প্রবাসে বাগানবিলাস

কোনো এক বছরে আমাদের ওয়াটারলুর কমিউনিটি বাগান। ছবি: লেখক
কোনো এক বছরে আমাদের ওয়াটারলুর কমিউনিটি বাগান। ছবি: লেখক

কানাডাতে এসে কমবেশি সব সময়ই সবজির বাগান করার অভ্যাস আছে আমার স্বামীর। আবহাওয়ার কারণে এখানে বছরের মাত্র তিন থেকে চার মাস বাগান করা যায়। আর বাকি মাসগুলোতে মাটি বরফে ঢাকা থাকে। এপ্রিল মাসে বরফ গলে গেলেও মাটি ভীষণ ঠান্ডা থাকে, যা চারাগাছের জন্য অনুপযুক্ত। সেই জন্য যাঁরা ঘরে চারা তৈরি করেন, তাঁদের অপেক্ষা করতে হয় চারাগাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ না আশা পর্যন্ত।

মোটামুটি মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাগান করা শুরু হয়। আর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বরফ পড়ার আশঙ্কায় থাকতে হয়। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যেকোনো দিন বরফ পড়ে সবজির বাগান ঢেকে যায়। অথবা বরফ না পড়লেও হিমশীতল ঠান্ডায় গাছগুলো সব মারা যায়।

এখানে অনেকের মধ্যে এই বৈরী আবহাওয়াতেও সবজি চাষের নেশা আছে। আমার স্বামীরও তাঁদের মতোই এটা একটা নেশা, আবার সেই সঙ্গে পেশাও বলা যায়। পেশা বলছি কারণ, তার ছেলেবেলা কেটেছে লেখাপড়ার পাশাপাশি চাষাবাদে অংশগ্রহণ করে, যেটা এখানেও নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। নেশা বলছি কারণ, ফুটবল খেলা আর সবজির বাগান করা—এই দুই বিষয় তার জীবনে মোটামুটি ঈদের আনন্দের সমতুল্য। তবে করোনায় ঘরে বন্দী থাকার কারণে সে এ বছরের সবজির বাগান করার ধরনটা বিগত বছরের চেয়ে একটু আলাদাভাবে করার ইচ্ছার কথা জানাল। সে বলল, ‘সবজির বাগানটা যদি একটু বড় করতে পারি, তবে তোমার আর সবজির কোনো অভাব হবে না, আবার আমার সময়টাও ব্যস্ততায় কাটবে। করোনার এই পরিস্থিতিতে বাজারে সবজি কিনতে যাওয়া তো একটা ঝুঁকির ব্যাপার। তার চেয়ে বরং একটু বেশি করে সবজি চাষ করি, তাতে তোমার বাজারে যাওয়ার ভাবনা কম হবে।’

আমার বরাবরই সবজির বাগান করাতে আপত্তি থাকে, আমার কাছে এটা খুবই ঝামেলার মনে হয়। সব সময় তার একটা চিন্তা থাকে, ইন্টারনেটে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখা। বৃষ্টি না হলে পানি দেওয়া, পানিটাকে মাটিতে ধরে রাখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে পোয়াল বা খড় কিনে এনে গাছের গোড়াগুলো ঢেকে রাখা। ঝোড়ো হাওয়ায় গাছগুলো ভেঙে যাওয়ার ভয়ে তারের খাঁচায় অথবা ছোট ছোট গাছের ডাল পুঁতে খুঁটি হিসেবে আটকিয়ে রাখা। ঠান্ডা পড়লে চারাগাছগুলো মরে যাওয়ার ভয়ে খালি হার্ডবোর্ডের বক্সগুলো দিয়ে ঢেকে রাখা। আবার অতিরিক্ত রোদও কিছু কিছু চারাগাছ সহ্য করতে পারে না, তখন সেগুলো বড় একটা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা। আর এদিকে খরগোশের উৎপাত তো আছেই। তার একটা বড় লাঠি ঠিক করা আছে, খরগোশ এলেই লাঠিটা নিয়ে দেয় এক দৌড়ানি। যদিও এটা দেখে ছেলে আর মেয়ের সঙ্গে আমিও হাসতে থাকি। ছেলে বলে, ‘বাবা, কয় শ মিটার বেগে দৌড়ালে?’ সে উত্তর দেয়, ‘বেগ আমার ভালোই ছিল, তবে খরগোশের সঙ্গে কি আর পারা যায়!’

