শিকড়ের সন্ধানে

শিকড়ের সন্ধানে সিডনির বাংলা স্কুলে সবার সমবেত প্রচেষ্টা
শিকড়ের সন্ধানে সিডনির বাংলা স্কুলে সবার সমবেত প্রচেষ্টা

হেমন্তের শেষ সময়। গ্রাম–বাংলার নতুন ধান তোলার উৎসব শেষ হয়েছে। এখন প্রায় সব চাষির বাড়িতেই কোলা (মাটির মাত্র) আর গোলা ভরা ধান। গ্রামে গ্রামে দলে দলে গোক্ষুনাথেরা চলে এসেছেন। তাঁদের হাতে মন্দিরা আর কাঁধে ঝোলা। চটের বস্তাগুলোকেই তাঁরা ঝোলার মতো করে কাঁধের ওপর দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

তাঁরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। গোয়ালঘরে ঢোকার দরজার মুখে বসে হাতের মন্দিরা বাজিয়ে সুর করে গান গেয়ে গোলাঘর বেঁধে দিচ্ছেন। যাতে পরবর্তী এক বছর কোনো প্রকার রোগজীবাণু গোয়ালঘরে ঢুকতে না পারে। গান শেষ হলে গোক্ষুনাথ তাঁর কোমরের বাঁধা গামছার পোঁটলা থেকে একটা কাঁসার বন্ধ বাটি বের করে সেটার ঢাকনা খুলে সেখান থেকে লাল রং ডান হাতের বুড়ো আঙুলে ঠেকিয়ে সেটা দিয়ে গোয়ালঘরের ওপরের দিকে চৌকাঠে তিনটা দাগ এঁকে দিচ্ছেন। তারপর গৃহস্থের কাছ থেকে তাঁর সাধ্যমতো ধান নিয়ে ঝোলায় ভরে পরের বাড়িটাতে যাচ্ছেন।

আবদুর রব ফকির
আবদুর রব ফকির

ছোটবেলায় বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই প্রতিবছর নিয়ম করে গোক্ষুনাথের এই গান শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। শুধু একটা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েও যে এমন মধুর সুরের গান করা সম্ভব, সেটা তাঁর কাছ থেকেই জেনেছিলাম।

দুই.  

পাশের পাড়ায় আলতাফ ফকির কিছুদিন আগে ফকির লাইনে মুরিদ হয়ে এসেছেন। মা-চাচিরা পরিকল্পনা করছেন তাঁর গান শুনতে যাবেন। তিনি অনেক ভালো দোতারা বাজিয়ে গান করেন। পায়ে হেঁটে আমরা তাঁর বাড়িতে হাজির হলাম। তিনি ঘরের মেঝেতে আসন মেলে বসে চোখ বন্ধ করে একমনে দোতারা বাজিয়ে চলেছেন। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বাজানোর পর তিনি আরও কিছুক্ষণ ধরে শুধু হা শব্দটাই অনেকক্ষণ ধরে টেনে টেনে বলেন। তারপর সেটা শেষ হলে গান ধরেন। পুরুষ মানুষেরা আর ছোটরা আমরা ঘরের মধ্যে ঢুকে তাঁর কাছাকাছি বসে গান শুনছি আর নারীরা অন্য ঘরে বসেছেন। যাতে পুরুষদের সঙ্গে তাঁদের দেখা না হয়ে যায়।

নিজের বানানো দোতারা হাতে পরান ফকির
নিজের বানানো দোতারা হাতে পরান ফকির

আলতাফ ফকির মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে গান করে যাচ্ছেন আর পাশাপাশি তাঁর দোতারা বাজিয়ে চলেছেন একমনে। আমরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর গান শুনছি আর দোতারা যন্ত্রটা দেখে অবাক হচ্ছি। একটা ময়ূর আকৃতির কাঠের পাটাতনের ওপর মাত্র চারটা তার বসানো। সেখান থেকেই বের হচ্ছে বিভিন্ন রকমের সুর। এখনো চোখ বন্ধ করলে আলতাফ ফকিরের মাথা দুলিয়ে গান করার দৃশ্য চোখে ভাসে।

তিন.  

