১০৫ ব্যাগ স্বর্ণমুদ্রায় তৈরি স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়ামে একদিন

প্রবেশ হল, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি।
প্রবেশ হল, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি।

গত বছরের বসন্তকালীন ছুটিতে ওয়াশিংটন ডিসি যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। এই রাজধানী শহর অনেক কারণেই বিখ্যাত, তার মধ্যে মিউজিয়াম অন্যতম। প্রায় সব কটি মিউজিয়ামই ন্যাশনাল মিউজিয়াম হিসেবে পরিচিত আর স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের অন্তর্ভুক্ত। সময় স্বল্পতার জন্য মাত্র তিনটি মিউজিয়াম দেখার সুযোগ হয়েছিল। এর মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছিল ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি।

আমার ঘোরাঘুরির পরিধি খুব সীমিত, তারপরও বলব এটা এখন পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মিউজিয়াম ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি। মানুষের বিবর্তন ইতিহাস থেকে শুরু করে বিলুপ্ত এবং বিপদাপন্ন প্রজাতির ফসিল, মিসরীয় মমিসহ আরও কত কিছু যে ছিল, তা দেখার জন্য এক দিন খুবই কম।


মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে আমাদের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। তবে পা ব্যথা হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নেই। প্রতিটা হল বা গ্যালারিতে কিছুদূর পরপর বসার জায়গা রয়েছে যেখানে আমাদের মতো ক্লান্ত অনেক দর্শনার্থীই কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ক্ষুধার্ত হলে মিউজিয়ামের ভেতরেই রয়েছে ক্যাফে আর প্রতিটি তলায় পানীয় জলের ঝরনা।


প্রতিদিন আমাদের মতো এমন প্রচুর দর্শনার্থী ডিসির মিউজিয়ামগুলো দেখতে আসেন আর তাঁদের আরও বেশি মিউজিয়াম ভিজিটের জন্য উৎসাহিত করতে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের অন্তর্ভুক্ত মিউজিয়ামগুলোতে কোনো এন্ট্রি ফি রাখা হয় না। এটা অন্য যেকোনো রাজধানী শহরের মিউজিয়ামের ক্ষেত্রে বিরল। এর পেছনে যাঁর অবদান রয়েছে তিনি হচ্ছেন জেমস স্মিথসন, এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। ১৮২৯ সালে মৃত্যুর সময় স্মিথসন তাঁর সারা জীবনের উপার্জন আমেরিকাকে দান করে দিয়ে যান। তাঁর অর্থ ১০৫ ব্যাগ ভর্তি স্বর্ণমুদ্রা আকারে ওয়াশিংটন ডিসিতে এসে পৌঁছায়। তাঁর অনুরোধ ছিল একটাই—তাঁর নামে তৈরি হবে একটি প্রতিষ্ঠান, যার উদ্দেশ্য হবে—জ্ঞানের উন্মেষ এবং সেই জ্ঞান মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এমন অনুরোধ ফিরিয়ে দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। ডিসির অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ভবনের সঙ্গে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট তৈরির কাজও শুরু হয়ে যায়।

হিউম্যান অরিজিনস হল, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি।
হিউম্যান অরিজিনস হল, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি।

আজকের দিনে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিউজিয়াম এবং রিসার্চ কমপ্লেক্স। শুধু ডিসির ন্যাশনাল মলেই (ডিসির প্রধান ভ্রমণ আকর্ষণ, যেখানে প্রায় সব কটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে) এর অন্তর্ভুক্ত ১১টি মিউজিয়াম এবং গ্যালারি রয়েছে। এ ছাড়া ডিসির অন্যান্য স্থানে এবং ভার্জিনিয়া ও নিউইয়র্কের কিছু মিউজিয়ামের অন্তর্ভুক্ত। এই মহামারির দিনে কিছু মিউজিয়ামের ভার্চ্যুয়াল ট্যুরের ব্যবস্থাও রয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে (http://www.si.edu )।


ওয়াশিংটন ডিসির মিউজিয়ামগুলো ঘুরে মনে হয়েছিল পৃথিবীর সবখানেই জ্ঞানের দরজা এমনভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত। কিন্তু নানান কারণে তা হয়তো আর হয়ে ওঠে না। অপেক্ষায় আছি এই মহামারি শেষে বেঁচে থাকলে আবারও কোনো এক বসন্তকালীন ছুটিতে ওয়াশিংটন ডিসি যাব শুধুই মিউজিয়াম দেখার জন্য।

(তথ্যসূত্র: বই, ওয়াশিংটন ডিসি, লেখক: আর কনরাড স্টেইন)

*শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা, ইউএসএ