সত্য জানালা

>প্রেক্ষাপট: আমরা জানি না, কবে আবার নতুন দিন আসবে? কবে আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন সবাই করতে পারবে? কবে আমরা মানুষের মতো মানুষ হব। ঘরে বন্দী থাকা কি কারও ভালো লাগে? করোনা নিয়ে চারদিকে হইচই। একটা চাপা উত্তেজনা বিরাজমান। কেন ২০২০ সালটা? হঠাৎ পৃথিবীর মানুষজন ঘরে বসে থাকল কেন? এর উত্তর একমাত্র স্বয়ং স্রষ্টা ভালো বলতে পারেন। আজকের গল্পের নায়ক-নায়িকা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। যাদের আমি, মানব আর মানবী নামকরণ করেছ। একটা ছোট্ট এক কামরার ঘরে বসবাস করেও তারা জীবনকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। মনের সব সত্য জানালাটা যে আজ তারা খুলে দিয়েছে। আমার গল্পের সঙ্গে যদি কোনো জীবিত বা মৃত কারও জীবনের নাটকীয় সাদৃশ্য পাওয়া যায়, তাহলে আমাকে ভুল বুঝবেন না দয়া করে। আমি শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ধন্যবাদ।

মানব: আজ পূর্ণিমা?

মানবী: হ্যাঁ! ওই দেখো চাঁদ। সারা আকাশটাকে কীভাবে আলোকিত করে রেখেছে।

মানব: আকাশে কত সাদা মেঘ দেখা যায়।

মানবী: হ্যাঁ! শুধু মেঘ কেন, ওই যে লাখ লাখ ধ্রুবতারাও দেখা যাচ্ছে। কেন এই স্নিগ্ধতা শুধু রাতের জন্য বলো তো?

মানব: আমাদের এভাবেই থাকতে হবে। মনের আকাশ খুলে দিতে হবে। আমরা সেই আকাশের নিচে দিয়ে হেঁটে যাব। আচ্ছা, আমরা কি আর স্বাভাবিক জীবন পাব না?

মানবী: এত কেন ভাবছ তুমি? আমি জানি না। ঈশ্বরই ভালো বলতে পারবেন। ছাড়ো তো। দেখো আমার ফুলবাগানে কত ফুল ফুটে আছে। আমার খুবই আনন্দ লাগছে। কী মিষ্টি সুভাস! তুমি কি পাচ্ছ না?

মানব: না। আমি কিছুই পাচ্ছি না। আমার নাক বন্ধ হয়ে গেছে। আমার ঘ্রাণশক্তি লোপ পেয়েছে। আমার কাছে কোনো গন্ধ নেই। তুমি এসব বলা বন্ধ করো। এখন কাব্যিক কথা ভালো লাগছে না।

মানবী: তুমি এত চটে যাও কেন বলো তো? এত রাগ কেন তোমার? কার ওপর রাগ দেখাও? আজকে আমার ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়ছে।

মানব: কোন কথা? হা হা হা।

মানবী: একি কাণ্ড! তুমি আসছ? কী মনে পড়ল তোমার?

মানবী: একবার বন্ধুদের সঙ্গ সিলেটে গিয়েছিলাম, জাফলংয়ে। বাসায় বলেছিলাম বন্ধুর ভাইয়ের গায়েহলুদ। সারা রাত থাকতে হবে। আম্মার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে রেখেছিলাম। আমরা ছয় বন্ধু—আজ কে কোথায় আছে? জানো ঘোরাঘুরি আর খাওয়াদাওয়ার দেখি আমাদের সবারই সব টাকাপয়সা শেষ। তখন তো আর মোবাইল ফোনের ব্যবহার ছিল না। থাকলে ভালোই হতো। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে বাড়ি ফেরা। আর সেই দিন আবার হাতে দারুণ মার খেয়েছিলাম। বেড়াতে গেয়েছিলাম তার জন্য নয়। মিথ্যা বলেছিলাম তাই। হা হা হা।

মানবী: হি হি হি, কী মিথ্যুক রে বাবা! তুমি তো অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করো। আমারও একটা কথা মনে পড়ছে, বলব? প্লিজ, রাগ করবে না।

মানব: রাগ করার কথা আসছে কেন? তুমি কি কিছু লুকাচ্ছ? বলো এখনই। আমার ভালো লাগছে না।

মানবী: তোমার এত রাগ, জেদ আর এত সন্দেহ সত্যিই আমাকে দারুণভাবে মর্মাহত করে। না থাক, বলব না।

মানব: আমি বলছি তো বলতে, বোকার মতো করছ কেন?