গ্রামে প্রতিদিনই কিছু মানুষ বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করতে আসেন। বেশির ভাগই সাধারণ ভিক্ষুক। তাঁরা এসে সরাসরি ভিক্ষা বা খাবার চান। তারপর সেটা পান বা না পান গৃহস্থের জন্য দোয়া করে বিদায় নেন। দু-একজন জাঁদরেল ভিক্ষুক ভিক্ষা না পেলে গোল বাঁধান। এর মধ্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একজন ভিক্ষুক ছিলেন, যিনি হয়তো বছরে এক বা দুবার আসতেন। তিনি সারাক্ষণই তাঁর ডান হাতে ধরা একতারা বাজিয়ে যেতেন।

নিজের বানানো দোতারা হাতে পরান ফকির
নিজের বানানো দোতারা হাতে পরান ফকির

তাঁর একতারার বাজনা শুনলেই আমরা ছোটরা বাড়ির বাইরে এসে তাঁর পিছু নিতাম। তিনি সাধারণত বাড়ির সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একতারার সুরে কোনো একটা গান ধরতেন। আমরা সেটা শোনার অপেক্ষায় থাকতাম। তাঁর গলার স্বর ছিল অসম্ভব কোমল। শুনলেই মনের মধ্যে তাঁর জন্য এক অদ্ভুত মায়া তৈরি হতো। তাঁর পিছু নিয়ে ক্লান্ত হয়ে আমরা একসময় ফিরে আসতাম। কিন্তু তার প্রভাব থাকত অনেক দিন পর্যন্ত। আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত তাঁকে আগে কে দেখেছে।

চার. 

পাশের পাড়ার একজন অন্ধ মানুষ মাঝেমধ্যে ভিক্ষা করতে আসতেন। অবশ্য তাঁর সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারটাকে আমরা ভিক্ষা বলতাম না। বলতাম তাঁর গান শুনতে যাচ্ছি আমরা। তিনি সাধারণত প্রত্যেকটা পাড়ায় এসে মাতব্বরের বাড়ির সামনে বা রাস্তার তেমাথায় অপেক্ষা করতেন। মানুষ জড়ো হলে গান ধরতেন। তিনি তাঁর ছোট মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করতেন। মেয়েটা তাঁর হাত ধরে আগে আগে চলত আর তিনি পেছনে পেছনে।

তেমাথায় একটি বাড়ির বাইরের খোলায় তিনি গোল হয়ে নেচে নেচে গান পরিবেশন করতেন। তাঁর এক হাতে থাকত খঞ্জনি আর অন্য হাতটা গানের তালে তাল মিলিয়ে অনবরত দুলিয়ে যেতেন। শুধু খঞ্জনি বাজিয়েও যে এমন মধুর গান করা যায়, তাঁকে দেখার আগে আমাদের জানা ছিল না। গান শেষে প্রত্যেকেই তাঁর নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী তাঁকে সাহায্য দিতেন। কারও টাকা না থাকলে বাড়ি থেকে চাল বা ধান এনে দিতেন। আমরা মনে মনে তাঁর মেয়েটার জন্য ঈর্ষান্বিত বোধ করতাম। যে ও কত সৌভাগ্যবান, সারাক্ষণই তাঁর বাবার মধুর গান শুনতে পায়।

পাঁচ. 

নদীভাঙনের পর কুষ্টিয়ার শহরতলি বাড়াদীতে বসবাস করতে গিয়ে সন্ধান পেলাম বাউল আবদুর রব ফকিরের। আমরা অবশ্য তাঁকে রব চাচা বলেই সম্বোধন করতাম। আমাদের পাড়ার নাম ধোপাপাড়া। তার পূর্বে বাবুপাড়া। আর তার পূর্বে ফকিরপাড়া। বাড়াদীতে বসবাস করার শুরুতে আমরা ছোটরা কোনোভাবেই বুঝতে পারতাম না, ফকিরপাড়ার কেউই ভিক্ষা না করলেও কেন ওই পাড়াটাকে ফকিরপাড়া বলা হয়। পরবর্তী সময়ে বুঝেছিলাম ওই পাড়ার সবাই লালন ফকিরের মুরিদ। তাই এমন নামকরণ। তার মধ্যে রব চাচা ছিলেন অনেক বড় মাপের লালন সাধক ও গবেষক।

এটা অবশ্য জেনেছিলাম তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে। আসলে তিনি এতটাই নিভৃতচারী ছিলেন সত্যি কথা বলতে আমরা তাঁকে তেমন একটা পাত্তায় দিতাম না। অবশ্য তিনিও কারও মুখাপেক্ষী ছিলেন না। রাস্তার বাঁ দিক দিয়ে নীরবে সাইকেল চালিয়ে তাঁর কর্মস্থল কুষ্টিয়া চিনিকলে যেতেন আর আসতেন। আবার কখনো তাঁর ডান কাঁধে একটা লাল রঙের ঝোলা থাকত। আমরা জানতাম ওটার মধ্যে দোতারা রাখা।

