হয়, অন্যদিকে পরিবার চালাতে হয়। বিদেশে সংগ্রাম আর যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় প্রতিনিয়ত। আর মাস শেষে যখন বেতনের টাকাগুলো হাতে আসে, তখন চোখ-মুখের ক্লান্তির ছাপ চলে যায় নিমেষেই। কিন্তু হঠাৎ এক মহামারি ভাইরাসে এলোমেলো করে দিল সব। চূর্ণবিচুর্ণ করে দিল পুরো পৃথিবী। স্তব্ধ হয়ে গেল পৃথিবী। থমকে গেল কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথচলা। কেউবা এখনো হাঁটছেন। তবে এর শেষ কোথায়, কেউ তা জানে না। এ থমকে যাওয়া জীবনের মধ্যেও মানুষের চাওয়ার শেষ নেই। কেউ দুবেলা খেয়ে বাঁচতে চায়, কেউবা না খেয়েও বেঁচে থাকতে চায়।

দেশে বিভিন্নভাবে নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন সংগঠন প্রতিনিয়ত খাবার পৌঁছে দিচ্ছে এসব পরিবারে। সরকারের পক্ষ থেকেও পাচ্ছে বিভিন্ন সহায়তা। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রবাসীদের খোঁজ কি কেউ নিচ্ছে?

কয়েকজন প্রবাসীর কাছ থেকে জানা যায় তাঁদের দুর্ভোগের কথা। কাজ নেই তাই কোম্পানি বসিয়ে রাখছে, অনেকের চাকরি চলে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, তাই বাসা থেকে বের হওয়ারও উপায় নেই। প্রবাসীদের পরিবার চেয়ে থাকে, কখন টাকা আসবে আর তারা মাসিক কেনাকাটা করবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের পরিবারকে টাকা পাঠানো তো দূরের কথা, নিজে চলতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাঁদের আশা, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তাঁদের এ দুঃসময়ে প্রবাসীদের পাশে থাকবে। দেশের মতো বিদেশে এমন অনেক সামাজিক সংগঠন আছে, তারাও প্রবাসীদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে।

এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছে ১৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ১৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় এই বছরের মার্চে প্রবাসীরা ১৭ কোটি ডলার কম পাঠিয়েছেন। ২০১৯ সালে তাঁরা পাঠিয়েছিলেন ১৪৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। আর গত মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এপ্রিলেও কমে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
তাই আসুন আমরা দেশের নিম্নবিত্ত পরিবারের পাশাপাশি এসব কর্মহীন রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াই। সরকারের প্রতিও আবেদন, যেন এসব প্রবাসীর পাশে এগিয়ে আসে।