স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে কুয়েত

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতেও হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। ধীরে ধীরে এর প্রকোপ বাড়তে থাকায় ১১ ঘণ্টা কারফিউর সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়। অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় পরে সেটা বাড়িয়ে রমজানে ২৪ ঘণ্টা কারফিউ ঘোষণা করে কুয়েত সরকার। দীর্ঘদিন লকডাউনের পর আক্রান্তের সংখ্যা একটু পরিবর্তন হওয়ায় গত ৩১ মে সেটা সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টাতে কমিয়ে আনা হয়। তবে যেসব এলাকায় আক্রান্ত বেশি পাওয়া গেছে—মাহবুল্লাহ, জিলিব আল সুয়েখ, ফরওয়ানিয়া, খাইতান, ময়দান হাওয়াল্লি—সেগুলো এখনো লকডাউনের আওতাভুক্ত আছে। কুয়েতে ১৬ জুন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৯৫৮। তবে প্রথম দিকে সুস্থের হার কম হলেও জুন মাসে সুস্থের হার বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন ২৮ হাজার ২০৬ জন।

যেহেতু আক্রান্তের সংখ্যা কমে সুস্থের হার বেশি হচ্ছে, সেহেতু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে কুয়েতের জনজীবন। এখানে শুরু থেকেই অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক বাস, টেক্সি, শপিং মল, সেলুন, বিউটি পারলার, ব্যাংক, পার্ক, মসজিদ ইত্যাদি বন্ধ ছিল। বর্তমানে ধীরে ধীরে কয়েক দফায় তা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। সর্বপ্রথম মসজিদে নামাজ বন্ধ করে দেওয়া কুয়েতে দীর্ঘদিন পর গত ১০ জুন (বুধবার) সীমিত আকারে জামাত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তবে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ে এখনো নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

কুয়েতের ৫ ধাপে সবকিছু খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম ধাপে ৩১ মে খুলে দেওয়া হয়েছে শিল্পকারখানা, হোম ডেলিভারি, গ্যাস, লন্ড্রি, ম্যানটিনেন্স, সিম কোম্পানি, ইন্টারনেট সেবা, ক্যাফে রেস্তোরাঁ (গাড়িতে বসে অর্ডার), হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক, গাড়ি গ্যারেজ, পার্টসের দোকান, পেট্রলপাম্প, সুপার শপ, জামিয়া ও বিভিন্ন কোম্পানির বাসগুলো।

দ্বিতীয় ধাপে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মক্ষেত্র (৩০ শতাংশের কম থাকবে), নির্মাণাধীন সেক্টর, আর্থিক ও ব্যাংকিং, বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স (সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চলবে), ডিপার্টমেন্ট স্টোর, রেস্তোরাঁ/ক্যাফে (অর্ডার গ্রহণ করা যাবে, বসে খাওয়া যাবে না), পাবলিক পার্ক এবং বাগান।

তৃতীয় ধাপে খুলবে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মক্ষেত্র (৫০ শতাংশের কম থাকবে), হোটেল, রিসোর্ট, হোটেল অ্যাপার্টমেন্ট, ট্যাক্সি (কেবল একজন যাত্রী নেওয়া যাবে) মসজিদ (শর্তসহ শুক্রবারের নামাজের জন্য খোলা হবে)।

চতুর্থ ধাপে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মক্ষেত্র (৫০ শতাংশের বেশি থাকবে), রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে (সামাজিক দূরত্বসহ), গণপরিবহন (সামাজিক দূরত্বসহ)।

পঞ্চম ধাপে সরকারি ও বেসরকারি খাত, জমায়েত, সামাজিক সমাবেশ, বিবাহ, ভোজ, স্নাতক সম্মেলন, ইভেন্ট, সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ কোর্স, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া ক্লাব, থিয়েটার এবং সিনেমা হল, সেলুন, বিউটি পারলার, পাবলিক স্পোর্টস ফিল্ড ইত্যাদি।

এ ভাবে পর্যায়ক্রমে সব খুলে দেওয়া হবে। জুলাই মাসের শেষ কিংবা আগস্টের শুরুতে প্রবাসীদের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরিয়ে আনার কথাও রয়েছে।

আরব টাইমস–এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের চূড়ান্ত শিখর শিগগির পার করবে কুয়েত। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২৬ জুন ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ৯৯ শতাংশ কমে আসবে। নিশ্চিত করা হয়েছে কুয়েতে করোনার মৃত্যুহার মাত্র শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ। ১৭ জুন থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর মাত্রা ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, যারা সুস্থ হয়েছে, তাদের সংখ্যা বেড়েছে। যেখানে মোট সংক্রমিত পৌঁছাবে ৩১ হাজারে এবং করোনা রোগীদের সেরে ওঠার সময়কাল তুলনামূলক কমে আসবে।

এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে প্রবাসীদের স্বার্থে কুয়েতের বাইরে থাকা বা ছুটিতে নিজ দেশে গিয়ে আটকে পড়া প্রবাসীদের আকামার মেয়াদ ছয় মাসের পরিবর্তে এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। এর ফলে এসব প্রবাসী দেশটিতে প্রবেশে বা অবস্থানের জন্য এক বছরের বৈধতা পেলেন। পাশাপাশি সব ধরনের ভিজিট ভিসা, গৃহকর্মী এবং যাঁরা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে কুয়েতে প্রবেশ করেছেন কিন্তু আকামাপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারেননি, তাঁদের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়েছে।