মানবী: ঠিক আছে, বলছি। আমাকে সবাই ড্রিমগার্ল বলত। সবাই ভালোবাসতে চাইত। লাল গোলাপও পেয়েছিলাম অনেক।

মানব: কী! কী সব বলছ! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমি তো তোমার স্বামী। তুমি শুধু আমার ড্রিম গার্ল। আর কারও না। তুমি এসব প্লিজ আর বলবে না। আমার ভালো লাগে না শুনতে।

মানবী: তোমার ভালো না লাগলে শুনতে হবে। এটা খুবই সাধারণ ঘটনা। সুন্দর মেয়ে দেখলে সব ছেলে ভালোবাসতে চায়। কতজনে যে প্রেমপত্র দিয়েছে। হি হি হি। কত গোলাপ, চকলেট, ডায়েরি, কলম, কার্ড, শাড়ি-চুড়ি, এমনকি ছাতাও পেয়েছিলাম।

মানব: কী! অন্যের জিনিস নিয়েছ? তুমি কী লোভী মেয়ে! আমার ভুল হয়েছে তোমাকে বিয়ে করে।

মানবী: আমার মনটা যে অনেক নরম। কারও দুঃখ সহ্য করতে পারি না। আমি বলতাম নেব না। সেকি একেকজনের কান্না। কান্না থামাতেই তো নিতাম। বেচারারা কত কিছুই না করেছে। কিন্তু সত্যি আমি তোমাকেই ভালোবাসি। আর কাউকে নয়।

মানব: হা হা হা। তুমি অনেক মানুষকে হিপনোটাইস করতে জানো। তোমার মিষ্টি কথার মায়াজালে সবাই জড়িয়ে যায়। যেমন আমি গেছি। আমি না পারছি তোমাকে ছাড়তে, আবার না পারছি তোমাকে সহ্য করতে। উফ্, আর পারছি না এই নারীর কথা শুনতে। তুমি একটা ডাইনি।

মানবী: ছি ছি, তুমি এসব কী বলছ কিং? মাঝ রাতে উচ্চ শব্দ করো না। লোকে শুনে ফেলবে। আমি যে এত বছর তোমার মতো একটা বদমেজাজি লোকের সঙ্গে ঘর করছি, সেটাই তো অনেক। তুমি আমাকে ভালোবাসো না?

মানব: বাসি; কারণ, তুমি আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালো লাগা। কিন্তু আমি যে তোমার প্রথম প্রেম নয়ই, সেটা আজ বুঝলাম। তুমি অনেক লোভী একটা মানুষ। তুমি আমাকে নয়, আমার টাকাকেই ভালোবাসো। যদি আমার টাকা না থাকত, তাহলে তুমি আমাকে ভালোবাসতে না।

মানবী: হ্যাঁ, সত্যি কথা। আমি টাকা চাই, অনেক টাকা। আমি টাকাকেই ভালোবাসি। আমি মহারানি হতে চাই। তুমি যদি কিং হও, আমি কুইন। আমার সব থাকবে। অন্যের থেকে অনেক বেশি। সবাই বাধ্য থাকবে আমাকে ভালো বলার জন্য। আমি কুইন আর সবাইকে আমি নাচাব। তুমি আর কিছু বলবে না। আমার ছেলে তিনটা ঘুমিয়ে পড়েছে। ওরা যেন কখনো না জানে, তার মা টাকাকে ভালোবাসে।

মানব: কী পাপ করেছিলাম, কী দেখে ভালোবেসেছিলাম? একটা মায়াবিনীর হাতের পুতুল হয়ে গেছি। এর থেকে কীভাবে বের হব জানি না।

মানবী: তোমাকে কেউ বের করতে আসবে না। ক্রান্তিকাল সহজে যাবে না। আর তুমি ঘরও থেকে পালাতে পারবে না। আমার সঙ্গেই তোমাকে থাকতে হবে। হি হি হি হি।

মানব: আসবে নতুন দিন। আসবে সোনালি আলো। সূর্যের প্রখর দাবানলে সব বিপদ কেটে যাবে। আমি আবার স্বাধীন হব, মনে রেখো।