রব চাচাদের বাড়িতে বছরে অন্তত একবার সাধুসঙ্গের আসর বসত। তখন দেশ–বিদেশের শত শত বাউল তাঁর বাড়িতে গিজগিজ করতেন। আমরা মায়ের সঙ্গে সেটা দেখতে যেতাম। পরবর্তী সময়ে তিনি মারা যাওয়ার পর ইউটিউব ঘেঁটে তাঁর অনেক সাক্ষাৎকার ও দেশ–বিদেশে তাঁর পরিবেশনা দেখেছি। সেগুলো থেকেই সাধুসঙ্গ, মুরিদদের জীবনপ্রণালি ও চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনেছি। সেখান থেকেই বুঝেছি বাউলদের জীবন হবে অত্যন্ত অনাড়ম্বর। জাগতিক কোনো কিছুর প্রতি তাঁদের মোহ নেই বরং উল্টো তাঁরা মানুষকে জীবনের প্রকৃত রূপ সন্ধানের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। সত্য কথা বলতে হবে, সহজ পথে চলতে হবে আর গুরুকে ভজতে হবে। এগুলোও তাঁর মুখ থেকেই শোনা।

রব চাচা বাংলার মতো বিখ্যাত ব্যান্ডের সঙ্গেও গান করেছেন আবার ঘুরেছেন পৃথিবীর প্রায় পঞ্চাশটার ওপরের দেশ। তবুও তাঁর বাড়িঘর ও জীবন যাপন ছিল একজন প্রকৃত বাউলের জীবনধারার আলোকে আবর্তিত। তিনি কখনোই কারও সঙ্গে একটা কথা উঁচু গলায় বলেননি। বাড়িঘরের অবস্থায় তথৈবচ। কোনোমতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে শুধু। তাঁর ছেলে পরান ফকির বয়সে আমাদের ছোট হলেও আমাদের বন্ধুর মতো। পরান ফকিরকে আমরা পরানদা বলে সম্বোধন করি। তিনি এখন দোতারা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

ছয় .

এভাবে চলতে চলতে কখন জানি মনের গভীরে বাংলাদেশের লোকসংগীত ও বাউলসংগীতের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে। এটা এখনো অক্ষুণ্ন আছে। আশা করি আমরণ এই ভালোবাসাটা চিরজাগরুক থাকবে। ছোটবেলায় শোনা আব্বাসউদ্দীন, আবদুল আলীমের গান থেকে শুরু করে হালের দোহার, বাংলা বা লালন ব্যান্ডের গান তাই অনেক প্রিয়। এ ছাড়া ভ্যানে করে যাঁরা মালয় (আইসক্রিম) বিক্রি করতেন তাঁরা মুজিব পরদেশী বা আশরাফ উদাসের গান বাজাতেন। সেগুলোও অনেক ভালো লাগে এখন পর্যন্ত।

অন্য অনেক ভাষার বা অন্য ঘরানার গান শোনা হলেও দিন শেষে অন্তরের প্রশান্তির জন্য এসব গানের কাছে ফিরে আসি। অনেক বড় বয়সে বাউল শাহ আবদুল করিমের গান শুনেছি। তাঁর জীবনবোধের সঙ্গে রব চাচার জীবনবোধের মিল খুঁজে পেলাম। তাঁর গানগুলোও অনেক শ্রুতিমধুর ও প্রাণস্পর্শী। এ ছাড়া বাংলাদেশের লালনগীতির অন্যতম গায়িকা ফরিদা পারভীনের গাওয়া গানগুলো অনেক বেশি ভালো লাগে। তাঁর গায়কির সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য দিক হচ্ছে তিনি প্রত্যেকটা শব্দ উচ্চারণ করেন প্রচণ্ড রকমের আন্তরিকতা দিয়ে।

সাত.  

জীবনের গতিময়তায় একসময় দেশান্তরী হয়ে সিডনিতে প্রবাসজীবন বেছে নিলেও মনের মধ্যে লোকগান বা বাউল গানের প্রতি ভালোবাসা একটুও কমেনি। বরং বেড়ে গেছে। অফিসে ইউটিউব থেকে গান এমপিথ্রি ফরম্যাটে কনভার্ট করে সেটাকে আবার সিডিতে রাইট করে গাড়িতে বাজাই সারাক্ষণ। আর কারও কাছে বাংলাদেশি বাদ্যযন্ত্র দেখলেই একটু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি। এভাবেই একদিন স্বপন ভাইয়ের বাসায় দেখি দোতারা। তিনি বাংলাদেশ থেকে মুনা ভাবির বোনের মাধ্যমে সেই দোতারা এনেছেন। হাতের কাছে পেয়ে শৈশবে দেখা বাদ্যযন্ত্রটা নেড়েচেড়ে দেখলাম। কিন্তু কিছুতেই যেন সাধ মিটছিল না।

বাংলাদেশের বাদ্যযন্ত্র হাতে তাইশা ও কায়সান
বাংলাদেশের বাদ্যযন্ত্র হাতে তাইশা ও কায়সান

