দেশ-বিদেশে ভিন্ন ভাষায় করোনায় একই আতঙ্ক

রোগী ফোন দিয়েছেন, আজকে জানতে পেরেছে গতকাল যার সঙ্গে কাজ করেছে, তার কোভিড-১৯ পজিটিভ। সে এখন পরীক্ষা করাতে চায়। কোথায় করাবে? একটু দুর্বল লাগা ছাড়া তার আর কোনো অভিযোগ নেই। খুব আপসেট, তার এক্সপোজারের হিস্ট্রি থাকলেও কাজ করে যেতে হবে। যদি টেস্ট নেগেটিভ হয়, তাহলেও কাজ চালিয়ে যেতে হবে। পরামর্শ দিয়ে সান্ত্বনা দিলাম, আমাদেরও একই অবস্থা, এক্সপোজারের হিস্ট্রি থাকলেও কাজ চালিয়ে যেতে হবে, যদি না হাই ফিভার এবং তেমন কাশি থাকে। সর্দি, কাশি, ৯৯ টেম্পারেচার হলেও কাজ করে যেতে হবে!

কেস ১

আতঙ্কিত পেশেন্ট...বলছে আমাকে একটা লেটার লিখে দাও, আমি যে বিল্ডিংয়ে কাজ করি, তার পাশের রাস্তা দিয়ে একটা পসিবল করোনা রোগী নিয়ে গেছে। আমার কাজে থাকা মনে হয় সেফ না! তাকে শান্ত করে বললাম, আমি তো তেমন করে লিখতে পারি না। তোমার যদি মনে হয়, কাজে ভয় আছে, তাহলে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলো। এটা তো তোমার বিল্ডিংয়েও না, পাশের রাস্তায়—কোনো সমস্যা নেই।

কেস ২

পেশেন্টের কোভিড ছিল মার্চে, ২ সপ্তাহ পরে দেখেছি। কাশি কম। কাজে যোগ দিয়েছে কিন্তু এখনো গলাব্যথা! আবার টেস্ট করাতে আগ্রহী। বললাম, কোথায় টেস্ট করতে পারবে। সেও ফ্রাস্ট্রেটেড...হেলথ কেয়ারে কাজ! তার লাংসের যদি ক্ষতি হয়? কেন, গলাব্যথা ঠিক হচ্ছে না! টেস্ট করে নেগেটিভ হলে দেখতে আসতে বললাম, ইএনটিও দেখাতে পারো বলে দিলাম। ফোনে তার কান্না–ধরা–গলা শুনতে পাই!

কেস ৩

পেশেন্ট এসেছে বলেছে লেটার দিতে যে ও কাজে ফিরতে পারবে না। বলতে হবে বয়সের জন্য, প্রেশারের জন্য হাই রিস্ক। সঙ্গে তার ক্রনিক ব্যথা, যার জন্য অলরেডি স্পেশালিস্ট দেখাচ্ছে! বলে দিলাম, আমি তাকে এমন কিছু দিতে পারব না। কারণ, মেডিকেলি তার কাজে যাবার কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই! তার চেকআপ করে দিতে পারি মাত্র এবং তাকে তার কাজে কথা বলে ঠিক করতে হবে, ও কাজে ফিরে যাবে কি না।

কেস ৪

পেশেন্ট ফোন দিয়েছে, প্রচণ্ড ব্যাকে ব্যথা কিন্তু সে কাজে যেতে চায়। তাকে যেন আমি ব্যথা কমানোর ব্যবস্থা করে দিই। সুন্দর করে বললাম, তার দুই সপ্তাহের আগে কাজে যাওয়ার দরকার নেই।

কেস ৫

পেশেন্ট প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছে। ম্যানেজ করার পর জিজ্ঞেস করে, আগামীকাল কাজে যেতে পারবে কি না। বলে দিলাম, সামনের সপ্তাহে সে বাসাতেই থাকবে। দরকার হলে বরং হসপিটালে যাবে! এরও কোভিড টেস্ট হসপিটালে করেনি! বাইরে থেকে করাতে হয়েছে।


কেস ৬

পেশেন্ট মায়ের সঙ্গে এসেছে কোভিড টেস্ট করাতে। কথা বলে মনে হলো ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন! জিজ্ঞেস করতেই স্বীকার করল, কাউন্সেল করে, নিয়মমতো ওষুধ খেতে বললাম!

কেস ৭-১০

সবার অ্যাংজাইটি বেড়ে গেছে, বাসায় কাজ করা, ছেলেমেয়ের দেখাশোনা, পড়াশোনা দেখানো, রান্নাবান্না করা, জামাই/বউ/বাচ্চাদের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা কাটানো ভীষণ স্ট্রেসফুল, সঙ্গে করোনার আতঙ্ক! জীবনটা বন্দী সঙ্গে সব বোতলকৃত সমস্যা। না চাইলেও হ্যান্ডেল করতে হবে—অ্যাংজাইটি আকাশছোঁয়া। তাদের কাউন্সেল করে, ম্যানেজ করতে হচ্ছে।


কেস ১১-১২

ছবিটি প্রতীকী। ছবি: রয়টার্স
ছবিটি প্রতীকী। ছবি: রয়টার্স

এরা আপাতত ভালো আছে। ভাবছে কিছুদিন আগে যে কাশিটা ছিল, সেটা কি কোভিড ছিল? এরা বাসাতেই সাবধানে থাকছে—অনেক কোমরবিডিটিস! অপটিমিস্টিক! আমরা অ্যান্টিবডি টেস্ট করা শুরু করেছি, এদের অ্যাংজাইটি কমাতেও টেস্ট করছি।

যেহেতু আমরা পার্শিয়ালি ওপেন এখন, সিনেমা, বোলিং এলি, নাপিতের দোকান, বিউটি সেলুন খুলেছে, সঙ্গে গ্রোসারি তো আছেই—সবার চোখে ভয়, কী হবে? কী হচ্ছে? বাইরে যাব? না, যাব না? কিছু বয়স্ক লোক ফ্লোরিডাতে আছে কয়েক মাস ধরে, তারা এদিকের অবস্থা বিবেচনা করে, আরও কয়েক সপ্তাহ দেখে তবেই ফিরবে। এখানে যারা আছে, তারাও দরকার ছাড়া কেউ বের হবে না।

ইকোনমি খারাপ হওয়া নিয়ে আমার প্রথম থেকেই চিন্তা ছিল। বিয়ের পর ৯-১১ এর ডিপ্রেশন দেখেছি! ছেলে হবার পরও ইকোনমির বিশাল ধাক্কা দেখেছি, যা ঠিক হতে ১০ বছর লেগেছে। ইকোনমি মাত্র ঠিক হতে শুরু করছিল, কিন্তু এবারেরটা মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে হয়তো! তার সঙ্গে লাখ লাখ পরিবার তাদের ভালোবাসার বা পরিবারের কর্মক্ষম একমাত্র ব্যক্তি হারিয়েছে। ইকোনমিক ডিপ্রেশনের সঙ্গে ভয়, মানুষ না পাগল হয়ে বন্দুক নিয়ে রাস্তায় নামে, ক্রাইম করা শুরু করে। দোকানপাট বন্ধ, ঘরে খাবার নেই, পরিবারের সহিংসতা, বাইরের বিরূপ পরিবেশ—জানি না কোথায় এর শেষ! তারপরও যখন ওদের বলি—সেফ থেকো। ওরা প্রত্যেকেই বলেন, ডা. আপনিও সেফ থাকেন, আপনি তো লাইনের প্রথমে।