স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট ও স্পিকারের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ

স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বরুট পাহোরের সঙ্গে ভিয়েনার বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর।
স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বরুট পাহোরের সঙ্গে ভিয়েনার বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বরুট পাহোরের সঙ্গে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানায় তাঁর নিজস্ব কার্যালয়ে ১৭ জুন বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন। একই সঙ্গে ১৬ জুন স্লোভেনিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বর্তমান স্পিকার ইগোর জেরোচিচের সঙ্গেও তাঁর নিজস্ব কার্যালয়ে মোহাম্মদ আবু জাফর সাক্ষাৎ করেন।

স্লোভেনিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের কোনো দূতাবাস নেই। তাই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসই স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সহায়তা করে থাকে।

বরুট পাহরের সঙ্গে আলোচনায় আবু জাফর প্রথমে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে তাঁকে আন্তরিকভাবে অভিন্দন ও ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে স্লোভেনিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার জন্যও তিনি বরুট পাহোরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বরুট পাহোরও এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে স্লোভেনিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতেও এ সম্পর্ককে আরও বেগবান করার জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে স্লোভেনিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে আবু জাফরের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন তিনি এবং তাঁকে স্লোভেনিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে ‘লিটল বার্ড অব গ্র্যাটিচিউট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

আবু জাফর বরুট পাহোর কাছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সমস্যার বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। এ সমস্যা সমাধানে খুব দ্রুত যাতে চিরস্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায়, সে জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে স্লোভেনিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন। বরুট পাহোর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ তাদের নিজ দেশে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সর্বোতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া স্লোভেনিয়ার বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রকল্পে বাংলাদেশ থেকে মধ্য ইউরোপের এ দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়েও আবু জাফরের সঙ্গে বরুট পাহোরের আলোচনা হয়।

আশা করা যাচ্ছে যে ২০২১ সালের দ্বিতীয় অর্ধাংশে স্লোভেনিয়া ইইউর সভাপতিত্বের ভূমিকা পালন করবে।

অন্যদিকে স্লোভেনিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার ইগোর জেরোচিচের বৈঠকে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সংসদের স্পিকারের পক্ষ থেকে তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। তিনি ইইউর পরবর্তী অধিবেশনগুলোয় স্বল্পোন্নত দেশগুলো, বিশেষ করে ট্রানজিশনের দেশগুলোর ওপর স্লোভেনীয় সরকারের নীতিগত সমর্থন ও পরিচালনা–সংক্রান্ত সহযোগিতা–সম্পর্কিত সব বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তের সময় পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য স্লোভেনিয়ার সরকারকে অনুরোধ করবেন, যাতে ২০২৪ কিংবা এর কাছাকাছি কোনো সময় সফলভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে সফলভাবে বের হয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

পাশাপাশি বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় স্লোভেনিয়ার সাফল্যের জন্য রাষ্ট্রদূত স্লোভেনিয়ার বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আবু জাফর ইগোর জোরোচিচকে জানান যে করোনা সংকট মোকাবিলায় স্লোভেনিয়া চাইলে বাংলাদেশ থেকে যথোপযুক্ত মূল্যে রেমডেসিভির ও পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট বা পিপিই আমদানি করতে পারে। এ ছাড়া তিনি স্লোভেনিয়ায় বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও মাছের বাজার সৃষ্টির জন্য প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থনের পাশাপাশি মাইগ্রেশন বা অভিবাসন–সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তি ও অভিবাসীদের ওপর কোভিড-১৯–এর প্রভাব–সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতিতে ইইউর পার্লামেন্টে স্লোভেনিয়ার সাংসদেরও সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ জানান।

শিগগিরই ভিয়েনার বিদায়ী রাষ্ট্রদূত আবু জাফর সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবু ধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন। স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি এবং স্লোভেনীয় সংসদের স্পিকার উভয়ই তাঁর পরবর্তী কার্যভারের জন্য সাফল্য কামনা করেছেন।