বিলেতের প্রকৃতিতে রঙের মেলা

ঝরা পাতার মেলা। কার্ডিফের একটি পার্ক। ছবি: লেখক
ঝরা পাতার মেলা। কার্ডিফের একটি পার্ক। ছবি: লেখক

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যে আসার পর থেকে প্রকৃতির আপন খেয়ালের আবর্তনকে মানসচক্ষে দেখি। যখনই প্রকৃতির কাছে যাই, তখনই আমার শ্যামল বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে অবচেতনভাবেই একটা তুলনা চলে আসে। এখানে টুকটাক ঘোরাঘুরির সুবাদে এবং প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে দেখার সুবাদে প্রথমে যে কথাটি মনে আসে, সেটি হলো দুই দেশের প্রকৃতির মাঝে এক অদ্ভুত বৈপরীত্য বিদ্যমান।

ইংল্যান্ডের কয়েকটা শহর ঘোরার সুবাদে এবং বার্মিংহাম শহরের অলিগলি ঘুরে আমি ফল গাছের সন্ধান খুব কমই পেয়েছি। বার্মিংহামে তন্ন তন্ন করে ফল গাছ খুঁজতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন ট্রেন স্টেশনের পাশে একটা আপেলগাছের সন্ধান পাই। এখন গ্রীষ্মকাল চলছে, অথচ ফলের গাছের দেখা পাওয়াই মুশকিল।

আমার শ্যামল বাংলার প্রকৃতিতে চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস। আম-জাম-কাঁঠাল-লিচু-জামরুল-খেজুরসহ নানা প্রকারের ফলের সমারোহ এখন বাংলার প্রকৃতিজুড়ে। এক আমের মাঝে কত রকমের বৈচিত্র্য—ভাবা যায়! হিমসাগর-ল্যাংড়া- গোপালভোগ-ক্ষীরশাপাতি-আম্রপালি-মল্লিকা-হাঁড়িভাঙ্গাসহ হাজারো প্রজাতির আমের দেখা মেলে। আকারে, স্বাদে-গন্ধে কাঁঠালের মাঝেও আছে হাজারো বৈচিত্র্য। এই গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের মাঝে আমাদের প্রকৃতি যখন ফলের পসরা সাজিয়ে মিটিমিটি হাসছে, অন্যদিকে আমাদের থেকে সাত সমুদ্র তেরো নদীর এপারে ইংল্যান্ডের প্রকৃতি সবুজের সমারোহ নিয়ে হাজির হয়েছে।

সেই নভেম্বর মাস থেকে ইংল্যান্ডের প্রকৃতির বড়সড় পরিবর্তন চোখে পড়তে থাকে। শীতের আগমনী ধ্বনির সঙ্গে প্রকৃতি আপন মর্জিতে তার রূপ-রং বদলাতে থাকে। এখানে আলাদা বর্ষাকাল নেই বললেই চলে, আগস্ট থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা চলে। শীতের কয়েকটা মাস ইংল্যান্ডের আকাশ সারা দিন মুখ ভার করে থাকে। মাঝেমধ্যে ভারী বৃষ্টির দেখা মেলে, তবে সেই বৃষ্টি ঠিক আমাদের মতো নয়। শীতের রুক্ষ প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দমকা হাওয়া তার উপস্থিতি জানান দিতে থাকে, এর সঙ্গে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির হিমেল পরশ, কখনো আচমকা ঝরে পড়া ঝরঝর বাদলধারা মানুষের জীবনকে কেমন যেন বদলে দিতে চায়। তবে মানুষ অভ্যাসের দাস, এখানকার মানুষের কাছে এই ঝিরঝিরে বৃষ্টি তেমন কোনো সমসাই করে না। দিব্যি ছাতা ছাড়াই, বৃষ্টির মধ্যে জ্যাকেট পরে হাঁটতে থাকে। অনেকের হাতে আবার সব সময় ছাতার দেখা মেলে। তবে এই সময় বিবিসি ওয়েদার রিপোর্ট বড্ড উপকারী এক প্রপঞ্চ হয়ে হাজির হয়। এত নিখুঁতভাবে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয় যে আপনি ইচ্ছে করলে স্বল্প সময়ের জন্য অনেক সময় বৃষ্টির আঁচ এড়িয়ে বাইরে থেকে আপনার কাজ সেরে আসতে পারবেন। নভেম্বর হলো পাতা ঝরার মাস। অক্টোবরের শেষের দিক থেকে গাছের পাতার রঙে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। গাছের সবুজ পাতা আচমকা লালচে আভায় সুশোভিত হয়ে ওঠে।

সাদা চেরির মনমাতানো রূপ। ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম। ছবি: লেখক
সাদা চেরির মনমাতানো রূপ। ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম। ছবি: লেখক

