আমাদের বৈশাখ
পৃথিবী কিন্তু তার অনন্য বৈচিত্র্য আজও সেজেছে: মৃত গাছের ডাল ফুঁড়ে উঁকি দিচ্ছে সবুজ সতেজ পাতা বাচ্চারা; গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে মানবকৃত সকল পাপ- হিংসা, যুদ্ধ, খুন আর ধর্ষণের যন্ত্রণার রক্ত পৃথিবী সযত্নে ধুয়ে নেয়। কখনো প্রচণ্ড ক্রোধে শোঁ শোঁ বাতাসের শব্দে জানান দেয় আমাদের সীমা অতিক্রমকারী অমার্জনীয় ধূর্তামি! এখন সে বড় নির্মম প্রতিশোধ নিচ্ছে: প্রকৃতির হিসাবে কেউ কখনো হয়নি এমন ঘরবন্দী। অথচ এখন বাংলায় বৈশাখ, পাশ্চাত্যেও শীত যাই যাই করে বসন্তের আগমনী—আজ আমাদের বৈশাখ তাই ঠিক এমনই:
আমাদের বৈশাখ
যে সৃজনশীলতাকে আমরা প্রতিনিয়ত অবজ্ঞা করেছি,
সে আজ প্রতিবাদমুখর:
দিগ্বিজয়ে কোকিলের ডাকে বৈশাখ এলেও,
এ বৈশাখে আমাদের বাসন্তী রং নেই।
কৃষ্ণচূড়ায় আগুন দেখার বিলাসিতার ভুক নেই;
আমাদের স্বপ্ন নেই; দুঃখ পরিতাপের হা-হুতাশ নেই-
ফাল্গুনের শেষ অথবা বৈশাখের শুরুও নেই।
আমাদের কেবল বিস্ময়ভরা ঘোর আছে—
দিব্যচোখে সর্ষে ফুলে, হাড়-ক্ষয়া জীবনবোধের রোগ আছে।
আমাদের দারিদ্র্য আছে; সেই দারিদ্র্যে
মুনাফালোভী কিছু জানোয়ার আছে:
সেই জানোয়ার শিশু ধর্ষণ আর মানবের রক্তে পুণ্য করে,
অট্টালিকায় গরিব হত্যার অট্টহাস্যে, আমাদের ভাগ্যলিপি বোনে।
তারপরও আমাদের বেঁচে থাকার এক মুঠো ক্ষুধা থাকে;
আম্রকাননের নবীন কোষে ইলসা না হোক,
হাঁড়ি ভরা মোটা চালে ফ্যানের ঘ্রাণে,
ঠোঁট ফুলিয়ে মরিচ-পেঁয়াজ, ডালের ঝাঁঝে হাত চুবিয়ে
আগামীকালের ভোরের, একটি অপেক্ষা থাকে।