প্রিয় হোস্টেলের স্মৃতিরা বারবার ফিরে আসে

বাসার পাশের রাস্তা। ছবি: লেখক
বাসার পাশের রাস্তা। ছবি: লেখক

জিআরই-র জন্য পড়ছিলাম, রাত তখন প্রায় দুইটা বাজে। আজকে পূর্ণচন্দ্র রাত আর সঙ্গে সুন্দর হাওয়া বইছে। পাশের বাসা থেকে ভেসে আসছে টুংটাং গিটারের শব্দ। বাসার সামনের লনে বসে সুরেলা ইংরেজি গান একটার পর একটা গেয়ে চলেছে সবাই। সেই সঙ্গে চলছে আড্ডা, হাসি।

আমার প্রতিবেশীদের কথা বলছি। স্প্রিং সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা আজকেই শেষ হয়েছে। সামারের ছুটিতে যাওয়ার আগে তাই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেছেন সবাই। আমার বাসা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের কাছে। প্রতিবেশীরা প্রায় সবাই আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী আর সরোরিটি হাউসের (যেটায় শুধু মেয়েশিক্ষার্থীরা থাকেন) অধিবাসী। তাঁদের সবার আড্ডা, হাসি, কথা, গান আমাকে বারবার হোস্টেলের কথা মনে করিয়ে দেয়। পড়া ছেড়ে মনটা ফিরে যায় কাটিয়ে আসা হোস্টেল জীবনে।

মেডিকেলে পড়ায় পরীক্ষা ছিল প্রায় নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু তার মধ্যেও এত সুন্দর সময় কেটেছে হোস্টেলে, যার কৃতিত্ব সবই আমার বান্ধবীদের প্রাপ্য। হোস্টেলের ছাদে বসে রাতজাগা আড্ডা, হাসি, গানের আসর; একসঙ্গে মুভি দেখা, চাঁদা তুলে পুরান ঢাকার বিরিয়ানি এনে সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া, ওজন কমানোর আশায় হঠাৎ হাঁটাহাঁটি শুরু করা, আবার হঠাৎ করেই পরীক্ষার চাপে তা বন্ধ হয়ে যাওয়া, প্রায় বিকেলেই জটলা হয়ে একসঙ্গে চা, চটপটি, ফুচকা ভক্ষণ, আরও অনেক কিছু।

আলাবামা ইউনিভার্সিটির শেলবি হল। ছবি: লেখক
আলাবামা ইউনিভার্সিটির শেলবি হল। ছবি: লেখক

প্রায় বিকেলেই আমরা যখন নেইবারহুডে হাঁটতে বের হই, তখন দেখা হয়ে যায় এই ছোট্ট মেয়েগুলোর সঙ্গে। কখনো ক্যাম্পাস থেকে দলবেঁধে ফেরে, কখনোবা বারান্দায় বসে আড্ডা দিতে থাকে। কখনো ছুটির দিনে বা পরীক্ষার আগে কারও কারও মা-বাবা, ভাইবোন সবাই দেখা করতে আসে, বাসার রান্না খাবার নিয়ে আসে ঠিক যেমন আমার বাবা কয়েক মাস পরপর হোস্টেলে আমাকে দেখতে আসত মায়ের রান্না খাবার, নাড়ু আর নিমকি নিয়ে। স্মৃতিফেরানো বিকেল আর সন্ধ্যাগুলোয় নেইবারহুড আর ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করি আমি। সেই হোস্টেল জীবনে আর ফেরা যাবে না, তা মেনে নিয়েছি। তাই সেসব দিনের কথা মনে পড়লে মনটা যেমন ভালো লাগায় ভরে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে চোখের কোণটাও ভিজে ওঠে।

একসময় যাদের সঙ্গে প্রতিটা দিন কাটাতাম, সেই বান্ধবীদের কত দিন দেখি না। ব্যস্ততার জন্য কথাও হয় না সবার সঙ্গে। যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক প্রিয় মুখগুলো।

*লেখক: চিকিৎসক