ছয় ফুট দূরে

নরম কণ্টকিত বর্ণালী আহা কী চমৎকার অবয়ব 

কল্পনার রঙে আঁকা বাহারি গঠন।
কখনো দেখতে কুকুরের খেলনার মতো
কখনোবা শিশুর নরম হাতে আঁকড়ে ধরা পাফ বল
পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কুৎসিত বস্তুটি
বাহিরে আকর্ষণীয় চেহারার আড়ালে
এক ভয়ানক, নিষ্ঠুর, প্রতারক, সরব ঘাতক
রেখেছে আমাদের আজ ছয় ফুট দূরে।

আমাদের অনেকেই এখনো যদিও সংক্রমিত নই
তবুও করোনা বদলে দিয়েছে আমাদের, আমাদের পুরো পৃথিবী।
বদলে দিয়েছে আমাদের আকার, অবয়ব
আমরা আজ রূপান্তরিত হতে চলেছি নতুন কোনো রূপে
ধাপে ধাপে বদলে যাচ্ছে আমাদের ভিতর–বাহির,
ভয়ে আছি সদা যেন সময়ের আবর্তনে পৃথিবীর নিয়মে
একদা অস্বাভাবিকই হয়ে যাবে স্বাভাবিক
কারণ, আমরা রয়েছি ছয় ফুট দূরে।
ছয় ফুট ব্যাসার্ধে বিচ্ছিন্ন আমরা
আমাদের চারপাশে গড়ে উঠেছে এক অদৃশ্যের দেয়াল
যেন ভিন্ন কোনো দ্বীপে নির্বাসিত একাকী যার যার মতো
আকণ্ঠ নিমজ্জিত লবণাক্ত জলরাশি করিতেছি পান
কাছে থেকেও দূরে, যেন বহুদূরের কেউ
অপেক্ষায় আছি কবে শেষ হবে এই নির্বাসন।
ছয় ফুট দূরে দূরে রয়েছি আমরা
আমাদের অস্পষ্ট কথোপকথন আছে, মাস্কে ঢাকা মুখ
আমরা দেখতে পাই না একে অন্যের হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী।
যদিও এখনো আশা ছাড়িনি, রয়েছি একাত্মতার বন্ধনে
অন্তরে, বাহিরে একে অন্যেরে জড়ায়ে অদৃশ্য মমতায়
ইশারার আলিঙ্গনে শুধু প্রত্যাশায়
অমানিশার এই রাত পেরিয়ে একদিন উঁকি দেবে সোনালি সকাল।
ছয় ফুট দূরে আমাদের রেখে নিরাপদ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে
আমাদেরই কেউ কেউ সম্মুখ সমরে গিয়ে
এই কুৎসিত অদৃশ্য শক্তিকে রুখিবার প্রত্যয়ে
জীবনকে বাজি রেখে মৃত্যুকে করিছে আলিঙ্গন,
আমরা আজ সমস্বরে গাই তাঁহাদের গান
অকুতোভয় তাঁহাদের সাহসেই আমরা নির্ভিক
স্বর্গের অমৃত সুধা বিধাতা রেখেছেন তাঁহাদের তরে
অন্যের তরে যারা আজ নিজ প্রাণ দিয়ে গেল বলিদান।