পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে থাকার সুযোগ

দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই থাকি না কেন আমরা সবাই চাই পরিবারের সঙ্গে একত্রে থাকতে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক দিক বিবেচনা করে পরিবারের সদস্যদের একত্রে বসবাসের সুযোগ করে দিতে ডাবলিন চুক্তি–৩ অনুমোদন করেছে।

আপনি ডাবলিন চুক্তি–৩ আওতাভুক্ত কোনো দেশে অবৈধভাবে বসবাস করেন। আর আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি বৈধভাবে ডাবলিন চুক্তি–৩ আওতাভুক্ত দেশে বসবাস করে তাহলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বৈধভাবে সেই দেশে বসবাসের সুযোগ পাবেন আপনি।

অর্থাৎ আপনি যদি গ্রিস বা সাইপ্রাস বা পোল্যান্ডে, থাকেন আর আপনার পরিবারের সদস্য যদি ডাবলিন চুক্তি–৩–এ অন্তর্ভুক্ত ফিনল্যান্ড বা ফ্রান্স বা জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাস করেন তাহলে আপনিও আপনার পরিবারের সঙ্গে সেই দেশে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন।

ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশ ডাবলিন চুক্তি–৩–এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশ ডাবলিন চুক্তি–৩–এ স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতাভুক্ত দেশগুলো আপনার আশ্রয় আবেদন পর্যবেক্ষণ করবে এবং আপনার পারিবারিক পুনর্মিলনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ডাবলিন চুক্তি–৩ আওতাভুক্ত দেশ
অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, আইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবুর্গ, মাল্টা, নরওয়ে, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড।

কে কে আবেদন করতে পারবেন
আপনার পরিবারের কোনো সদস্য (রক্তসম্পর্কীয়) বৈধভাবে ডাবলিন চুক্তির আওতাভুক্ত দেশে বসবাস করলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। সরকার আপনার আবেদন পর্যবেক্ষণ করে সরকারি খরচে আপানার পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। আবেদনের নিয়মাবলি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
আপনি গ্রিসে অবস্থান করলে কীভাবে আবেদন করবেন, সেই বিষয়ে আলোচনা করছি। আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয় এবং আপনি যদি গ্রিসে একা বসবাস করেন তাহলে আপনি আপনার
১. বাবা ও মা
২. ভাই ও বোন
৩. চাচা, ফুপু, মামা এবং খালা,
৪. দাদা ও দাদির কাছে যাওয়ার আবেদন করতে পারবেন।

আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের ওপরে হয় তাহলে আপনি, আপনার
১. স্বামী অথবা স্ত্রী
২. সন্তান যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং অবিবাহিত
৩. জীবনসঙ্গী (শুধু কিছু দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)

এর সঙ্গে একত্রে বসবাসের আবেদন করতে পারবেন।

কীভাবে আবেদন করবেন

১.
আপনি যখন গ্রিসে আশ্রয়ের জন্য (অ্যাসাইলাম) আবেদন করবেন তখন প্রাক্‌- নিবন্ধন দিয়ে আবেদন শুরু হয়। প্রাক্‌-নিবন্ধনের সময় আপনি আপনার পরিবারের সদস্য ইউরোপের কোনো দেশে থাকে সে সম্পর্কে অ্যাসাইলাম অফিসে জানান এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
২. যখন পূর্ণ রেজিস্ট্রেশনের জন্য যাবেন তখন প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যাবেন।

কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন
আপনি যার কাছে যাওয়ার জন্য আবেদন করেবন সেই ব্যক্তির কাছ থেকে নিম্নোক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে:
১. পাসপোর্টের প্রথম পাতার ফটোকপি
২. বৈধতার কাগজপত্র অর্থাৎ রেসিডেন্স পারমিট
৩. কাজের চুক্তিপত্র (যেখানে কাজ করে সেখান থেকে চুক্তিপত্র নিতে হবে। আর যারা ব্যবসা করে তাদের ব্যবসায়িক কাগজপত্র)
৪. ট্যাক্সের কাগজপত্র (প্রতিবছর সরকারকে যে ট্যাক্স দেন (সর্বশেষ) ট্যাক্সের কাগজ)
৫. ঘরের চুক্তিপত্র। (ঘর ওই ব্যক্তির নামে থাকতে হবে)
৬. মেডিকেল ইনস্যুরেন্স কার্ডের ফটোকপি
৭. পারিবারিক সনদ (যেটা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি করপোরেশন থেকে সংগ্রহ করতে হবে)।
৮. যার কাছে যেতে চান ওই ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি (letter of consent) যেখানে ওই ব্যক্তির নাম, ঠিকানা এবং আপনার সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক উল্লেখ থাকবে এবং তিনি আপনাকে তার সঙ্গে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করবেন।
আপনার কী কী কাগজ লাগবে
আপনার নিজস্ব তেমন কোন কাগজপত্র লাগবে না আবেদনের সময় শুধু পারিবারিক সনদ (যেটা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি করপোরেশন থেকে সংগ্রহ করতে হবে) জমা দিতে হবে।

আবেদন–পরবর্তী পদক্ষেপ
১. আপনার আবেদন গ্রিসের অ্যাসাইলাম অফিস পর্যবেক্ষণ করে তিন মাসের মধ্যে আপনার পরিবারের সদস্য যে দেশে থাকে অর্থাৎ যে দেশে আপনি যেতে চান সেই দেশের অ্যাসাইলাম অফিসে পাঠাবে।
২. সে দেশের অ্যাসাইলাম অফিস আপনার পরিবারের সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি চিটিতে স্বাক্ষর করতে বলবে। দুই মাসের মধ্যে তাকে ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করতে হবে এবং স্বাক্ষর করার পর সে দেশের অ্যাসাইলাম অফিস গ্রিসের অ্যাসাইলাম অফিসে পাঠাবে।
৩. স্বাক্ষরিত চিঠি গ্রিসে আসার পর গ্রিস সরকার নিজস্ব খরচে ছয় মাসের মধ্যে আপনাকে আপনার পরিবারের কাছে পাঠাবে।
৪. আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গে যোগদানের পর সে দেশের অ্যাসাইলাম অফিস আপনাকে সেই দেশে বৈধভাবে থাকার অনুমতি প্রদান করবে।
প্রতিবেদনটি পড়ে আপনার কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে আপনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আপনি যেই দেশে থাকেন সেই দেশের কোনো এনজিওতে গিয়ে (যারা রিফিউজি নিয়ে কাজ করে) অথবা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে পারেন।

* লেখক: ইউএনএইচসিআর, গ্রিস