গ্রামের নাম নরপতি, প্রবাসীর অনুভূতি

খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট। ছবি: সংগৃহীত
খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট। ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার একটি গ্রাম। নাম নরপতি! উত্তর-মধ্য-দক্ষিণ মিলে বেশ বড় গ্রাম এটি। পাশেই মুড়ারবন্দ মাজার, যেখানে সিপাহশালার নাসিরউদ্দীন (রহ.) মাজার শরিফ অবস্থিত।

এ গ্রামে অনেক গুণী লোকের জন্ম হয়েছে, যাঁরা দেশ-বিদেশে সমধিক পরিচিত। এ গ্রামের অনেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে গ্রামের, তথা গোটা দেশের সম্মান/ অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এর মধ্যে যে অংশটি বিদেশে কাজ করছে, তাদের নিয়েই মূলত আজকের এ লেখা।
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস অন্যান্য দেশের মতো আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো নরপতি গ্রামেও এর রেশ পড়েছে, যা বিদেশে থাকা গ্রামের লোকজনকে স্বস্তি দিতে পারছে না। অনেকে আছেন, যাঁরা লকডাউনের কারণে আয়-রোজগার থেকে বঞ্চিত হয়ে ঘরে বসে আছেন, যার প্রভাব পড়ছে তাঁদের পরিবারের ওপর, এমনকি খেয়ে না খেয়ে তাঁদের জীবন ধারণের মতো সংকট দেখা দিয়েছে।
এমতাবস্থায় গ্রামের একজন সদস্য হিসেবে নীরব দর্শক হয়ে থাকা যায় না বিবেচনা করে ফেসবুকের কল্যাণে গ্রামে থাকা লোকজনের সমন্বয়ে ৯ এপ্রিল ‘গ্রামের নাম নরপতি’ শিরোনামে একটা ফেসবুক গ্রুপ করা হয়। এর গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সবাইকে অবগত করা হয় যে কর্মবঞ্চিত ও আয়বঞ্চিত মানুষকে সহাযোগিতা করাই এই মুহূর্তে এর প্রধান কাজ। তবে ভবিষ্যতে আরও নানামুখী কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া যেতে পারে। এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায় এবং মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ গ্রুপে দেশ-বিদেশে থাকা প্রায় ২০০ সদস্য অন্তর্ভুক্ত হন।
সদস্যদের অন্তর্ভুক্তিই শেষ কথা নয়, বরং সব সদস্যের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রীতিমতো অবাক করার মতো। তাঁদের কারণে মাত্র ১০-১২ দিনের ব্যবধানে গ্রামে থাকা প্রায় ২৩০টি অসহায় পরিবারের প্রায় এক সপ্তাহের খাবারের আয়োজনের বন্দোবস্ত হয়ে যায়।

নরপতি গ্রামের বড় পুকুর। ছবি: লেখক
নরপতি গ্রামের বড় পুকুর। ছবি: লেখক

মাত্র ১২ দিনের প্রচেষ্টায় এমন একটা মহৎ কাজ সম্ভব হয়েছে কেবল গ্রামবাসী এবং গ্রামের প্রবাসী সন্তানদের ঐকান্তিক তৎপরতার কারণেই। সত্যি কথা বলতে কি, যে যেভাবে পেরেছেন, এ উদ্যোগে তাঁদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ কারণেই অতি স্বল্প সময়ে এমন চমৎকার উদ্যোগ সফল হয়েছে এবং ২১ এপ্রিল রাতে তালিকাভুক্ত সব মানুষের ঘরে এ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যে লোকদেখানো ছবি তোলার ব্যবস্থা একেবারেই ছিল না।
একটা বিষয় না বললেই নয়, এক ছোট ভাই, যাঁর জন্ম এ গ্রামে নয়, এমনকি জেলাতেও নয়, তিনি এমন প্রচেষ্টার কথা শোনে আর্থিক সহায়তা পাঠিয়েছেন, যা গ্রামবাসী কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মনে রাখবে।
সবশেষে বলতে চাই যে গ্রামের সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছে এ উদ্যোগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও অনেক বড় সফলতার গল্প সৃষ্টি করবে বলেই সবাই আশাবাদী।
গ্রামেই তো দেশের অধিকাংশ মানুষের নাড়ি পোঁতা আছে এবং এর প্রতি টান থাকাটাই স্বাভাবিক এবং এ কাজে সংযুক্ত হয়ে যা অনুধাবন করা গেল তা হলো, বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ, যারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের গ্রামের প্রতি দায়িত্বশীলতা বাড়ানো অতি প্রয়োজন। এমন দায়িত্বশীলতা গ্রামকে তো বটেই, এমনকি গোটা দেশকেই উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। কারণ, গ্রাম মানেই তো দেশ, আর গ্রাম ছাড়া কি দেশ কল্পনা করা যায়!