কিছু এলোমেলো চিন্তাভাবনা

আমরা প্লাস্টিক ব্যাগ গুছিয়ে জায়গামতো ফেলে আসি! পচনশীল বর্জ্য আলাদা আর প্লাস্টিক, কাচ ইত্যাদি আলাদা কনটেইনারে জমা করা হয় সপ্তাহজুড়ে। প্রতি সপ্তাহে গার্বেজ ট্রাক ক্লক ওয়ার্কের মতো এসে গার্বেজ নিয়ে যায়! বইখাতা, পুরোনো কাপড়, ফার্নিচার ডোনেট বা রিসাইকেল করার জায়গা আলাদা!

বাচ্চারা ঘরে শেখে, ল্যাদা অবস্থায় প্রি স্কুল, চাইল্ড কেয়ার থেকে শিখে আর সারা জীবন প্র্যাকটিস করে! নিজের কাজ নিজে, নিজের জঞ্জাল নিজে পরিষ্কার করার! কোন গার্বেজ কোথায় ফেলতে হবে, এটা জানাটাও ভীষণ দরকার। ময়লা টিস্যু পেপার কোথায় আর রিসাইকেলের প্লাস্টিক বোতল কোথায় যাবে বা ঘরের কোন আবর্জনা কীভাবে সাইকেল করতে হবে, জানাটা শিশুসহ সবার প্র্যাকটিস করা উচিত। এরা রাস্তাঘাটে, ডোবায়, নালায় কিছু ফেলার চিন্তাও করে না! সিস্টেমটাই এমন। সবকিছুরই একটা সিস্টেম লাগে! সিস্টেম না হলে হবে না! উঠলো বায়, তো মক্কায় যাই... সেই ধারণা বাদ দিয়ে যদি সব সিস্টেমে ফেলা যেত! আগামী ১০ বছরে আমরা কিছু ভদ্র জনসংখ্যা তৈরি করতে পারতাম!

বাচ্চাদের ৩-৬টা পর্যন্ত স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করা গেলে, টিন–এজারদের কাজে ব্যস্ত রাখা গেলে...ইভ টিজিং বলেন বা নৈরাজ্য বলেন, সবই কমত! টিন–এজারদের তাদের ছোট ভাই বোনদের যত্ন নিতেও তাদের নিজেদের কাজ নিজে করতে শেখানো উচিত। শ্বশুরবাড়ী যেয়ে রান্না না শিখে, বাপের বাড়ীতেই নিজের এবং সংসারের সাহায্য করতে জন্য সব কাজ শেখা উচিত। ভালোবাসা এক জিনিস আর অকর্মন্য সন্তান বড় করা অন্য জিনিস। পড়াশোনার বাইরেও এক জীবন আছে, প্রতিটি কাজ শিখলে, তাতে পরিবেশের সাথে খাপ খেতে সহজ হয়। ইন্টারপারসোনাল রিলেশনশীপ গড়তে সাহায্য করে। কাজের প্রতি সম্মান তৈরি হয়।

স্কুল টিচার, মাদ্রাসার শিক্ষকদের কীভাবে বাচ্চাদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে, তার সঙ্গে তাদের বেসিক ভদ্রতা শেখালে আর তা কঠিনভাবে মনিটর করতে পারলে...আমরা একটা নতুন সুশীল জাতি বছর পনেরোর মধ্যেই গড়তে পারি! তাহলে হয়তো গণহারে বাচ্চাদের মলেস্টেশন রোধ করতে পারতাম। প্রতিটি স্কুলের, মাদ্রাসার বাচ্চাদের কারিকুলামে থাকা উচিত গুড এবং ব্যাডটাচের শিক্ষা। বাবা-মা একটি বয়স পর্যন্তই তাদের বাচ্চাদের গোসল দিতে পারে, এরপর এদের প্রাইভেট পার্ট কেউ দেখতে বা ছুঁতে পারবে না, ছোঁয়া বা দেখতে চাওয়া যে অন্যায়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ—সেটা সবার মাথায় গেঁথে দেওয়ার সময় এখন!

প্রতিটি গ্রামে ম্যান্ডাটরি দুই বাচ্চার বেশি নয় ব্যবস্থা করা গেলে, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে না বলে, বাবা–মায়েরা বাচ্চাগুলোর যথার্থ যত্ন করতেন! খাবারের অভাবে কাউকে মরতে হতো না! বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হলে সুসম ব্যবস্থা হতো! জনগণ ঢাকার ওপর চাপ কমাত!

প্রতিটি জেলায় অ্যাটলিস্ট এম আই (হার্ট অ্যাটাক), স্ট্রোকের চিকিৎসার সুব্যাবস্থা করতে পারলে- অসময়ে লোকজন মরত না, তার সঙ্গে স্ট্রং অর্থ, সার্জারি আর গাইনি, জিপি মানে জেনারেল মেডিসিন, আই বা চোখের ডাক্তারের সাপোর্ট দিলে বাংলাদেশে কোনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা অ্যাডমিন জবলেস থাকত না!

প্রতিটি মেডিকেল কলেজে, এমডি, রেসিডেন্সি, এমপিএইচের ব্যবস্থা করা গেলে ৩-৫ বছরে আমরা শত শত স্পেশালিস্ট তৈরি করতে পারতাম! তাদের কারোরই অনাহারী হওয়ার কথা না! ইদানীং শুনছি যে সবাই ভাতা পাবে! সাধু উদ্যোগ। একই সঙ্গে ম্যান্ডাটরি ক্লোজ মনিটরিং, আসলেই সবাই কী শিখছে এসব প্রোগ্রামে, সেদিকেও মনোযোগ দেওয়া দরকার! যদি মান খারাপ হয়, এডুকেটরদের এডুকেশন দেওয়া বা তাদেরকে প্রপারভাবে এডুকেশন দেওয়ার ক্লাস (এডুকেশনাল এসব এডুকেটরদের জন্য) নেওয়াও বাধ্যতামূলক করা উচিত! শেখার শেষ নেই। আমাদের অনেক স্কোপ, করার সিস্টেমটাই নেই অথবা করাপ্টেড!

সেম টোকেনে যারা বিদেশে শ্রম দিতে যায়, তাদের ছয় মাসের ট্রেনিং দেশ থেকেই দেওয়াতে পারলে.. আমাদের বদনাম কমত! প্লেনে টয়লেট ফ্লাড হতো না, এয়ার হোস্টেসদের দাসী–বাঁদি ভাবত না, মদের বন্যায়ও ভাসাত না, গরিব দেশের অশিক্ষিত মাতালদের মাতলামি প্লেনে বসে সহ্য করতে হতো না! সবার জন্য, স্পেশালি নারীদের ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল!

গরিবের ঘরে ১-২ রুম, কোনো রকম একটা অপরিষ্কার টয়লেট দেখে যারা অভ্যস্ত, তাদের জন্য ৩-৪ তলা বাড়ি, তার ৮-১২টি টয়লেট, রুম স্পটলেস ক্লিন করার কথাটা মাথাতেই আসে না! তার সঙ্গে প্রতি সপ্তাহান্তে ১০০-১৫০ জনের ফিস্ট বানানো চাট্টিখানি কথা নয়! যে কেউ স্ট্রেসে পাগল হয়ে যাবে! যার দিন শুরু হয় সকালে পান্তা খেয়ে তারপর সারা দিন প্রতিবেশীদের সঙ্গে আড্ডাবাজি করে, সে কীভাবে নিজে ১০-১২ ঘণ্টা একটানা কাজ করবে? তাও শুধু একরকম কাজ নয়,...শত রকমের!

কিন্তু ট্রেনিং দেওয়াচ্ছে কে? সমস্যা হলো কেউ দায় নিতে রাজি নয়! কিন্তু এরা এসব ট্রেনিংয়ে পাস না করলে তো পাঠানোই উচিত নয়, শ্রমবাজারে!

ফিলিপাইন আর অন্য জায়গা থেকে যারা কাজের লোক পাঠায়, তাদের ইংলিশ আর কাজে দক্ষ করেই পাঠায়! আমরা গালি দিই, কিন্তু কাজের কাজ করতে রাজি নই! আমার খালি অসংগতি চোখে পরে, আর কারও কি নয়?

রাস্তায়, বাঁশ, কলাগাছ কে দিচ্ছে? কাজের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিটা লোক! কেউ লোভে, কেউ ভয়ে মুখ খোলে না! আমরা কেউ জবাব চাই না, শুধু বলি, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে... নারে ভাই, তার সঙ্গে আমাদের কিছু মানুষরূপী জানোয়ারের কর্তব্যে অবহেলা, আর পুকুরচুরি জড়িত! নয়তো কালভার্ট বৃষ্টিতে ধসে? ট্রেন পড়ে ব্রিজ থেকে? বাঁশ দেওয়া লাইন? উড়ালসড়কে পানি জমে?

কমপক্ষে মন্ত্রণালয়গুলোতে যদি কিছু দক্ষ, বিবেচক লোক থাকত! যদি কিছু পানির রিজার্ভার তৈরি করা যেত, যদি নদীগুলোর নাব্যতা ফিরত! সেই রিসাইকেল—সব ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ভাটির দেশ তো চেঞ্জ করা যাবে না, কোটি কোটি জ্ঞানমূর্খদের বেসিক শিক্ষাটা দেওয়া যেত!

শুধু শিখি মানুষের দোষ ধরতে। আমাদের অতি আদরের সন্তান সবাই, কমপক্ষে তাদের বেসিক জীবনধারণ করার শিক্ষা দিন, জীবনধারণের জন্য! সবাইকে রিসোর্স করে গড়ে তুলুন। যাদের পক্ষে। কাজটি করা সম্ভব, তারা যদি একটু নজর দিতেন।

*চিকিৎসক