ফাইযানের সঙ্গে বিদ্রোহী রজব আলীর গল্প

করোনা–কালের আগে ডিজনি ল্যান্ডে ফাইযানের টারজান হওয়ার চেষ্টা।
করোনা–কালের আগে ডিজনি ল্যান্ডে ফাইযানের টারজান হওয়ার চেষ্টা।

ফাইযান আমার ছেলে, আত্মজ। করোনা–কালের ঘরবন্দী জীবনে ফাইযানের সঙ্গে টুকটাক আলাপ মাঝেমধ্যে ভালোই জমে ওঠে। আলাপের ডালপালা গজিয়ে কখনো ইতিহাস, খেলাধুলার খবর, সমসাময়িক রাজনীতি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডায়ালগ অব দ্য ডে অথবা প্রাইমারিতে বার্নি স্যান্ডারসের হেরে যাওয়া কিংবা আমার ছেলেবেলার গল্প হয়ে শিকড়ের সন্ধানে খুঁজে ফেরে। অবশ্য এখন ওর মনোযোগ কী করে বেশিক্ষণ অনলাইনে কাজিনদের সঙ্গে চ্যাট আর ভিডিও গেম খেলা যায়। তাই আলাপ হলে, তা প্রধানত ভিডিও গেম নিয়ে…

জানো, আমি এখন ক্লাস রয়েলের (একটি ভিডিও গেম) এরিনা-১১–তে।

তাই নাকি! তাহলে তো তুমি খুব তাড়াতাড়ি অনেক ওপরের লেভেলে…

হ্যাঁ, আমি আর তাসওয়ার এরিনা-১১–তে আর তাহজিব এরিনা-১২-এ

ওখানে তোমার সবচেয়ে পাওয়ারফুল সোলজার কে?

মেগা নাইট, ও লাফিয়ে লাফিয়ে স্পেয়ারস দিয়ে সব ভেঙ্গে ফেলে...খুব স্ট্রং

ও লাফিয়ে লাফিয়ে কেন ভাঙে? অপজিশনের সোলজারদের থেকে সেফ থাকার স্ট্র্যাটেজি?

হ্যাঁ...মনে হয়...তবে রেম রাইডার অপজিশনের সোলজারদের সাথে মারামারি করে...

আচ্ছা...রেম রাইডার তো তাহলে অনেক স্ট্রং। ও কি ওয়ান অন ওয়ান ফাইট করে?

না…ও হঠাত করে এসে ধুম ধুম পিটিয়ে পালিয়ে যায়...

তাই নাকি? খুব ইন্টারেস্টিং...আমরা ও তো পাকিস্তানি ও ব্রিটিশদের এভাবে ধুম ধুম পিটিয়ে পালিয়ে

যেতাম…মানে আমাদের স্বাধীনতার জন্য...বাংলাদেশি ফ্রিডম ফাইটাররা...

হা…হা…হা…এভাবে মারামারিতে ফান আছে...

এ রকম ফাইটিং নিয়ে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসে অনেক সত্যি ঘটনা আছে…

পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধের কথা আমি জানি…, কিন্তু ব্রিটিশদের নিয়ে কোনো ঘটনা তো তুমি বলোনি…

প্রসঙ্গ আসেনি তো তাই হয়তো বলা হয়নি…ব্রিটিশদের ধুম ধুম পিটিয়ে ফেমাস হওয়া মাস্টার দা সূর্যসেন কিন্তু আমাদের রাউজানের…?

তাই নাকি? আমাদের দাদুর বাড়ির ওখানে?

করোনা–কালের শুরুতে, মার্চ মাসের বন্দিজীবনে একপশলা স্নোতে আনন্দে মগ্ন ফাইযান।
করোনা–কালের শুরুতে, মার্চ মাসের বন্দিজীবনে একপশলা স্নোতে আনন্দে মগ্ন ফাইযান।

হ্যাঁ…পরের বার দেশে গেলে আমি তোমাকে মাস্টার দা সূর্যসেনের গ্রামে নিয়ে যাব…চট্টগ্রামে অনেক বিপ্লবী ছিলেন, যাঁরা ব্রিটিশদের পিটিয়েছিল স্বাধীনতার জন্য...প্রীতিলতা, হাবিলদার রজব আলী...আরও অনেকে...

ব্রিটিশরা ওদের সাথে পারত না?

ঠিক তা না। ব্রিটিশরা ভয়ে থাকত। যাঁদের কথা বললাম, তাঁদের অনেককে ওরা মেরে ফেলেছিল, কিন্তু

শেষ পর্যন্ত পারেনি...?

তাঁরা না পারলেও তাঁদের আমরা শ্রদ্ধা করি, মনে রাখি, ভালোবাসি এবং তাঁদের গল্প শুনে প্রাউড ফিল

করি...জুবাদের বাসার সামনে যে মাঠটা আছে, যেখানে আমি দৌড়াতাম...ওই মাঠের নাম প্যারেড মাঠ।

হ্যাঁ...ওটা চট্টগ্রাম কলেজের মাঠ না?

হ্যাঁ, ওই মাঠের একটা গল্প আছে। এই মাঠের ভালো নাম হচ্ছে হাবিলদার রজব আলী ময়দান...গল্পটা শুনতে চাও?

হ্যাঁ, অনেক ইন্টারেস্টিং হবে মনে হচ্ছে...বল

রজব আলী ছিলেন ব্রিটিশ আর্মির সোলজার। ১৮৫৭ সাল। তিনি সব বাঙালি সোলজারদের একত্র

করে, ব্রিটিশদের অস্ত্র, গুলিটুলি সব কেড়ে নিয়ে, পিটিয়ে ওদের চট্টগ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

হা...হা...হা...তা–ই?

হ্যাঁ...আর ব্রিটিশরা মারের ভয়ে জাহাজে উঠে সাগরের মাঝখানে গিয়ে শেল্টার নিয়েছিল। ব্রিটিশদের পেটানোর পর হাবিলদার রজব আলী তাঁর সব সোলজার নিয়ে ওই মাঠে প্যারেড করেছিলেন, তাই এর নাম রজব আলীর প্যারেড মাঠ।

তখন কি বাংলাদেশ ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে গেল?

না, তখন চট্টগ্রাম মাত্র এক দিনের জন্য স্বাধীন ছিল। ব্রিটিশদের সাহায্যে ঢাকা ও আরও অন্য জায়গা থেকে আরও অনেক সোলজারের যখন এল, তখন রজব আলী তাঁর বাহিনী নিয়ে পাহাড়ের দিকে ইন্ডিয়া চলে গেলেন।

তারপর কী হলো?

তার পরেরটা অবশ্য খুব কষ্ট ও দুঃখের। সব মানুষ তো আর রজব আলীর মতো সাহসী ছিল না, তাই তারা ভয়ে কেউ রজব আলীদের সাহায্য করল না। তাঁদের অনেকে না খেয়ে মারা গেলেন, কাউকে ব্রিটিশরা ধরে মেরে ফেলল...?

কিন্তু দেশের জন্য রজব আলীদের জীবন দেওয়া পরবর্তী মানুষদের অনুপ্রাণিত করেছিল বলেই আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম...রজব আলীকে নিয়ে অনেক গান, কবিতা ও লেখা হয়েছে, একটি গান খুব

পপুলার...শুনবে?

হ্যাঁ

গানটির লিরিক হচ্ছে এ রকম—

‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে

কত প্রাণ হলো বলিদান

লেখা আছে অশ্রু জলে...’। আমি ইউটিউব থেকে বের করে শোনাব...।