আর এই করোনা দুর্যোগে বাগানের পরিকল্পনাটা একটু ভিন্ন পরিসরে হবে শুনে আমার মাথা বেশ গরম হলো। তবে এই বড়সড় করে বাগান করার পেছনে অনেক ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে আমাকে বলতেই থাকল। একটু কটাক্ষ করে বললাম, ‘সবজির সঙ্গে মাছেরও চাষ করো, তাহলে তো আর বাজারে যাওয়ার কোনো দরকারই থাকবে না।’ তার উত্তর ছিল, করোনার এই ঘরবন্দী সময়ে ফুটবল খেলা তো আর যাবে না, তবে সবজির বাগান করে কিছুটা আনন্দের মধ্য দিয়ে সময় কাটানো এই আর কি। আমি তখন ভাবলাম, কথাটা একেবারে মন্দ না!

আমার দিক থেকে পজিটিভ সাড়া পেয়ে তার উৎসাহের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে গেল। অতি মনোযোগী হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে বিভিন্ন চাষাবাদ সম্পর্কে গবেষণায় ঢুকে গেল। স্ট্রবেরি, অ্যালোভেরা, এস্পারাগাছ ইত্যাদি চাষাবাদের ভিডিও নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলতে লাগল। ইতিমধ্যে সে খরগোশের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচার জন্য বিশাল এক নেট কিনে ফেলল। বীজ সংগ্রহে কি তার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। দিনের পর দিন চলতে লাগল অনলাইনে বীজের অর্ডার দেওয়া, ওয়ালমার্ট-সুপার স্টোর থেকে বীজ কেনা, প্রতিবেশীর কাছ থেকে বীজ বিনিময় করা এবং বাসায় নিজের স্টকে থাকা বীজের সব পুঁটলা–পুঁটলি বের করে নাড়াচাড়া করা। মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, লাউ, বরবটি, করলা, বেগুন, লালশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, কলমিশাক, মটর, ছোলা, বেগুন, আলু, জুকিনি, এস্পারাগাছ, সেলারি আরও কত রকমের বীজ জোগাড় করে ফেলল।

করোনায় চাকরি হারিয়ে ঘরে বসে আছি। আমারও অফুরন্ত সময় তার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা। তাকে বললাম, ‘দুই ব্যাগ আলু ব্যবহার করে দেখি কয় বস্তা আলু ফলাতে পারো। সে প্রতি উত্তর দিল, ‘দেখো, সব কিছুর মধ্যে লাভ–ক্ষতি হিসাব করলে চলবে না।’

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ, তখনো সব বরফ গলেনি। আমাদের বাগানের জায়গাটার কোনা–কাঞ্চিতে ছোট ছোট বরফের স্তূপ পড়ে আছে। সে তার উইন্টার জ্যাকেট গায়ে দিয়ে লেগে গেল মাটি কোপাতে। কয়েক দিন ধরে পেছনের পুরা জায়গা সে গাছ লাগানোর জন্য প্রস্তুত করে ফেলল। প্রতিটা জাতের বীজ একেকটা মোটা টিস্যু পেপারে ভিজিয়ে পৃথক পৃথক জিপ লক ব্যাগে ভরে রাখল। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে তার গবেষণা চলতে থাকল কোনটার অঙ্কুরোদ্গম হলো, আর কোনোটার হলো না। সমস্যা দেখা দিল, আমার যেখানে যত বাটি-ঘটি ছিল, কবে যেন সব তার দখলে চলে গেল। এ কি বিপদ! রান্নাঘরে গেলে দেখি, এই বাটি নাই তো ওই বাটি নাই, ওই থালা নাই। চারাগাছের জন্য এরই মধ্যে সে কিনে ফেলল বড় একটা পিটমসের ব্যাগ। যেখানে যত প্লাস্টিক এবং ইয়ুগার্ডের পাত্র ছিল, সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে পার্টি উপলক্ষে কেনা ওয়ান টাইম ব্যবহার কাপ এবং বাটিগুলো সব গুছিয়ে–গাছিয়ে তার প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করলাম। আমাদের পরিবারের সব থেকে বিনোদনের, পাশাপাশি চলাচলের বড় জায়গা এই বাসার ড্রয়িংরুমসহ কিচেন এরিয়া। যার মোটামুটি অর্ধেকটা সে জুড়ে নিল তার চারাগাছের জন্য। আমার বিরক্তি দেখে সে সান্ত্বনা দিল, ‘এই করোনাতে তো কোনো মেহমান আসছে না কিংবা তুমি তো কোনো পার্টিও দিচ্ছ না যে জায়গাটা তোমার অত গুছিয়ে রাখতে হবে।’ আমাদের বাড়িটা পূর্ব-পশ্চিমমুখী হওয়াতে সকালের রোদটা ধরার জন্য একটা একটা করে সব পাত্র সে একবার পূর্ব দিকে আনে, আর দুপুরের রোদটাকে ধরতে আবার পশ্চিম দিকে আনে। যে সংসারে নিজের থালাটা ধুতে ভুলে যায়, তার এই একনিষ্ঠ কাজ দেখে তাকে আমার কাছে বেশ অপরিচিত মনে হয়; হিসাবে মেলাতে পারি না।

