ইরান করোনা ইস্যুতে কীভাবে সফল হচ্ছে

ইরানে কিছুদিন আগেও করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১৫০ ছিল, তা এই মুহূর্তে অনেকটায় কমের দিকে। যদিও এটি বলার সময় এখনো আসেনি, ইরানে করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। 

পুরো ইরান করোনা ইস্যুতে এক সপ্তাহের বেশি লকডাউন ছিল না। তা ছাড়া লকাডাউনে এক শহরের গাড়ি অন্য শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে নিজ শহরের গাড়ি হলে তা প্রবেশের অনুমতি ছিল। তবে যে শহরগুলোতে জনগণ ভ্রমণে বেশি যায়, সে শহরগুলো প্রথম থেকেই
পুরোপুরি লকডাউন করা হয়েছিল।

এ নিয়ে কয়েকটি বিষয় বলতে চাই,

প্রথমত,
ইরানে প্রথম যখন করোনা আসে, তখন স্বাস্থ্য দিকনির্দেশনাস্বরূপ সবাইকে নিয়মিত হাত ধোয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় এবং তার পরের দিন বিবিসি নিউজের একটা নিউজ চোখে পড়ে যেখানে বলা হচ্ছে, ইরানের রাজধানী তেহরানে এত ভাগ পানির ব্যবহার বাড়ছে। এটা মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, ইরানের জনগণ হাত ধোয়ার বিষয়ে সচেতন হয়েছে।

দ্বিতীয়ত,
কিছুদিন আগে ইরানিদের অন্যতম উৎসব ফারসি নববর্ষের ছুটি চলছিল। এ উৎসবে ইরানিদের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার ঐতিহ্য পুরোনো দিনের। এর মধ্যে একটি নিউজ সাইটে একটি নিউজ চোখে পড়ল যাতে বলা হচ্ছে, মোবাইলের ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে বাসার বাইরে জনগণের চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে।

তৃতীয়ত,
ইরানের হাসপাতালগুলোতে যে বেড এবং আইসিইউ রয়েছে, কিছু প্রদেশ ছাড়া যেগুলোতে করোনার প্রকোপ অনেক বেশি ছিল, তা করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত। যদিও এর পরও কঠিন অবস্থা মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রদেশে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
এর ফলে এখন পর্যন্ত কোনো ইরানি আইসিইউ অথবা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন, তা আমার জানা নেই বা নিউজে দেখিনি।
ওপরের কথাগুলো এ কারণে বলা যে একটি মহামারি লড়তে আর যে ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছু নিয়েই আমরা অবগত না, সে ক্ষেত্রে এমন যুদ্ধে লড়তে আমাদের সব ক্ষেত্র থেকে সহায়তা নেওয়া যেতে পারে আগামী দিনের অবস্থা বুঝতে।
এবার আসতে চাই কীভাবে ইরানের পক্ষে সম্ভব হলো এত দ্রুত পুরোপুরি না হলেও করোনাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা?

প্রথমত,
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধানদের করোনা আসার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং দ্রুত করোনা রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসা সেন্টার ঘোষণা দেওয়া।

দ্বিতীয়ত,
২ থেকে ৩ দিনের মাঝে সারা দেশের চিকিৎসকদের কাছে করোনা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা, দিকনির্দেশনা ও প্রটোকল পৌঁছিয়ে দেওয়া। এবং চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সুরক্ষার পিপিই দেওয়া।

তৃতীয়ত,
ইরানে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৫৯৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন এবং এ সুস্থ হওয়ার পেছনে চিকিৎসকদের যে মূল অবদান আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের কী ট্রিটমেন্ট দিলে তাঁরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন, সেগুলো নিয়ে গবেষকদের গবেষণাও কিন্তু এ ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। প্রোটোকল আপডেট হচ্ছে।

চতুর্থত,
ইরানের সর্বশেষ হিসাবে প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ বাসায় অবস্থান করছে এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। এটিও কিন্তু একটি পজিটিভ দিক করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে।

*লেখক: শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান। [email protected]