পর্তুগাল কোভিড ১৯ কীভাবে মোকাবিলা করল

ইউরোপের শেষ সীমায় আটলান্টিক সাগরপাড়ে অবস্থিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের দেশ পর্তুগাল। করোনাভাইরাস বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ইউরোপের সফল কাহিনির মধ্যে একটি পর্তুগাল। দেশটির ক্ষেত্রে খুব কম পরিমাণ আক্রান্ত ছিল, বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তুলনা করলে অবাক করা বিষয় দেখা যায় যে এর জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশ ৬৫ বয়সের ঊর্ধ্বে। তুলনামূলক বিচারে ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যা সংখ্যা তুলনামূলক কম।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে পর্তুগাল কীভাবে ভিন্ন উপায়ে কোভিড–১৯ নিয়ন্ত্রণ করেছে! প্রতিবেশী দেশের তুলনায় উচ্চ মৃত্যুহার রোধই বা কীভাবে করতে পেরেছে?

পর্তুগালের জাতীয় কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের একজন ডাক্তার ফিলীপ ফ্রয়েছ বলেছেন, ‘পর্তুগালের হাতে সময় ছিল প্রস্তুতি নেয়ার, কেননা ভাইরাসটি ইতালি ও স্পেনের পরে পর্তুগালে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। আমাদের এমন একটি কৌশল বাস্তবায়নের জন্য মূল্যবান সময় ছিল, যা আমাদের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করার সুযোগ করে দিয়েছে।’

ডাক্তার ফিলীপ ফ্রয়েছ বলেন, ‘আমরা ইতালি ও স্পেনের তুলনায় অনেক পূর্বেই জরুরি অবস্থা জারি করেছি। জনগণকে অবরুদ্ধ করতে পেরেছি—এ ব্যবস্থাগুলো আমাদের আরও বেশি সহায়তা করেছে।’

১৮ মার্চে পর্তুগালে যখন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়, তখন দেশটিতে কেবলমাত্র ৬৪২ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু ২ জনের। পর্তুগাল দ্রুত স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল এবং ঘরে যাঁরা আইসোলেশন ছিলেন, তাঁদের খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যা ৩৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল, তবে রোগীর চাহিদা কখনোই পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছায়নি।

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাধ্যতামূলক লকডাউন না থাকলেও দেশটির নাগরিকেরা দায়িত্ব ও শৃঙ্খলাবোধের উপর নির্ভর করেছে এবং বেশির ভাগ জনগণ বাড়িতে অবস্থান করেছে। সে কারণেই ৩ মে থেকে প্রথম ধাপে ছোট ছোট দোকান, সেলুন, বিউটি পার্লার, বইয়ের দোকান চালু করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মে থেকে নার্সারি স্কুল, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুল, রেস্তোরাঁ, কফিশপ, বেকারি, রাস্তার পাশের সর্বোচ্চ ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের ব্যবসা কেন্দ্র, প্রদর্শনী মিউজিয়াম, পার্ক ইত্যাদি খুলে দেওয়া হয়েছে।
সরকার বলছে, পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলে ধর্মীয় উপসনালয়, ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলা শুরু করার জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হবে। সরকার সতর্ক করে দিয়েছেন যে ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব এবং মুখে মাস্ক পরিধান করা স্বাভাবিক নিয়মের অংশ হিসেবে থাকবে।

লকডাউন তুলে দেওয়ার ফলে যদি দ্বিতীয়বারের মতো কোভিড-১৯ আঘাত হানে এবং খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টোনিও কস্তা বলেছেন, পুনরায় জরুরি অবস্থা জারি করতে তিনি দ্বিধা করবেন না।

বর্তমানে মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্তুগাল সরকার প্রতি ১৫ দিন পরপর অতীব গুরুত্বের সাথে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পুনঃবিবেচনা করছে। ২০০৮ সালের মতো অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সজাগ দৃষ্টি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

২০ মে পর্যন্ত দেশটিতে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ হাজার ৬৬০ জন। মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ২৬৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৪৫২ জন।