পরে তাঁর দোতারার তার ছিঁড়ে গেলে আমি আমার এক ছাত্রীর মাধ্যমে কুষ্টিয়ার লালনের আখড়ার সামনের দোকানগুলো থেকে তার আনিয়ে দিলাম। আমি মাঝেমধ্যে স্বপন ভাইয়ের দোতারাটা হাতে নিয়ে সামান্য টুংটাং করি। কিন্তু শেখার মতো সাহস বা ধৈর্য কোনোটাই আমার নেই। স্বপন ভাই লেগে আছেন। তিনি অনলাইনে ইতিমধ্যে আহমেদ তারিক ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। আহমেদ তারিক ভাই স্বশিক্ষিত দোতারা বাদক। এ ছাড়া তিনি অন্য অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন। যেমন বাঁশি খঞ্জনি ইত্যাদি।

এরপর একদিন স্বপন ভাই তারিক ভাই ও তাঁর মেয়ে তাইশা এবং কায়সানকে বাংলা স্কুলে নিয়ে এলেন। তারিক ভাইয়ের সঙ্গে আরও এলেন শাহরিয়ার ভাই। তারিক ভাই নিজের তাগিদে দোতারা বাজানো শিখেছেন। সিডনির সমমনা লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা ব্যান্ডের মতো দলও বানিয়েছেন। নাম তার শিকড়। তাঁর ইচ্ছে প্রবাসী দ্বিতীয় প্রজন্মকে বাংলাদেশের বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের অন্তরের ক্ষুধা মেটানোর জন্য নিজেদের মধ্যে মাঝেমধ্যে পরিবেশন করা। তাঁর ছেলেমেয়ে দুজনই বাবাকে এই কাজে সঙ্গ দেয়। যার ফলে এই ছোট বয়সেই তাদের তালজ্ঞান অনেক প্রখর। শাহরিয়ার ভাইও তারিক ভাইকে সংগত দেন। পাশাপাশি লেখালেখি করেন। নতুন নতুন দেশ ও ভাষার মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও তাদের ভাষা সম্বন্ধে জানা তাঁর শখ।

তাঁরা যেদিন বাংলা স্কুলে এলেন সেদিন আমার যেতে একটু দেরি হয়ে গেল। পরে গিয়ে দেখি তাঁরা বিভিন্ন রকমের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে টিউনিং করছেন। তাঁদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আমরা আবদার করলাম আমাদের কিছু বাজিয়ে শোনানোর জন্য। তাঁরাও সানন্দে রাজি হলেন। ইতিমধ্যেই স্কুলের ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়াতে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা এসে আমাদের সঙ্গে শ্রোতৃমণ্ডলী হিসেবে যোগ দিলেন। বাচ্চারা সব বাদ্যযন্ত্র দেখছিল আর প্রশ্ন করে যাচ্ছিল। তারিক ভাই, শাহরিয়ার ভাই, বিধান দাদা আর স্বপন ভাই দাঁড়িয়ে গেলেন আর সেই সঙ্গে যোগ দিল তাইশা আর কায়সান। যেকোনো পরিবেশনায় সামনাসামনি অনেক মনোমুগ্ধকর। আর সেটা যদি হয় শৈশব–কৈশোরে শোনা বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনা, তাহলে ভালো লাগাটা অনেক গুণ বেড়ে যায়। তাদের একের পর এক পরিবেশনা শেষ হলে আমি, আশফাক ভাই ও রহমত ভাই আমরা যন্ত্রগুলো নেড়েচেড়ে দেখলাম। আবদার করলাম এখন থেকে আমাদের মাঝেমধ্যে বাজিয়ে শোনাতে। তাঁরা বলছিলেন তাঁদের সঙ্গে বাজনাতে যোগ দিতে। কিন্তু আমি রাজি হলাম না। কারণ, আমার সংগীত বা বাদ্যযন্ত্র বিষয়ে জ্ঞান শূন্যের কোঠায়।

বহু সংস্কৃতির দেশ অস্ট্রেলিয়া। এ দেশ সরকারিভাবে সব ভাষা ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের জন্য অনেক বেশি উদ্যোগী। বাংলা স্কুলপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আর তারিক ভাইয়ের মতো কিছু পাগলাটে মানুষ প্রবাসী প্রজন্মকে বাংলাদেশের তাঁদের ফেলে আসা শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কাজটা করে যাচ্ছেন। নিজ উদ্যোগে বিনা পারিশ্রমিকে। আশা করি প্রবাসে বেড়ে ওঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁদের মধ্যে এগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করে যাবে। এতে করে তাঁদের একই সঙ্গে শিকড় ও অন্য দেশের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান তৈরি হবে। তখন সবাই একে অপরের প্রতি সহনশীল আচরণ করবে। কারণ, বর্তমান অস্থির পৃথিবীতে সহনশীলতার বড্ড অভাব।