স্পেনে লকডাউনের দিনগুলো

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

স্পেনে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় এ বছরের ৩১ জানুয়ারি রাত ১০টায়। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা নীরবে শক্তি সঞ্চয় করে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে (২৫ ফেব্রুয়ারি) অতর্কিতভাবে করোনা আঘাত হানে স্পেনে। পর্যটন শহর বার্সেলোনা ও স্পেনের অন্যান্য শহর মিলিয়ে মোট ৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় একই দিনে। বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তোলে।

১২ মার্চের মধ্যেই স্পেনের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ১৪ মার্চ থেকেই পুরো দেশে State of Alarm বা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে স্পেনের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। এরপর করোনা তার সব শক্তি নিয়ে একে একে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের ওপর। আক্রান্তের সংখ্যা শত, সহস্র, লাখ ছাড়িয়ে যেতে থাকে। একটা সময় করোনা আক্রান্তের দিক থেকে ইতালিকে অতিক্রম করে আমেরিকার পরেই বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে স্পেন (এখন চতুর্থ)। এযাবৎ এখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৯ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ২৭ হাজার ১২৭। স্পেনের রাজধানী শহর মাদ্রিদ ও পর্যটন শহর বার্সেলোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে ছিল সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে। হাসপাতালের মর্গ, সিমেট্রি, হিমাগার, হাসপাতাল, বারান্দা সব জায়গায় ছিল লাশের স্তূপ! যে শহরগুলো রাতের আঁধার ও দিনের আলোয় বিশ্বের হাজারো পর্যটকের পদচারণে থাকত মুখরিত, সেই শহরগুলোতে হঠাৎ নেমে আসে শোকের ছায়া। চারদিকে লাশ আর লাশ! এ যেন এক মৃত্যুপুরী!

প্রথম দু–চার দিন স্ত্রী–সন্তান নিয়ে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটালাম। এভাবে সপ্তাহখানেক যাওয়ার পর একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম যে এখন থেকে করোনার কোনো আপডেট খবর আর নেব না। সংসারের প্রতি মনোযোগী হলাম। আমার স্ত্রীকে তার সব কাজে সহযোগিতা করা শুরু করলাম। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে চিজ কেক, অ্যাপল কেক, চকলেট ব্রাউনি এগুলো বানানো শিখে ফেললাম। গত কয়েক বছরে আমার অনেকগুলো লেখা জমা হয়েছে। আমি সবগুলো লেখা যত্ন করে আলাদা একটা ফাইলে জমা করে রাখলাম (সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বইমেলার আগে–পরে দু–একটা বই প্রকাশ করতে চাই)। এ ছাড়া নতুন কিছু বিষয়ের ওপর নিয়মিত লেখা শুরু করলাম। আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে (চ্যানেলের নাম Spain Info)। আমি সেই চ্যানেলের মাধ্যমে স্পেনের বাংলাদেশি অভিবাসীদের অভিবাসনসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও আইনি পরামর্শ দিতে লাগলাম।

অনলাইন ভিডিও এডিটিং কোর্স শুরু করলাম। বাচ্চাদের হোমওয়ার্ক, টিভিতে সবাই মিলে ফানি সিরিজ দেখা ও দেশে–বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নিতে লাগলাম। সঙ্গ ধর্মকর্ম তো আছেই। একটা পর্যায়ে এসে লক্ষ করলাম, করোনা নামক কোনো দুশ্চিন্তা আমার মধ্যে আর অবশিষ্ট নেই। আমরা পরিবারের সবাই মিলে অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো থাকতে শুরু করলাম।

এখানে আপনাদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করলাম এই কারণে যে আপনারা যারা এই করোনা পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, এখন থেকে করোনার দুশ্চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। নিজের যে কাজটি করতে ভালো লাগে সেই কাজটিতে মনোযোগী হোন। পরিবারের সবাই মিলে করোনাকালীন এই সময়টা উপভোগ করুন, নিজেদের মতো করে। সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। এতে করে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।


সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন সবাই। আল্লাহ সবার সহায় হোন।