সিঙ্গাপুরের সুপারহিরো অভিবাসী সুরক্ষায় যা করছেন

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। ছবি: সংগৃহীত
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই অভিবাসী কর্মী। অভিবাসীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সিঙ্গাপুর সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও অভিবাসীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।


করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অভিবাসীদের সুরক্ষায় জন্য সিঙ্গাপুর সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের গৃহীত সুন্দর পদক্ষেপে অভিবাসীদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে। অভিবাসীদের কাছে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং একজন সুপারহিরো। সুপারহিরোর গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলো:

১.
আন্তসংস্থা টাস্কফোর্স (আইটিএফ) সিঙ্গাপুরে ডরমিটরিতে বসবাসকারী অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে একটি বিস্তৃত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে আইটিএফ। তারা বিভিন্ন সরকারি এজেন্সি থেকে ২ হাজার ২০০ জন অফিসার নিয়োগ দিয়েছে। সরকারি এজেন্সিগুলো হলো জনশক্তি মন্ত্রণালয় (এমওএম), সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী, হোম দল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (এমওএইচ), বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন অথরিটি এবং যোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয়।

২.
তিন সপ্তাহ ধরে আইটিএফ আবাসিক অপারেটর ও বাসিন্দাদের সহায়তার জন্য ফরওয়ার্ড আশ্বাস এবং সাপোর্ট টিম মোতায়েন করেছে। ১৭০টির বেশি দ্রুত দল (ফাস্ট) মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সব সাধারণ ডরমিটরিতে (পিডিবি) অবস্থিত ৪৩টি দল এবং ফ্যাক্টরি কনভার্টেড ডরমিটরিগুলো, নির্মাণ অস্থায়ী কোয়ার্টার (সিটিকিউ) এবং ব্যক্তিগত আবাসিক প্রাঙ্গণে কভারেজ সরবরাহকারী ১২৭টি মোবাইল টিম রয়েছে।

৩.
ফাস্ট টিমের সদস্যরা খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং স্বাস্থ্যবিধি রক্ষণাবেক্ষণসহ তাঁদের চিকিৎসাসেবা এবং রেমিট্যান্সের প্রয়োজনীয়তার সুবিধার্থে শ্রমিকদের দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তাঁদের কাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করা। তাঁরা ২৪ ঘণ্টা ডরমিটরিতে টহল দিয়ে থাকেন।

৪.
আইটিএফ অভিবাসী কর্মীদের সঙ্গে উৎসব উদ্‌যাপন এবং বড় ইভেন্টগুলো পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, টাস্কফোর্স ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল তামিল ও বাংলা নববর্ষের সময় বিদেশি কর্মীদের মধ্যে উৎসবযুক্ত গুডিজ এবং ফাস্ট ফুড ট্রিট বিতরণের জন্য হিন্দু এন্ডোমেন্টস বোর্ডের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিল। মুসলিম বিদেশি কর্মীদের সঙ্গে রমজান মাসকে স্বাগত জানাতে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৫.
আইটিএফ ৪৩টি ডরমিটরিতে মেডিকেল সুবিধা প্রদান করেছে, যাতে অসুস্থ বা তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রদর্শনকারী শ্রমিকেরা যথাযথ এবং সময়োচিত চিকিৎসা পান। এ ছাড়া অভিবাসী কর্মীদের সহায়তার জন্য মাঠে মোতায়েন করা ৫০টির বেশি মেডিকেল কর্মীদের সমন্বয়ে ১২টি মোবাইল মেডিকেল টিম রয়েছে।

৬.
আইটিএফ শিগগিরই ডরমিটরিতে অবস্থানকারী কর্মীদের জন্য নিরাপদ পরিবহনসেবা সরবরাহ করবে, যাতে তাঁরা প্রয়োজন হলে ক্লিনিকে যেতে পারেন। শ্রমিকদের নিকটস্থ মেডিকেল সেন্টারে নেওয়ার জন্য জনশক্তি মন্ত্রণালয় দ্বারা চুক্তিবদ্ধ পরিবহন সরবরাহকারীদের একটি তালিকা ডরমিটরি অপারেটরদের দেওয়া হবে। এতে করোনায় সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।

৭.
আইটিএফ সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ডরমিটরিগুলোতে কর্মীদের জন্য যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ডরমিটরিগুলোতে অনসাইটে কমিউনিটি কেয়ার সুবিধা (সিসিএফ) স্থাপন করেছে।

৮.
করোনায় আক্রান্ত শ্রমিকেরা সুস্থ হওয়ার পরে যাতে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে আইটিএফ। সুস্থ হওয়া কিছু শ্রমিক তাঁদের ডরমিটরিতে ফিরে আসবেন। তবে তাঁদের রাখা হবে নির্দিষ্ট ব্লকে। সুস্থ হওয়া শ্রমিকেরা অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন এবং অন্যান্য ব্লকের বাসিন্দাদের সঙ্গে আন্তসংযোগ করা নিষিদ্ধ থাকবে। এই ব্যাপারে আইটিএফ ডরমিটরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করবে।

৯.
তাদের প্রয়োজনের বাইরেও, জনশক্তি মন্ত্রণালয় অভিবাসী কর্মীদের যথাসময়ে বেতন প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োগকারীদের সঙ্গে কাজ করছে এবং যেসব কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, তাঁদের নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে জনশক্তি মন্ত্রণালয় নিয়োগদাতাদের সঙ্গে কাজ করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সার্কিট ব্রেকার শুরুর আগে ৪ লাখ ৭২ হাজার শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল আর এখন ৫ লাখ ২১ হাজার শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে।

১০.
বিদ্যমান ডরমিটরির পাশাপাশি আইটিএফ শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত আবাসন সক্ষমতা তৈরি করছে। একটি স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ভাসমান জাহাজে আবাসন, ক্রুজ জাহাজের পাশাপাশি স্পোর্টস হলগুলোর মতো ব্যবস্থা রেখেছে।

১১.
কম আক্রান্ত ডরমিটরিগুলোতে তারা ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য সোয়াব টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দৈনিক ৮ হাজারের বেশি শ্রমিকের সোয়াব টেস্ট করা হয়। এ ছাড়া অভিবাসীদের আরও কার্যকর চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে চিকিৎসাপদ্ধতি দীর্ঘায়িত করবে।

১২.
বর্তমানে ৪৩টি ডরমিটরিতে খাবার দেওয়া হচ্ছে। দৈনিক ১০ মিলিয়নের ওপরে মিল সরবরাহ করা হয়। রোজাদারদের জন্য স্পেশাল খাবার দেওয়া হয়। ডরমিটরিতে খাবার পৌঁছানোর ৩০ মিনিটের মধ্যে অভিবাসীদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। খাবারের মান উন্নতি করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাপারে ডরমিটরির অপারেটর ও খাবার সরবাহকারীদের সঙ্গে কাজ করছে জনশক্তি মন্ত্রণালয়।

১৩.
ডরমিটরিতে অবস্থানকারী শ্রমিকেরা অনলাইন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। তাঁরা অনলাইনে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী অর্ডার করতে পারবেন।
এরই মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার প্যাকেট নিত্যপ্রয়োজনীয়সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে থার্মোমিটার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও অন্যান্য সামগ্রী।

ফ্রি ওয়াই–ফাই ও ২ লাখ ডেটা সিম (৫০ জিবি) বিতরণ করা হয়েছে। ৩ শতাধিক তামিল ও হিন্দি মুভি চ্যানেল ফ্রি দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।