টেস্ট ম্যাচ

করোনা টেস্ট ম্যাচ চলেছে পৃথিবীব্যাপী। সাধারণ টেস্ট ম্যাচের আয়ু পাঁচ দিন, অথচ এই ম্যাচের সময়সীমা, দিন, ক্ষণ, তিথির ভবিষ্যদ্বাণী ঘোষণা করতে পারা যায়নি। করোনার টেস্ট ম্যাচে চীনের উহানে ডে ওয়ানের সূচনা হয়েছিল। টেল এন্ডাররা শিকার হয়েছিলেন করোনার ওপেনিং ঝাঁঝালো স্পেলে। প্রৌঢ়দের শিকার করে উল্টো পথে পৃথিবী পরিক্রমা শুরু করেছিল।

আন্ডার প্রিপেয়ার পিচ থাকায়, সম্পূর্ণ অজানা ও অচেনা রোগের শিকার হয়ে করোনার থেকে বাউন্সার সামলানো দস্তুর হয়ে উঠবে স্বাভাবিকভাবেই। বাউন্সারের আধিক্য পোহাতে হয়েছে, বল ম্যাচ পিচে সুইং করেছে দিন গড়ানোর সঙ্গে, সব ইনসুইং, ইয়র্কার সামলাতে হিমশিম, গেল গেল রব।

করোনার ক্যাপটেন্সিতে পরিণত আচরণ দেখা গেছে, চরিত্র বদলে। প্রতিপক্ষ দলের ডিফেন্স লাইন ভঙ্গুর করে বডি লাইনের শ্যাডো গেম খেলে চলেছে করোনাভাইরাস। করোনা গরমে না ঠান্ডায় কুপোকাত বা কাবুর তথ্য অমিল সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত।

করোনা নেট প্র্যাকটিসের সময় দেয়নি, সংকেত না জানিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, সময় দেয়নি ঘর গোছানোর, তছনছ করেছে ইচ্ছেডানা মেলে। তাসের দেশের সমান একটার পর একটা দেশ আত্মসমর্পণ করেছে। প্রতিটি দেশ করোনার থাবায় জর্জড়িত। করোনার বিভীষিকা থেকে মুক্তি কবে, প্রহর গুণছে সব দেশ। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা, এই মহামারি নিপাত যাক।

করোনা বাউন্সারে ধরাশায়ী পৃথিবীর সমৃদ্ধশালী দেশ ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, মিস্টার ডিপেন্ডেবেল ও চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ ইতালি। পৃথিবীর তৎকালীন ধনী দেশ ব্রিটেন ও বর্তমানে ধনী দেশ আমেরিকা বাদ পড়েনি করোনার অ্যাসিড টেস্ট থেকে।

আমেরিকায় করোনায় বলি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে, এ পর্যন্ত ৯০ হাজার। তবু হুমকি, তর্জন–গর্জন আমেরিকা ছাড়েনি ক্লোরোকুইনান ওষুধ দেশে আনতে, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাকে হুমকি দিয়ে ছেড়েছেন চীনের পক্ষপাতিত্ব ছাড়তে, নয়ত ১৫% সাহায্যদান তাদের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। চীনকে দোষারোপের পালাও চলেছে আমেরিকার পক্ষ থেকে বারবার কোনো তথ্য ছাড়াই।

চীনের উহানে ভাইরাস গবেষণা নিয়ে আমেরিকার বিজ্ঞানী দল ২০১৮ সালে সতর্কবার্তা শুনিয়েছিল, আমেরিকার প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। আমেরিকা এই গবেষণায় নিজে একজন বিনিয়োগকারী।

অবলা বাদুড়ের দিকে করোনা ছড়ানোর তির তাক করা হচ্ছে, বাদুর আক্রমণের শিকার হচ্ছে মানুষের। বাদুড়ের বাসা জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। টেস্ট ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালাতে বাদুড়ের ওপর প্রতিহিংসা চালাব, এটা মানুষের মানবিকতার পরিচয় নয়, যতই আমরা বিধস্ত হই।

মহামারি থেকে নিষ্কৃতির উপায় ওষুধ, প্রচেষ্টা অব্যাহত, অপেক্ষা শুধু সময়ের, হাতে ওষুধ পৌঁছাতে লাগবে প্রায় এক বছর; মধ্যবর্তী সময়ে অবলম্বন সাবধানতা, মাস্ক, স্যানিটাইজার, সামাাজিক দূরত্ব পালন করে করোনার ভয়াবহতাকে দূরে রাখা। মহামারি করোনায় জনগণকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে লকডাউনের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।

লকডাউনের আশ্রয়ে করোনা ঠেকানো নৈব নৈব চ। বালির বাঁধে বন্যা ঠেকানো দুষ্কর, লকডাউনের ভুলভুলাইয়া ভুলে করোনা মোকাবিলা স্থায়ী সমাধান নয়, বরং টেস্ট ম্যাচের উপশম ওষুধে থাকলেও সংযম ও সচেতনতার ঘেরাটোপে আমাদের আবদ্ধ হতে হবে। টেস্ট ম্যাচের ক্রিয়াকর্ম অন্ত হতে লাগবে দুই বছর। হাত ধুয়ে ইতিহাসের পাতা উল্টে ফেললাম, অধ্যায় বদলে গেল, সহজ নয়, দীর্ঘ মেয়াদি চিন্তাভাবনা মাথায় রেখেই সুসংহত পরিকল্পনা করা দরকার।

লকডাউন ছুঁতো মাত্র। নিরাপত্তা লকডাউনে নিশ্চিত হবে না, নিরাপত্তা ঘেরাটোপ কিসে নিশ্চিত হয়, ভাবনা চালিত করতে হবে সেই দিকে, সুরা বা সোমরস বা মদিরার জোয়ারে গা ভাসালে বাঁচা ও বাঁচানো শক্ত।