মস্কোর জানালায় জীবনের রং মশাল

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

আমি বেশ কিছুদিন থেকে দেশের জন্য এক অদ্ভুত টান অনুভব করছি। বাংলাদেশ থেকে তিন মাস আগে মস্কোতে পড়তে এসেছি। এই অল্প সময়ে বিশ্ব সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হয়ে গেল। বর্তমানে পৃথিবীতে বড় ক্রান্তিকাল সময় চলছে। নিজের ভেতরেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ জন্য আমার পড়াশোনা কিংবা দৈনন্দিন জীবন থমকে গেছে।

রাশিয়াতে করোনা আক্রান্ত দুই লাখের বেশি, যা আমায় ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। এখানে এসেই রাশিয়ার জনজীবন সম্পর্কে বেশ ধারণা পেয়েছি। এ যেন পৃথিবীর এক অদ্ভুত শহর। এখানকার জীবন যেমন রঙিন, ঠিক তেমনি ধূসর। এ শহরের প্রত্যেকটি তরুণ মেতে ওঠেন আনন্দের প্যাভিলিয়নে, আর বৃদ্ধদের কাটে নিঃসঙ্গ জীবন।

মস্কো রঙিন আলোর ঝলমলে শহর। যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় ক্রেমলিন কিংবা রেডস্কয়ারের মতো বড় বড় পৃথিবী বিখ্যাত নিদর্শন। আজ সেই শহরে করোনার মেঘ জমেছে, ভিড় করেছে করোনাভাইরাস। তবুও আমি নিজের ভেতর সাহস রাখছি। কারণ পৃথিবীতে ভোর হওয়ার জন্যই অন্ধকার নেমে আসে। এই করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় যেতে হয় না, তাই নিজেকে নতুন করে চেনার চেষ্টা করছি। আমি একজন ২১ বছরের তরুণ, এ জন্য বুকের পাঁজরে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছি। যদি বেঁচে থাকি, তাহলে দেশে ঘুরে বেড়াব। অনেক বড় বড় মাইলোস্টোন ছুঁয়ে দেখতে চাই। আর আমার দেশটাকে বিশ্বের সঙ্গে অজস্রবার পরিচয় করে দিতে চাই। যেখানে বিশ্ব দেখবে নতুন সকাল, নতুন বাংলাদেশ।

এই করোনাভাইরাস বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমাদের জীবন কতটা অসহায় এবং গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিবেশী অথবা মজলুমের পাশে দাঁড়ানো কতটা প্রয়োজন, সবকিছুই যেন দৃশ্যমান। দেশের বাইরে এর আগেও থেকেছি, তবে এবারের মতো নয়। যেখানে উপলব্ধি করেছি, একজন নাগরিকের রাষ্ট্রের প্রতি কতটা দায়িত্ববান হতে হয়। পৃথিবীর এই সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তো মানুষের বৈশিষ্ট্য। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে একে অপরের সহযোগিতা করবে।

এই সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। করোনার কারণে লাখো মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিটি রাষ্ট্র। কারণ আমাদের মাধ্যমেই ঘটছে পৃথিবীর বিপর্যয়। যেমন বন উজাড়, পরিবেশদূষণ ও বন্য প্রাণী হত্যা অন্যতম। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা প্রয়োজন, হতে হবে আরও সচেতন। অন্যথায় পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য। তাই রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিকের পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা উচিত। পরিবেশ বাঁচলেই আমরা বাঁচব। তাই শপথ করেছি, পরিবেশ ও মানুষের জন্য সারা জীবন কাজ করব। আমি সৃষ্টি, তাই স্রষ্টায় ও সৃষ্টিতে ভালোবাসি।

*লেখক: শিক্ষার্থী, ন্যাশলাল রিসার্স ইউনিভার্সিটি হাইয়ার স্কুল অব ইকোনমিকস, মস্কো, রাশিয়া