করোনায় অসহায় সৌদিপ্রবাসীদের পাশে সরকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার থেকে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেট। ছবি: সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার থেকে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেট। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন। প্রায় প্রতিটি দেশেই সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। মানুষ হয়ে পড়েছে গৃহবন্দী। করোনাভাইরাস রোধে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করলেও সেখানেও ছড়িয়েছে ভাইরাস। এ কারণে স্থানীয়দের মতো করোনা নিয়ে আতঙ্কে আছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় স্থবিরতা নেমে এসেছে সেখানকার জনজীবনে। এ কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। আর্থিকভাবে সংকটে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাহায্য–সহযোগিতা করে আসছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হওয়ায় সৌদি আরবের জেদ্দা ও পশ্চিমাঞ্চলে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি চরম খাদ্যসংকটে পড়েছেন, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল সোমবার থেকে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেট। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৌদি আরবে লকডাউন এবং কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় সৌদি সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে আজ থেকে জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ফয়সল আহমেদ এবং তাঁর সহকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিশেষ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন। কারফিউর কারণে প্রবাসীরা গৃহবন্দী অবস্থায় থাকায়, জেদ্দার কনস্যুলেট জেনারেল প্রবাসীদের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের নিজ বাড়িতে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিপদগ্রস্ত যেসব প্রবাসী এখনো আবেদন করেননি, তাঁদের অবিলম্বে আবেদন করার আহ্বান জানান জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ফয়সল আহমেদ।

দূতাবাস ও কনস্যুলেটের ফেসবুক পেজে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সচেতনমূলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। এত কিছুর পরেও কিছু কিছু এলাকায় ২৪ ঘণ্টা কারফিউ চলা অবস্থায় অকারণে জমায়েত হচ্ছেন অতি কিছু উৎসাহী বাংলাদেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশিদের সচেতন করতে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রচারপত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। রীতিমতো দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে বাদ যায়নি সৌদি আরবও। সেখানে এখন পর্যন্ত ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজারের মতো। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। আর আক্রান্ত হয়েছে ৪৭২ জন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দূতাবাস।

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় সৌদি আরবের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। লকডাউনে ঘরবন্দী হয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পার করছে অলস সময়। এমন পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে স্কুলের শিক্ষকেরা অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছেন। শিক্ষকেরা বলছেন, ছুটির মধ্যেও যেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম সচল থাকে, এই কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আফনান শাহাদাত মাহা নামের একজন স্কুলশিক্ষার্থী বলে, ‘স্কুল বন্ধ হওয়ার পর বাসায় অলস সময় কাটাচ্ছিল। এমন অবস্থায় গত সপ্তাহ থেকে অনলাইন অপারেটর স্কাইপ জুমের মাধ্যমে ক্লাস চালু করে স্কুল কমিটি। এখন আমরা বাসায় বসেই রীতিমতো স্কুল নিয়মে ক্লাস করছি। আমি অনেক খুশি।’ এতে অভিভাবকেরাও খুশি, অনলাইনের মাধ্যমে তাঁদের সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার জন্য স্কুল পরিচালনার পর্ষদ ও শিক্ষক–শিক্ষিকাদের অভিনন্দন জানান।

অনলাইনে পড়ার কাজ করছ স্কুলশিক্ষার্থী আফনান শাহাদাত মাহা। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইনে পড়ার কাজ করছ স্কুলশিক্ষার্থী আফনান শাহাদাত মাহা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্রিটিশ কারিকুলামের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম মিজানুর রহমান জানান, আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁদের ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীদের এখন অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানান এই অধ্যক্ষ।

উল্লেখিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এত দিন অভিভাবকদের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল, কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং করোনাভাইরাসের প্রভাব এভাবে থাকলে একদিকে যেমন প্রবাসীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যাবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে। অভিভাবকেরাও শঙ্কিত যে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে ছেলেমেয়েরা কোথায় পাঠ নেবে, এতে তারাও সরকারের সহযোগিতা কামনা করছে।