করোনা: বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি

কানাডায় উচ্চশিক্ষা
কানাডায় উচ্চশিক্ষা

আশা করি শিক্ষার্থীসহ সবাই সুস্থ আছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আপনারা যাঁরা বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাঁদের জন্য সময়টা একটা লেগে থাকার পরীক্ষা। আপনাদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ।

প্রথমে আসি যাঁরা ব্যাচেলরের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে পড়তে যেতে চান তাঁদের কথায়।

ব্যাচেলরের জন্য দেশের বাইরে স্কলারশিপসহ অনেক দেশেই পড়তে যাওয়া যায়। জাপানের মনবুশো স্কলারশিপ, কোরিয়ার কেজিএসপি, চায়না, তুরস্ক, হাঙ্গেরি, ভারতের সরকারি স্কলারশিপসহ অনেক দেশে পড়তে যাওয়া যায়। করোনাভাইরাসে সামনে বছরে এসব স্কলারশিপের সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে সাময়িকভাবে বন্ধ হতেও পারে। তাই উচ্চমাধ্যমিকের পরে প্ল্যান-বি অবশ্যই থাকা উচিত। তবে যাঁরা সম্পূর্ণ নিজ খরচে দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যেতে চান তাঁদের কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো বেশি নিতে চাইবে। কারণ এই দেশগুলোর করোনা-পরবর্তী অর্থনীতির মন্দাভাব কাটাতে নিজ খরচে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের মোটা অঙ্কের টিউশন ফি এ ক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করবে। তাই নিজ খরচে পড়তে চাইলে এখন থেকেই পরিকল্পনা করা উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লিস্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতের কাছে প্রস্তুত রাখা উচিত, যেন পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার পরপরই আবেদন করতে পারেন।

এখন আসি দেশের বাইরে যাঁরা মাস্টার্স/পিএইচডি করতে যেতে চান তাঁদের কথায়। আপনাদের মধ্যে যাঁরা বাইরে মাস্টার্স/পিএইচডির জন্য স্কলারশিপ ও প্রফেসর ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন তাঁদের জন্য সামনের একাডেমিক ইয়ারগুলো তীব্র প্রতিযোগিতামূলক হবে। ইউনিভার্সিটির স্কলারশিপ ও ফান্ডেড-পজিশন সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে, প্রফেসরদের রিসার্চ গ্রান্ট সংকোচনের তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে। এক প্রফেসরের সঙ্গে অন্য প্রফেসরের রিসার্চ গ্রান্ট নিয়েও প্রতিযোগিতা বাড়বে।

করোনা-পরবর্তী সময়গুলোতে সব জায়গাতেই একেকটা স্কলারশিপের আসনের বিপরীতে প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নিজের প্রোফাইল সবার থেকে আলাদা করার চেস্টা করুন। একটা নতুন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ/আপনার ফিল্ড রিলেটেড কিছু শিখুন। ছোট ছোট টার্গেটে দিন অনুযায়ী এগিয়ে যেতে থাকুন।

বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণের আগে জীবনযাপনের খরচের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণের আগে জীবনযাপনের খরচের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে

বাসায় থাকার এই সময়টা একটা রিসার্চ পেপারের কাজে ব্যয় করুন। করোনার জন্য এখন পৃথিবীর সব কনফারেন্স ভার্চ্যুয়াল মোডে চলে গেছে। আমিও গত মাসে একটা অনলাইন কনফারেন্সে যোগদান করেছি যদিও আমেরিকাতে যাওয়ার কথা ছিল। আপনারা যাঁরা মাস্টার্স/ব্যাচেলরের থিসিস করে ফেলেছেন, ঝটপট খোঁজ নিন আপনাদের ফিল্ডের ভালো কনফারেন্সগুলোর সম্পর্কে। আর পেপার সাবমিশন ডেডলাইন সম্পর্কে। কনফারেন্সের ওয়েবসাইটে গিয়ে পেপার টেমপ্লেট জোগাড় করে নিজের থিসিসটা থেকে একটা পেপার লেখার চেষ্টা করুন। কনফারেন্সগুলো অনলাইনে ভার্চ্যুয়াল মোডে চলে যাওয়ায় আপনার ভ্রমণ ব্যয়, ভিসা, প্লেনের টিকিটের খরচ থাকবে না। পেপার অ্যাকসেপ্ট হলে রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে, বাসায় বসে কনফারেন্সে আপনার পেপার প্রেজেন্ট করতে পারবেন অনলাইনে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গবেষণা প্রকাশনার এত ভালো সুযোগ আর হয় না।

এ দুর্দিনে অনেক পেইড ডিজিটাল লাইব্রেরি তাদের জ্ঞানের রাজ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। যেমন IEEE Solid State circuits society-র সঙ্গে আমি যুক্ত। তারা অনলাইন রেপোজিটরির শর্ট-কোর্স ও ওয়েবিনার সবার জন্য এখন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আপনি আপনার সাবজেক্টের সংশ্লিষ্ট সোসাইটির ওয়েব পেজে ঢুঁ মেরে আসুন এমন কিছুর জন্য। বাসায় এই অঢেল সময়ে Coursera ও edX এ অনলাইনে নতুন একটা কোর্স করুন যেটা সিভিতে লিখতে পারবেন।

আপনার ফিল্ডের সাম্প্রতিক গবেষণা জানার জন্য সপ্তাহে একটা রিসার্চ পেপার পড়ুন ও খাতায় টপিক অনুযায়ী নোট করে রাখুন। এতে আপনার রিসার্চ টপিক কনসেপ্টের পরিধি বাড়বে। এই কাজটা করলে প্রফেসরদের সঙ্গে মাস্টার্স/পিএইচডি এডমিশন ইন্টারভিউতে পরে অনেক কাজে দেবে।

যাঁরা জিআরই আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন হাল ছেড়ে দিয়েন না। লেগে থাকার নামই জীবন। ভবিষ্যতের স্কলারশিপ ও ফান্ডিংয়ের ব্যাপারে হা-হুতাশ না করে করে আপনি যেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন (নিজের প্রোফাইল আরও ভালো করা) সেটা নিয়ে কাজ করুন। বুদ্ধিমানেরা তা-ই করবে, বাকিরা হা-হুতাশ করে ঝরে পড়বে।

*লেখক: ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যাংকুভার, কানাডা ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ফেলোশিপসহ পিএইচডি গবেষক। [email protected]