এই বছরের লাউগাছের চারা। ছবি: লেখক
এই বছরের লাউগাছের চারা। ছবি: লেখক

সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে সে চারাগাছগুলোর কাছে আসে। অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে কিছুটা সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকে। কোন জাতের কয়টা চারা বের হলো, কে কত বড় হলো অথবা কোন চারার কয়টা পাতা বের হলো। আবার কোন চারা মারা গেলে, কেন মারা গেল; অথবা কোনো চারা দুর্বল দেখা গেলে কেন একটু দুর্বল লাগছে; এই চারা কেন বড় হচ্ছে না, তখন তাকে বেশ বিমর্ষ লাগে। মোটকথা, সারাক্ষণ তার এই বাগানের চিন্তা মাথায়। এর মধ্যে সে বড় দুই প্যাকেট Miracle-Gro কিনে এনেছে চারাগাছগুলোর পুষ্টি বৃদ্ধি করতে। বোতলে গুলানো Miracle-Gro একটু একটু করে চারাগাছগুলোতে মাঝেমধ্যে দিতে দেখি। ইতিমধ্যে কোনো এক জায়গা থেকে বড় গাছের কিছু কাটা ডালপালা জোগাড় করেছে পরবর্তী সময়ে বাগানে মাচা হিসেবে ব্যবহারের জন্য। গাড়ি ভরে সিটি অব সাস্কাটুনের দেওয়া ফ্রি সার এনে ডেকের নিচেই জমা করেছে। সারের কথা আলোচনাকালে আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কোথায় তোমার সার? আমি তো পেছনের বাগানে দেখলাম না।’ সে বেশ একটু বুদ্ধিদীপ্ত হাসি দিয়ে বলল, ‘ওগুলো ডেকের নিচেই লুকিয়ে রেখেছি। তুমি তো কাদামাটি পছন্দ করবে না তাই।’ কেমন যেন একটা সন্দেহ হলো, দ্রুত ডেকের নিচেই গেলাম কীভাবে সে কী ঢেকেছে দেখার জন্য। আমার সুন্দর একটা মাদুর দিয়ে সারের ঢিবিটা মোড়ানো। তাকে বললাম, আমার গোছানো জিনিসপত্র দেখলেই তোমার কেন নিতে ইচ্ছে করে, বলতে পারবে? সহাস্যে সে বলল, আবার কোন দিকে কোনটা খুঁজে বেড়াব। গোছানো জিনিস গুলো সহজে চোখে পড়ে যাই। আবার কোনো সময়ও ব্যয় হয় না।

এখন বাইরে রোদের তাপ বেড়েছে। চারাগাছগুলো একটু শক্তপোক্ত হয়ে উঠেছে। এখন ড্রয়িংরুম থেকে একে একে তাদের জায়গা হতে শুরু করেছে উঠানের মাটিতে। ঘরের সামনের আর পেছনের দরজায় তার দুই জোড়া পৃথক জুতা রাখা আছে বাগানে কাজ করার জন্য। তারপরেও মনের অজান্তে কখনো কখনো জুতাগুলো ঘরের মধ্যে চলে আসে। সারা দিনের রৌদ্র মাথায় নিয়ে বাগানে কেটে যায় তার। ছেলেমেয়েকে খুব মমতা নিয়ে ডাকে তার বাগানটা দেখার জন্য। ওরা অগ্যতা বাবার অনুরোধে দুই–এক মিনিট ডেকে এসে দাঁড়ায়। রোদ, বাতাস অথবা ঠান্ডার অজুহাত দিয়ে আবার বাসার ভেতরে ঢুকে যায়। দিন দশেক আগে আমার ছেলেটা তাদের বাবা সম্পর্কে বলল, ‘আশ্চর্য! একজন মানুষ কীভাবে এত কাজ করতে পারে?’ আর আমার মেয়েটা বলল, ‘বাবা কীভাবে এত রোদে কাজ করে! ওর কি গায়ে কোনো রোদ লাগে না।’

