করোনাকালের চিঠি

প্রিয় নাশ,

হাঁপিয়ে উঠেছি। পৃথিবীর এখন বড়ই অসুখ। করোনা নামক ভাইরাসটি আসার পর থেকে পৃথিবীর মানুষদের হাসির গল্প কোথায় যেন লুকিয়ে গেছে। দুঃখের গল্পে ভারী হয়ে উঠেছে খবরের শিরোনামের আকাশ–বাতাস। ঘরে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না।
এখন কারও সঙ্গে দেখা হলে, কথা হলে বুক ফুলিয়ে খিলখিল করে কেউ হাসে না। অতি প্রিয়জনেরা এখন একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতে বলে না। কেমন জানি একে অপরের বিদ্যমান দূরত্ব এখন শারীরিক, সামাজিক থেকে মানসিক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
আজকাল মনের ভেতর–বাইরে ভুতুড়ে স্বভাব। দুঃখের কথা, অনাহারীর কথা, হারানোর ভয়, শোকগাথা—সবই যেন নিত্যসঙ্গী। পৃথিবীর কেউ এখন সুখে নেই, কারও মন ভালো নেই, কেউ শান্তিতে নেই।
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে গালগল্প লিখে পড়ে কবিরা সময় কাটান, শিল্পীরা মঞ্চ ছেড়ে ঘরে বসে সুর তোলে গান গান। প্রকৃতির সঙ্গে আগের মতো ভাব জমে না, কেমন জানি গম্ভীর থেকে গুরুগম্ভীর ছায়ালোকে অকৃত্রিম বসবাস।
জানো, মেঠোপথ বেয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে বাউলেরা আসে না। একবিংশ শতাব্দীতে প্রতিশোধ নিতে প্রকৃতির প্রাদুর্ভাব খামখেয়ালিপরায়ণ। ঘরবন্দী সৃজনশীল মন অলসের চাপে বেকারগ্রস্ত।
মুক্তির উপায় চাই, এভাবে আড়ালে থাকতে একদম চাই না। আমাকে মুক্তি দাও, আমাদের মুক্তি দাও। মুক্ত বাতাসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পদ্মপ্রেমের ভালোবাসা চাই।
চলে যাও মহামারি, তোমার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। যাওয়ার আগে এই পৃথিবীর মানুষদের বিবেকের দৃষ্টিতে চোখ রাখো। পাল্টে গেছে পৃথিবীর মানুষের মন, বদলে যাবে বসবাস।
মানুষ আর অমানুষ ভাবছে তুমি চলে যাবে, দূর থেকে দূরে বহুদূরে। আমিও চাই তুমি একদম ফিরবে না আর কোনো দিন মহামারি হয়ে। আগাছা–পরগাছা সঙ্গে নিয়ে দূরে চলে যাও, দূরে বহুদূরে। ফিরবে না আর কোনো দিন, দেখতে চাই না আর কোনো দিন।
এবারের যাত্রা শুভ হোক, ভালো থাকুক এ পৃথিবীর মানুষ, দূর হোক সব রোগশোক।
শোকাহত,
আতঙ্কিত এই মন
[email protected]