কানাডায় নীরবে চলে গেল একটি শিক্ষাবছর

মা–বাবার সঙ্গে স্কুলের সামনে একজন ছাত্র। ছবি: মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান
মা–বাবার সঙ্গে স্কুলের সামনে একজন ছাত্র। ছবি: মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান

সোয়েব রহমান খান কানাডার ম্যানিটোবা প্রভিন্সের ফোর্ট রিচমন্ড কলেজিয়েট স্কুলে এ বছর টেন গ্রেড শেষ করল। তাদের ‘ভিডিও প্রোডাকশন’ নামে পাঠ্য বিষয় রয়েছে। এই বছর এপ্রিল মাসে তাদের ক্লাসের কয়েকজনের ভিডিও শুটিংয়ের জন্য আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। কোভিড-১৯–এর কারণে সেই প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়।

সাজিদ রহমান খান ম্যানিটোবার ডালহৌসি স্কুলে এই বছর শেষ করল। আগামীবার সে হাইস্কুলে যাবে। দীর্ঘ ছয় বছর এই স্কুলে পড়ার পর সে আশায় ছিল একটি জমজমাট গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম হবে। তা এবার হলো না। শুধু মা–বাবার সঙ্গে অন্য ১০ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে খুবই ঘরোয়াভাবে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট।

কোভিড-১৯–এর ফলে কানাডা থেকে অনেকটা নীরবে চলে গেল ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম। মূলত মার্চ মাসের প্রথম দিক থেকে কানাডার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারেনি। ক্লাসে বসে শিক্ষা কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। তবে অনলাইনে সীমিত আকারে কিছু ক্লাস চললেও এর মান এবং কতটা ফিজিক্যাল ক্লাসের মতো ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম এই বছর এখানকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল সম্পূর্ণ নতুন। ফলে তাদের ধরতে অনেক অসুবিধা হয়েছে। আর সব শিক্ষার্থীর সমানভাবে এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ইউনিভার্সিটি অনলাইন ক্লাস মোটামুটি সফলভাবে করতে পারলেও জুনিয়র স্কুল, হাইস্কুল ও কলেজগুলোতে এই কার্যক্রম সেভাবে সফল হয়নি। স্কুলের শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি।
অনেকের কম্পিউটার ও অনলাইন ক্লাস করার মতো টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট না থাকার কারণে এই কার্যক্রম সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি। কানাডার অধিকাংশ প্রভিন্স কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড সিক্স পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষার বিধান এমনিতেই নেই। আর ওপরের ক্লাসগুলোতে দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এবং গত তিন মাসের অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে এই বছর অনেকটা ‘অটো প্রমোশন’ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট কার্ডে মূল্যায়ন করার সময় প্রতিটা বিষয়ে মার্চ মাসে (সেকেন্ড টার্ম) যে নম্বর পেয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে জুন মাসের (থার্ড টার্ম) অর্থাৎ ফাইনাল পরীক্ষার গ্রেড ঠিক করা হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী দ্বিতীয় টার্মে পিছিয়ে ছিল, তারা যে কয়েক দিন অনলাইনে পড়াশোনা হয়েছে, সেখানে তারা ভালো করলে তাদের উচ্চ গ্রেডিং দেওয়া হয়েছে।

চলতি মাসে অর্থাৎ এই জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সীমিত আকারে স্কুলগুলো গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম সেরে ফেলেছে। অন্য বছরগুলোতে ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণভাবে গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম করা হলেও এই বছর সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে ৮ থেকে ১০ জন করে শিক্ষার্থীকে স্কুল ও কলেজে ডেকে গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম আলাদা আলাদাভাবে করা হয়েছে।

ঘরোয়া পরিবেশে গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট প্রদান। ছবি : মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান
ঘরোয়া পরিবেশে গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট প্রদান। ছবি : মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মার্চ পর্যন্ত ক্লাস হলেও আগামী বছরের কার্যক্রম নিয়ে চিন্তিত এখানকার ছাত্রছাত্রীরা। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া ২০২০-২১ শিক্ষাবছরের ফিজিক্যাল ক্লাস এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত।

কানাডার কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড টুয়েলভ পর্যন্ত যে শিক্ষা কারিকুলাম রয়েছে, সেখানে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলোকে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়। স্কুলগুলো বন্ধ থাকার ফলে এসব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। স্কুলগুলোতে বিভিন্ন ক্লাব ও খেলাধুলার পাশাপাশি অনেক কিছু শিখিয়ে দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রান্না শেখা, কাঠের কাজ, মিউজিক ক্লাস, আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কানাডার ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন দেশে শিক্ষাসফরের ব্যবস্থা সবকিছুই বন্ধ ছিল এই বছর। এখানকার স্কুল-কলেজের লাইব্রেরি ও ল্যাবগুলো বেশ মানসম্মত। ছাত্রছাত্রীরা মার্চ মাসের পর এগুলো ব্যবহার করতে পারেনি।

অন্যদিকে মার্চের পরে ইউনিভার্সিটিগুলো বন্ধ থাকার ফলে ফিজিক্যাল ক্লাস বন্ধ। তবে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে বিদেশ থেকে কোনো স্টুডেন্ট কানাডায় আসতে পারছে না। তবে তারা অনলাইনে নিজ নিজ দেশে বসে ক্লাস করছে। ফলে লাখ লাখ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কানাডায় বসে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।