তার এই সবজির বাগানের নেশা আমি ওয়াটারলুতে থাকার সময়ই বুঝতে পেরেছিলাম। তখন আমরা একটা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে থাকতাম। ঘরের মধ্যে জানালার পাশে তিন–চারটা টবের মধ্যে টমেটো, জুকিনি আর কচু লাগানোর মধ্য দিয়ে তার সবজির চাষ শুরু। এর পরের বছর থেকে শুরু হলো তার কমিউনিটি গার্ডেনে সবজির চাষ করা। বিভিন্ন দেশের মানুষের একসঙ্গে প্লট ভাগ করে সবজি চাষ, সে এক আনন্দের আমেজ তার মুখে সব সময় থেকেছে। সেই ছোট এক টুকরো জমিতে চাষ করতে তার সে কত ব্যস্ততা। পিএইচডি লেখাপড়ার পাশাপাশি সবজিখেতের জন্য অতিরিক্ত সময়টা বের করাটা তার সে এক মহা আনন্দের ব্যাপার।

আর এখন নিজের বাড়ির পেছনের উঠানে প্রতিবছরই সবজি চাষ করাটা তার কি না একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোদ আর কাদামাটি, কোনো কিছুতেই তার বিরক্ত বা ক্লান্তি নেই। আমার কাছে যদিও খুবই বিরক্তিকর লাগে তার এই কাদামাটি মাখানো জুতা পায়ে চারদিকে জিনিসপত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে বাগান করা। পাশাপাশি আবার খুব মায়া লাগে, যখন দেখি ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাথায় রোদ লাগিয়ে একাকী সবজির বাগানে কাজ করছে। ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে ডাকি, ‘এসো তো, তুমি তো রোদে একদম পুড়ে গেলে।’ বরাবরের মতো তার একই উত্তর, ‘এই তো আমার এখনই হয়ে যাবে।’ আবার ঘুরে এসে বলি, ‘কই! তুমি তো এলে না।’ নির্মল একটা হাসি দিয়ে বলে, ‘বাগানে কাজ করতে আমার আনন্দ লাগে, ছোটবেলা থেকে রোদে কাজ করতে আমি অভ্যস্ত।’

চারাগাছগুলোতে নিয়মিত পানি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, সার দেওয়া, আরও কত কি। ঘরে বসে চাকরির পাশাপাশি তার এত পরিশ্রম দেখে মাঝেমধ্যে বেশ বিরক্ত লাগে। সে তখন বলে, ‘এটা তো শুধু করোনার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি। তবে আর যা–ই হোক, জীবনে মনের মতো একটা সবজিবাগান করার ইচ্ছা ছিল বহুদিনের। সূর্যমুখী আর ভুট্টা যদি লাগানো যেত, তবে বাগানটা একদম পরিপূর্ণ হতো।

সংসারে তার যাবতীয় কাজেই আমার কমবেশি সাহায্য করা লাগে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, সে সবজি চাষে কখনো তাকে সাহায্য করতে আমাকে ডাকে না। ভেবে দেখি, মানুষটা যেহেতু এতই একনিষ্ঠ তার সবজি চাষে, সে যেভাবে খুশি চাষ করতে চাই করুক। যখন বাগানের গাছগুলো একটু বড় হয়, তখন আমি আমার নিজের ইচ্ছাতেই মাঝেমধ্যে বাগানের আগাছা তুলে দিয়ে আসি। ছড়ানো–ছিটানো পাত্রগুলো তুলে এনে ডেকের নিচেই গুছিয়ে রাখি। সে বলে, ‘তোমাকে কিছু করতে হবে না, তুমি বাগানে এলে এমনিতেই আমি কাজে উৎসাহ পাই।’

আমরা জুন–জুলাই মাস থেকে সবজি খাওয়া শুরু করি। এর মধ্যে মোটামুটি কাছের সব বন্ধুবান্ধবকে আমরা কিছু কিছু সবজি দিতে চেষ্টা করি। তা ছাড়া প্রতিবছর বেশ ঘটা করে অনেক বড় পরিসরে পরিচিতজনদের দাওয়াত করি এবং মাছ-মাংস বাদে বাকি সব খাবারই আমাদের বাগানের সবজি দিয়ে তৈরি করি। তবে শীত আসার আগে আগে সবজি সংরক্ষণে আমার অনেক ব্যস্ততা বেড়ে যাই। সবজিগুলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেটরে সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করি। মোটামুটি এটা আমাদের সারা বছরের অনেকটা বাজার খরচ বাঁচিয়ে দেয়। সতেজ সবজির স্বাদ আর পাশাপাশি অফুরন্ত সবজি, খাওয়ার রুচি বাড়িয়ে দেয়। ফ্রেশ ধনেপাতার সে কী সুগন্ধ, আর লালশাক ভাজি, অদ্ভুত এক ভালো লাগার অনুভূতি জাগায়। তার এই সবজির বাগান করার ঘটনাপ্রবাহকে নেশা-পেশা শব্দ দুটি একসঙ্গে যুক্ত না করলে আমার কাছে অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার ভালো লাগা পরিশ্রমের এক অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি।