স্বপ্নগুলো কেন এমন হয়

ইদানীং অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখি। গত রাতের স্বপ্ন ছিল স্কুলের গণিতের শিক্ষক আমাকে জোর করে সম্পাদ্য আর উপপাদ্য বোঝাতে চাচ্ছেন কিন্তু আমি সম্পাদ্য সহজে পারলেও উপপাদ্য কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না।

এরপর এল চৌবাচ্চার অঙ্ক। এই অঙ্ক কিছুতেই আমার বোধগম্য হয় না। চৌবাচ্চাতে এত ছিদ্র থাকার কারণই বা কী? বানরেরটা তা-ও কিছুটা সহজ, যদি না সে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বেশি ওঠানামা করে। ওঠানামা যত বেশি, অঙ্ক ততই জটিল। যদিও বাস্তব জীবনে আমি কোনো বানরকে তেল মাখানো বাঁশ বেয়ে এভাবে ওঠানামা করতে দেখিনি। বানরগুলো তো আর গাধা না। এই ধরনের পাটিগণিত কোন বান্দর যে আবিষ্কার করল।

মজার ব্যাপার হলো, এই বানর এবং চৌবাচ্চার অঙ্ক নাকি এখন এত বছর পরে এসেও পড়ানো হচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষায়ও নাকি আসে এ ধরনের অঙ্ক। প্রশাসন চালানোর ক্ষেত্রে এই বানর আর চৌবাচ্চা কী কাজে লাগবে, তা কিছুতেই আমার মাথায় আসে না। টিভিতে বিজ্ঞাপনে দেখি, বদলে যাচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে সমাজ। কিন্তু এভাবে বানর আর চৌবাচ্চাগুলো আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছে, একটুও বদলায়নি।

*
আরেক দিন স্বপ্নে দেখলাম, ম্যাডাম আমাকে লসাগু এবং গসাগু করতে দিয়ে কার সঙ্গে যেন মোবাইলে কচুর লতি দিয়ে গুঁড়া মাছ রান্না করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছেন। শুনেছি ম্যাডামরা নাকি এমনই হয়। আমার এক বন্ধু পরীক্ষার আগে সব সময় দোয়া পড়ত যেন পরীক্ষার হলে একজন পুরুষ শিক্ষকের সঙ্গে একজন ম্যাডামের গার্ড পড়ে। তাহলেই কেল্লাফতে। এদিকে আমার লসাগু তো কিছুতেই মিলছে না। ম্যাডামকে ভয়ে কিছু বলতেও পারছি না। কচুর লতি আর গুঁড়া মাছ রান্নাও প্রায় শেষ হওয়ার পথে।
*
সবচেয়ে কমন স্বপ্ন ছিল পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টা পরে আমার হলে উপস্থিত হওয়া। পরীক্ষা শেষ হতে মাত্র এক ঘণ্টা বাকি। অনেক অনুরোধ করার পর টিচার আমাকে প্রশ্নপত্র প্রদান করেন। প্রশ্ন হাতে নিয়ে তো আক্কেল গুড়ুম, একটি প্রশ্নও কমন পড়েনি। সারা রাত রচনা পড়লাম ‘এইম ইন লাইফ’, এসেছে ‘নিউজপেপার’। এইটা কিছু হলো? তা ছাড়া ট্রান্সলেশনগুলোও মারাত্মক। রবিঠাকুর শুয়ে শুয়ে গদ্য লিখছিলেন—এই ট্রান্সলেশন এসেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও গদ্য ইংরেজি মনে করতে পারছিলাম না। রবিঠাকুর অন্তত আজকের দিনটিতে পদ্য লিখলেও পারতেন। এদিকে দ্রুত সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে, কী যে করি।

*
ভয়ংকরতম স্বপ্ন ছিল আমি পরীক্ষা দিচ্ছি আর টিচার আমার খাতার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন, কিছুতেই জায়গা থেকে নড়ছেন না। মনে হচ্ছে যেন কেউ তাঁর জুতার তলিতে আইকা গাম লাগিয়ে দিয়েছে, এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে।
অনুগ্রহ করে আমার শিক্ষকবৃন্দ যাঁরা আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন লেখায় কোনো ভুল থাকলে আমাকে মাফ করবেন। জানি করবেন, কারণ কলম তো আপনারাই ধরতে শিখিয়েছেন। চলবে...