জীবনের মূল্য ২০ ডলার মাত্র

জর্জ ফ্লয়েড মিনিয়াপোলিসের ৪৬ বছরের টগবগে এক মানুষ। দোকানে ২০ ডলারের একটা নোট দিয়েছিলেন মে মাসের ২৫ তারিখে। নোটটি জাল ছিল, বিধায় পুলিশে ফোন করেছিলেন দোকানি। পুলিশ এসে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলেছিল তাঁকে। কী বাগ্‌বিতণ্ডার কারণে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিচে ফেলা হয়েছিল জানি না। গায়ের রং কালো দেখলেই মনে হয় তাঁদের শক্তি বেশি, অস্ত্র আছে, খারাপ কিছু করে ফেলবে ইত্যাদি ইত্যাদি পুলিশের মনে হতেই থাকে। শ্বেতবর্ণ পুলিশের জীবনের দাম এত বেশি যে বন্ধ পুলিশ ভ্যানের মধ্য থেকে নামিয়ে আনতে হলো তাঁকে। ডেরেক চওভিন নামের সাবেক পুলিশ অফিসার হাঁটু গলায় চেপে ধরে রাখলেন ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। জর্জ ফ্লয়েড বারবার বলেছিলেন তিনি নিশ্বাস নিতে পারছেন না। শেষের ২ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড তিনি সংজ্ঞাহীন ছিলেন। মারা গেছেন তখনই।

জাল ২০ ডলার দেওয়ার জন্য আইনানুগ শাস্তির অধিকার হলো না জর্জের। এটা ২০২০ সাল। ডেরেক চওভিন থার্ড ডিগ্রি মার্ডার চার্জ পেয়েছেন। প্রথম সরকারি ময়নাতদন্তে ফেনটানিল (ব্যথার ওষুধ) এবং মেথঅ্যামফামিনের (রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ) কারণে হার্ট অ্যাটাকের কথা বলা হয়েছে। অথচ দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। রেকর্ডিং তো আছে। চোখ খুলে দেখো পৃথিবী।

অবশ্যই ‘ব্ল্যাক লাইফ মেটারস’ নামের আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল এমন অমানবিক দুর্ঘটনার পরে ২০১৩ সালে। সবাই জানেন সেটা। তারপরও লঘু পাপে মানুষ নৃশংসভাবে চলে যাচ্ছে, বিচারের দাবি নিভৃতে কেঁদে চলেছে। উত্তাল হয়েছে আমেরিকা। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সহিংসতায়। কেন বারবার এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে? কালো আর সাদা শুধু রং, জীবন সবার সমান গুরুত্বপূর্ণ। কত দুর্বল মানুষ, সামান্য ভাইরাস সংক্রমণে মরে শেষ। তারপরও হুঁশ হয় না কারও। যেখানে পরবর্তী নিশ্বাসের কোনো নিশ্চয়তা নেই।

মার্টিন লুথার কিংয়ের ১৯৬৬ সালের ভাবানুবাদ মতো ‘রায়ট উপেক্ষিত মানুষের ভাষা’। ১২টি শহরে শতাধিক গ্রেপ্তার, লুট, অগ্নিসংযোগ, ন্যাশনাল আর্মি নামানো চলছেই। মানুষ হিসেবে বাঁচার অধিকার দিতেই হবে। আমরা সবাই সমান। জর্জ ফ্লয়েডের সেকেন্ড গ্রেড শিক্ষক স্মৃতিচারণা করেছেন, জর্জ ছোটবেলায় বিচারক হতে চেয়েছিলেন। অতঃপর বাস্কেটবল প্লেয়ার, মাঝে ডাকাতির কারণে জেল খেটেছেন, ইদানীং করোনার প্রাদু্র্ভাবের আগে একটা ক্লাবের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। কলঙ্কিত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে চলে গেলেন জর্জ। আর কাউকে যেন এত নির্মম মৃত্যু মেনে না নিতে হয় এই প্রার্থনা।