স্পেনে অসহায় মানুষের ঘরে খাবার দিচ্ছেন শেফ রনি ও বন্ধুরা

বাংলাদেশি শেফ রনি ও তাঁর সহকর্মীদের রান্না পৌঁছে যাবে স্পেনের না খেয়ে থাকা মানুষের কাছে। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি শেফ রনি ও তাঁর সহকর্মীদের রান্না পৌঁছে যাবে স্পেনের না খেয়ে থাকা মানুষের কাছে। ছবি: সংগৃহীত

করোনার বিস্তার ঠেকাতে স্পেনে চলছে লকডাউন। লোকজন গৃহবন্দী। এ সময় রেস্টুরেন্টের কুক, শেফরাও ঘরে বসে আছেন। তাঁদের একজন বাংলাদেশি এস এইচ রনি। তিনি পেশাদার শেফ। পর্যটন নগরী বার্সেলোনা শহরে প্রসিদ্ধ বড়মুত (তাপাস বার) রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন কয়েক শ কাস্টমারের জন্য খাবার তৈরি করতেন। এখন প্রতিদিন প্রায় কয়েক শ মানুষের জন্য খাবার তৈরি করেন। এসব খাবার প্রতিবেশী অসহায়, বৃদ্ধ ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে দেন।

মার্চের শেষ দিকের কথা। এস এইচ রনি পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় বড়মুত তাপাস রেস্টুরেন্টে কাজ করছিলেন। সে সময় করোনা রোগী শনাক্ত হয়, আর সবকিছু থমকে যায়। এর বর্ণনা দিতে গিয়ে এস এইচ রনি বলেন, ‘সবই থমকে যায়। সবার জীবনে ছন্দপতন ঘটে। বার, সিনেমা, থিয়েটার রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ হয়ে যায়। আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। জানি না আবার আগের মতো সচল হবে কি না এই পর্যটনকেন্দ্র এবং রেস্টুরেন্টগুলো। এখন তো এমন দুঃসময়, শতাধিক পর্যটক-কাস্টমার ভরা কোনো বার-রেস্টুরেন্টের কথা কল্পনাই করা যায় না! একসময় লকডাউন উঠে যাবে। হয়তো এর পরও কয়েক মাস কেটে যাবে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে। এমনও হতে পারে, আগে যেমন ছিল আমাদের জীবন, তেমনটি আর থাকবে না।’
কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না। সংকটের দিন বয়েই চলে। শেফ-কুকরাও বসে থাকতে পারেন না। এস এইচ রনি বলেন, ‘মার্চে আমার স্প্যানিশ সহকর্মী খুয়ান মানুয়েল উম্বার্ট একটা আহ্বান জানান। আমাদের রেস্টুরেন্টে যত শেফ -কুক আছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই যেন প্রতিদিন একত্র হয়ে আমাদের চারপাশের অন্তত হাজার লোকের জন্য খাবার তৈরি করি। মানবতার সেবায় “ফুড ফর গুড (FOOD FOR GOOD)” নামে এসব খাবার প্রতিবেশী অসহায়, বৃদ্ধ ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে বিলিয়ে দিই। তাঁদের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করি।’

বাংলাদেশি এস এইচ রনি। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি এস এইচ রনি। ছবি: সংগৃহীত

এস এইচ রনি বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমাদের জড়তা ছিল। খটকা লাগত। আমরা কি পারব প্রতিদিন এত সব মানুষের খাবার তৈরি করতে। আমরা আটকে যাব না তো মাঝপথে? দ্বিধা নিয়েই আমরা শুরু করি কাজ। বার্সেলোনা শহরকে মোট দুইটি জোনে ভাগ করে চালু করি খাবার বিতরণের কাজ। এসব খাবার দিয়ে আনন্দ পাই দেখে তাঁদের মুখে হাসি। খাবার পেয়ে তাঁরাও বেশ খুশি। বুঝতে পারি, প্রতিবেশীরা মুগ্ধ । খাবার দিয়ে তাঁদের বলি, কাল আবার আসব খাবার নিয়ে, দেখা হবে।’
নিত্যদিনের এসব খাদ্যসামগ্রী তৈরি ও বিতরণে রনিকে সহযোগিতা করছেন সহকর্মীরাই। বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহযোগিতার হাত। এঁদের মধ্যে আলেক্স (হন্ডুরাস), খসে (আর্জেন্টিনা), তাফাজ্জল হোসেন (বাংলাদেশ), ইব্রাহীম (বাংলাদেশ), হারজিন্দের (ভারত), গৌরভ (নেপাল) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

এস এইচ রনিকে সহযোগিতা করছেন তাঁর সহকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
এস এইচ রনিকে সহযোগিতা করছেন তাঁর সহকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

খাবার বিতরণের কাজে মুগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে রনিদের সহযোগিতায়।
প্রতিদিন চলছে তাঁদের খাবার তৈরি ও বিতরণের কাজ। এস এম রনি বলেন, ‘গরিব ও দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু করার মতো সুযোগ প্রতিদিন আসে না। আল্লাহ এ সুযোগ সবাইকে দেন না। তাই আমরা সর্বস্ব চেষ্টা করছি, যারা না খেয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, তাদের মুখে যদি এক বেলার খাবারও পোঁছানো যায়। জানি, আমার এসব খাবারে হয়তো কারও শরীরের অসুখ সারবে না, তবে আমাদের মনের রোগ তো সেরে যায়। তাদের সময় কেটে যায় তৃপ্ততায়।