করোনাকাল ইন রুয়ান্ডা

যেহেতু ঘরে থাকতে হচ্ছে, তাই বাগান পরিচর্যা করেই অনেকের সময় কাটছে। ছবি: লেখক
যেহেতু ঘরে থাকতে হচ্ছে, তাই বাগান পরিচর্যা করেই অনেকের সময় কাটছে। ছবি: লেখক

বিশ্বজুড়ে করোনার আতঙ্ক চলছে। প্রতিদিনই নতুন করে মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। পত্রিকার পাতায় বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলে এর তীব্রতা সহজেই আন্দাজ করা যায়। অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রগুলো সর্বশক্তি নিয়োগ করছে, আশানুরূপ ফল পাওয়া গেলেও বিশ্বব্যাপী এর আতঙ্ক এখনো ভয়ানকই বলা যায়।

পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাও এর ব্যতিক্রম নয়।
১৪ মার্চ রুয়ান্ডায় প্রথম করোনা পজিটিভ রোগী চিহ্নিত হয়। তিনি ভারতের মুম্বাই থেকে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। একে একে এই সংখ্যা বর্তমানে ১১০–এ পৌঁছেছে, যদিও এ থেকে ইতিমধ্যেই ৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন (১৫ এপ্রিল)। অত্যন্ত ইতিবাচক দিক হলো যে রুয়ান্ডাতে এখনো এ রোগে কেউ মারা যাননি, যার সফলতার তারিফ অবশ্যই সরকারের প্রাপ্য। কারণ, প্রথম দিন থেকেই সরকার ছিল খুই আন্তরিক, যার ফলও তারা অবশ্যই পেতে শুরু করেছে।
যখনই একজন রোগী চিহ্নিত হয়েছে, ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যেই সরকার থেকে নির্দেশনা জারি হয়েছে এবং দ্বিতীয় রোগী চিহ্নিত হওয়ার জন্য একদমই অপেক্ষা করা হয়নি বলা যায়। যাতে জনগণ সচেতন হতে পেরেছেন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অপ্রয়োজনীয় যাবতীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং জনগণও অক্ষরে অক্ষরে তা পালন শুরু করেছেন। পুলিশ প্রশাসনসহ সব স্থানীয় প্রশাসন একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ফলে এর বিস্তার থামানো গেছে বলা যায়।

ঘরে থাকতে থাকতে একঘেয়েমি কাটাতে নিয়মিত বাগান পরিচর্যায় সময় কাটছে অনেকের। ছবি: লেখক
ঘরে থাকতে থাকতে একঘেয়েমি কাটাতে নিয়মিত বাগান পরিচর্যায় সময় কাটছে অনেকের। ছবি: লেখক

তা ছাড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাঁরা বাড়ি থেকে কাজ করতে পারবেন, তাঁরা যেন প্রতিষ্ঠানপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই সম্ভব এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা একেবারে শুরু থেকেই সবকিছু বাস্তবায়িত হচ্ছে।
আমরা যেহেতু ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানে (আশা মাইক্রোফিন্যান্স (রুয়ান্ডা) পিএলসি) কাজ করি এবং পুরো প্রক্রিয়াই যেহেতু মূলত উপকারভোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের সঙ্গে জড়িত, সে ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনার কারণে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ২৩ মার্চ থেকেই কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যদিও বাসায় বসে যাবতীয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে, যাতে অফিশিয়াল যাবতীয় কাজে সমন্বয় সাধন করা যায়।
বর্তমানে দেশে পুরোপুরি লকডাউন অবস্থা বিরাজ করছে, যা ১৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে ১৯ এপ্রিল বর্ধিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় বাইরে বের হওয়ার কোনো সুযোগই আপাতত নেই বলা যায়। কোনো জরুরি কাজে বাইরে যেতে হলে যথাযথ কারণ দর্শাতে হয় এবং এর ব্যত্যয় হলে পুলিশ প্রশাসন থেকে রীতিমতো শাস্তির আওতায় আসতে হয়, যদিও এমন অবস্থার সম্মুখীন এখনো হতে হয়নি।
ইতিমধ্যে রুয়ান্ডায় বসবাসকারী সব বাংলাদেশির একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে এবং সবাই এর মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তা ছাড়া যে বা যিনি করোনা বিষয়ে কোনো আপডেট পাচ্ছেন, তা গ্রুপে পোস্ট করে সবাইকে অবহিত করছেন, যা এ ক্রান্তিকালে আমাদের মনোবল সংহত রাখতে সহায়তা করছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশিদের কেউ এ রোগে আক্রান্ত হননি বা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীনও হননি।

সবজি চাষও চলছে। ছবি: লেখক
সবজি চাষও চলছে। ছবি: লেখক

স্বাভাবিক সময়ে কর্ম সপ্তাহ শুরুর পর যেমন কেবলই কর্মবিরতির (উইকেন্ড) অপেক্ষায় থাকা হতো যে কবে শুক্রবার আসবে, ঠিক তেমনি এখন কেবলই অপেক্ষার পালা কবে কর্মসপ্তাহ আবার ফিরে আসবে। কারণ, দীর্ঘ কর্মবিরতি আসলেই পীড়াদায়ক। তা ছাড়া, ফুলবাগান রক্ষণাবেক্ষণ করা বা এর পরিচর্যা করা আর সবজির বাগানের দেখভাল করে আর কতই বা সময় কাটানো যায়।
এরই মধ্যে দেশ–বিদেশে ছড়িয়ে থাকা স্বজনদের নিয়ে ক্রমেই দুশ্চিন্তা দানা বাঁধছে। কারণ, প্রিয় মাতৃভূমিসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যে হারে এর বিস্তৃতি ঘটে চলেছে, তাতে আতঙ্কিত না হয়ে একেবারেই পারা যায় না, যদিও কিছুই করার নেই একেবারেই।
আশায় আছি শিগগিরই আবার ফিরে আসব কোলাহলময় পৃথিবীতে, যেখানে থাকবে শুধু কাজ আর কাজ, আর বিশ্ববাসীও আবার যাঁর যাঁর স্থানে থেকে বিজয়ের গান গাইতে শুরু করবেন।
হৃদয়ের গভীর থেকে প্রার্থনা করছি সেদিন যেন খুব দূরে না হয়।
আঁধার কাটবেই
আলো আসবেই
……………………..!
সবাই হাসবেই
কান্না থামবেই
……………………!
বাঁশি বাজবেই
গান চলবেই
……………………!
মানুষ বলবেই
সবাই শুনবেই
…………………….!
ফুল ফুটবেই
পাখি গাইবেই
……………………!
প্রেম হবেই
মিলন চলবেই
…………………………!
মানুষ মানুষে মিশবেই