ম্যাপলগাছের পরিবর্তনটা সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিসুখকর। একটু তীব্র বাতাসে ম্যাপল পাতা ঝরে পড়া, বাতাসে উড়তে থাকা, সবুজ ঘাসের ওপর ম্যাপল পাতার অলস শুয়ে থাকার দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। ডিসেম্বর আসার আগেই ইংল্যান্ডের প্রায় সব গাছ তার পাতা হারিয়ে পড়ে পাওয়া সৌন্দর্য বিসর্জন দিয়ে নিতান্তই দীনহীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। এক মাসের মধ্যে প্রকৃতির এই অভাবনীয় পরিবর্তন কেমন যেন মন খারাপ করে দেয়। নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত প্রকৃতিকে দেখলে বড্ড মায়া লাগে। কোথাও কোনো সবুজের আবাহন নেই, কোমলতার পরশ নেই, কমনীয়তার পেলব নেই, এ যেন এক রুক্ষ ধূসর প্রান্তর।

ইংল্যান্ড মূলত নগরকেন্দ্রিক দেশ, তবে এদের নগর সভ্যতায় এরা প্রকৃতিকে বড্ড আপন করে নিয়েছে। শহরের মূল বাণিজ্যিক এলাকাকে সিটি সেন্টার বলে। সেখানে যত ব্যবসাপাতি, বিকিকিনির মূল আয়োজন চলে, ফলে মূল সিটি সেন্টারে সবুজ প্রকৃতি কিছুটা ম্লান হলেও আবাসিক এলাকাগুলো দেখলে প্রায় গ্রামের মতো মনে হয়। পুরো রাস্তার দুপাশ জুড়ে অবাধ গাছের মিতালি, বাড়ির সামনের অংশে ছোট ছোট ফুলের গাছের সমারোহ আর প্রতিটি বাড়ির পেছনে একটা উঠোন থাকে। এই উঠোনের চারপাশ জুড়ে বাহারি প্রজাতির গাছের সজীব উপস্থিতি মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির এক অসাধারণ মেলবন্ধন তৈরি করে।

ইংল্যান্ডের প্রকৃতির সংরক্ষণের বিষয় খুবই তারিফ করার মতো করা। প্রতিটা শহরের প্রতি কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে চমৎকার পার্কের দেখা মেলে। এই পার্কগুলোতে নানা প্রজাতির গাছগুলো খুবই পরিকল্পিতভাবে লাগানো, যেটি পার্কের সৌন্দর্যের নান্দনিকতায় এক অন্য মাত্রা যোগ করে। পার্কগুলোকে পাখির অভয়ারণ্য বললে খুব একটা ভুল হবে না। অনেক বড় পার্ক এবং ক্যানেলগুলোতে নানা জাতের হাঁসের দেখা মেলে, যেগুলো যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান এবং ওরা ওদের রাজ্যে নিজেদের মতো করে ঘুরে বেড়ায়, কেউ ওদের সঙ্গে ঝামেলা করে না, বরং পশুপাখির অনেক যত্ন নেয়। আমার বাসার পাশেই বার্মিংহাম শহরের সবচেয়ে বড় পার্ক ক্যানন হিল। নানা প্রজাতির হাঁসের দেখা মেলে, যেগুলোকে মানুষ পরম মমতায় সংরক্ষণ করে বলেই টিকে আছে। পার্কের হাঁসগুলো দেখি আর ভাবি, শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগ করে হয়তো এই হাঁসগুলোকে সংরক্ষণ করা যেত না, যদি না এদের জনসাধারণের মাঝে পশুপাখিকে ভালোবাসতে পারার মতো সামাজিক মূল্যবোধ গ্রথিত করে দিতে পারত।

আমি একদিন আমার বাসা থেকে ক্যানেলের ধার দিয়ে হেঁটে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে দেখি একদল হাঁস সারিবদ্ধভাবে রাস্তা পার হচ্ছে, তাই দেখে হাঁসের সারির দুপাশে তিনজন সাইকেল আরোহী চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেলেন। হাঁসগুলো রাস্তা পার হতেই তাঁরা হাসিমুখে বিদায় নিল। ইংল্যান্ডের স্থাপনা, রাস্তা, পার্কের যে বিষয়টি আমাকে আকৃষ্ট করেছে, সেটি হলো এরা খুব সহজে ল্যান্ডস্কেপ নষ্ট করে না। যেখানে যেমন ভূমিবিন্যাস পায়, সেখানকার ভূমিবিন্যাস ঠিক সেভাবেই সংরক্ষণ করে, ফলে এই উঁচু–নিচু ভূমিবিনাসের মাঝে এক অন্য রকম সৌন্দর্যের দেখা মেলে।

যেকোনো শুরুর একটা শেষ আছে, আবার শেষেরও শুরু আছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে প্রকৃতির পালে নতুন হাওয়া এসে গন্ধ ছড়াতে শুরু করে, শেষের শুরুর আগমনী বার্তা গাছের শাখায় কুঁড়ি হয়ে জানান দিতে থাকে। মার্চের প্রথম দিকে প্রতিটি গাছের দিকে তাকালে মনে হতে থাকে, প্রতিটি গাছ যেন ফুলে ফুলে ভরে উঠবে। প্রতিটা কুঁড়ি দেখে মনে হয় ফুলের কুঁড়ি, আমার প্রথম কুঁড়ি দেখার অভিজ্ঞতায় ভেবেছিলাম ইংল্যান্ডের সব গাছে বোধ হয় ফুলের দেখা মেলে। ওদিকে সবুজ ঘাসের মাঝে যেন নানা রঙের ফুল উঁকি দিয়ে প্রকৃতিতে তার অবস্থান জানান দিতে থাকে। ওরা যেন চিৎকার করে বলতে চায়, ওহে প্রকৃতিপ্রেমী তুমি শুধু ওপরের দিকে তাকিয়ো না, আমরাও সবুজের মাঝে বাহারি রঙের পসরা সাজিয়ে তোমাদের মনোরঞ্জনে হাজির হতে চলেছি। মার্চ আসতেই চারদিকে ড্যাফোডিলের হলুদ এবং সাদা সাম্রাজ্যের একক আধিপত্য চোখে পড়ে।

বাহারি রঙের ফুল। বার্মিংহাম। ছবি: লেখক
বাহারি রঙের ফুল। বার্মিংহাম। ছবি: লেখক

একটু মাথা নোয়ানো হলুদ আর সাদা ড্যাফোডিলের সলজ্জ আনত সৌন্দর্য যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীকে বিমোহিত করবে। হালকা বাতাসে যখন ড্যাফোডিলের শীর্ষ দেশে আপন মনে হাওয়ার তালে দুলতে থাকে, তখন মনে হয় প্রকৃতি তার আপন বীণার ঝংকারে বেজে চলেছে অবিরত। আর তাই উপত্যকা, শহরের প্রান্তজুড়ে ড্যাফোডিলের এই আপাতনিরীহ সৌন্দর্যে অবগাহন করে প্রকৃতির রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ লিখেছিলেন,
I wandered lonely as a cloud
That floats on high o'er vales and hills,
When all at once I saw a crowd,
A host, of golden daffodils;
Beside the lake, beneath the trees,
Fluttering and dancing in the breeze.
……………………………………………………।
For oft, when on my couch I lie
In vacant or in pensive mood,
They flash upon that inward eye
Which is the bliss of solitude;
And then my heart with pleasure fills,
And dances with the daffodils.
ড্যাফোডিলের সঙ্গে সঙ্গে মাটি ফুঁড়ে হলুদ, বেগুনি, নীল, সাদাসহ নানা রঙের ছোট, বড়, মাঝারি আকারের ফুল উঁকি দিয়ে তার আগমনী বার্তা জানান দিতে থাকে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে টিউলিপ এসে ড্যাফোডিলের সাম্রাজ্য দখল করে নেয়। রাস্তার পাশে, কমিউনিটি গার্ডেন বাসাবাড়ির সামনে তখন টিউলিপের একক আধিপত্য।

এপ্রিলের শেষের দিকে টিউলিপ বিদায় নিতে থাকে তখন লতাগুল্ম জাতীয় বিভিন্ন ফুল যেমন জিনিয়া, কর্নফ্লাওয়ার, ল্যাসি প্যাকেলিয়া, মাউনটেন গারল্যান্ড, কুইন অ্যানেস লেস, কর্নকোকেল, ক্যান্ডিটাফ, ভাইপারস বাগলোসসহ নানা প্রজাতির ফুলের দেখা মেলে। এর বাইরে সবুজ ঘাসের মাঝে থেকে সাদা ও হলুদ রঙের ফুল যখন পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে থাকে, তখন মনে হয় সবুজের সঙ্গে সাদা আর হলুদের সৌন্দর্য প্রকাশে অলিখিত লড়াই চলছে। এমনিতেই বছর ধরে বৃষ্টির আনাগোনার ফলে ইংল্যান্ডের ঘাসগুলো অতিমাত্রায় সজীব ও সবুজ দেখায়। আর এপ্রিল মে মাসের সময় এই হলুদ, সাদা আর সবুজের অলিখিত মিতালি ইংল্যান্ডের প্রকৃতিতে পড়ে পাওয়া সৌন্দর্যশোভা বর্ধন করে।

মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে ইংল্যান্ডে চেরি ফুলের দেখা মেলে, সাদা আর গোলাপি রঙের চেরির আনাগোনা বেশি চোখে পড়ে। যদিও চেরি ফুলের স্থায়িত্ব খুব বেশি দিনের হয় না। খুব অল্প দিনের মাঝেই চেরিফুল গাছ থেকে ঝরে পড়ে এবং সেখানে নতুন পত্রপল্লবের আগমন ঘটে। চেরির এই আলতো রূপের মুগ্ধতার রেশ কাটতে না–কাটতেই গাছগুলো নবপল্লবে মুখরিত হতে থাকে।

ফুলের রঙের বর্ণনা করতে গেলে এখানে সাদা, হলুদ, গোলাপি আর নীল রংটাই আমার বেশি চোখে পড়েছে। দীনহীনভাবে কয়েক মাস ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকা বৃক্ষরাজিতে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সবুজ পল্লব বসন্তের পরশ এনে দেয়। কিছুদিন আগেও যে গাছগুলো বড্ড রুক্ষভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল, সেই গাছগুলোতে হঠাৎ করে চলে আসা প্রাণের উচ্ছ্বাস মানুষের মাঝেও এক অন্য রকম আনন্দের সন্দেশ নিয়ে হাজির হয়। তাই তো এই করোনাকালের লকডাউনের মাঝেও সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পার্কে হাজির হয়। ফলে এই গ্রীষ্মে পুলিশ হিসাব করে দেখেছে, এই বছর সবচেয়ে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ বেশি এসেছে। সঙ্গে এই এপ্রিল মেতে প্রকৃতি তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষকে তার কাছে যেভাবে সাদরে অভ্যর্থনা জানায়, তাতে করে এত দিনের গড়ে ওঠা অভ্যাসকে বশে আনা সত্যি মুশকিল।

রঙিন প্রকৃতি। ছবি: লেখক
রঙিন প্রকৃতি। ছবি: লেখক

আসলে এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার দেখা মেলে। দিনের আলো বৃদ্ধি পেয়ে রাত সাড়ে নয়টার পর গোধূলির দেখা মেলে, মাঝেমধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে ২০-২৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যায়। ফলে এই অবসর সময়টুকু পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঝকঝকে সূর্যালোকে সূর্যস্নান করে অনাবিল আনন্দ উপলব্ধি করা যায়। এই পড়ে পাওয়া আনন্দগুলো উপভোগ করতে পারলেই জীবন-মন সজীব হয়ে ওঠে, জীর্ণতা বিদায় নিয়ে সজীব সতেজ এক নতুন জীবনের দেখা মেলে।

প্রকৃতিই যে মানুষের সবচেয়ে পরম বন্ধু, আত্মার আত্মীয়, সেটি এই করোনাকালে আমরা খুব বেশি করে উপলব্ধি করছি। আমরা প্রকৃতির ওপর এত অত্যাচার করেছি যে সে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু কী অসাধারণ এক শক্তির বলে লকডাউনে সে আবার নিজেকে মেরামত করে নিয়েছে। প্রকৃতি দর্শনে আমার একান্ত উপলব্ধি হলো, সব জায়গার প্রকৃতির মাঝে একটা ঐক্যের সুর আছে, প্রাণের বাঁধন আছে। তবে ইংল্যান্ডের এই সবুজ মায়াময় গোছানো প্রকৃতি দেখি আর আমার দেশের শ্যামল প্রকৃতির সঙ্গে একটি তফাত খুঁজে পাই, সেটি হলো ইংল্যান্ডের পাহাড়ি প্রকৃতিকে এরা সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে সাজিয়ে–গুছিয়ে আরও মোহনীয় করে তুলেছে, আর আমরা প্রকৃতির অপার অনুগ্রহকে সবাই মিলে হত্যা করতে সদা প্রস্তুত।
আমরা যদি একটু মমতাময়ী হয়ে আমাদের দেশের প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে পারতাম, একটু গুছিয়ে রাখতে পারতাম, তাহলে হলফ করে বলতে পারি, আমার বাংলা মায়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর যেকোনো দেশের সৌন্দর্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। কারণ, এত ঋতুর বৈচিত্র্য, বৃষ্টির তানের শব্দ, প্রকৃতির কোমল ও রুদ্র রোষ, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে নানা প্রকারের সবুজ ফসলের সমাহার, এত ফলদ বৃক্ষের আনাগোনা আপনি কোথায় পাবেন!

* সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান (ওএসডি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা ও মাস্টার্স, ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম, যুক্তরাজ্য। [email protected]