তোমাদের নগরে

তোমাদের নগর সত্যিই আমাকে এক বিন্দুও টানে না 

তার হাজার একটা কারণ বলা যাবে
কোথা থেকে শুরু করব বলো
মৌলিক অধিকারগুলো নিয়ে শুরু করি কী বলো

অন্ন.
তোমাদের ঘরে অন্ন নিত্য হয় নষ্ট
কিন্তু তোমাদের বাসার সামনের ফুটপাতেই অভুক্ত শিশু ঘুমায় দিনের পর দিন
আর যেই কৃষক তোমাদের অন্ন জুগিয়ে চলেছে অহোরাত্র পরিশ্রমে
তোমরা তাকে অবজ্ঞা করে নাম দিয়েছো চাষা
যদিও তোমার পূর্বপুরুষ সেই চাষাই ছিল
তোমরা কি জানো মাটি তোমাদের মা
জানো না নিশ্চয় আর জানলেও মানো না
তোমরা কি জানো তোমার মায়ের উর্বরভূমির লোভেই এসেছিল
ফিরিঙ্গি মোগলসহ সব বর্গি

বস্ত্র.
আচ্ছা, তোমাদের কতগুলো পোশাক লাগে এক দিনে
সে হিসাব সহজে মিলাতে পারবে না তোমরা, আমি জানি
তোমাদের পোশাক বদলায় বেলায় বেলায়
কিন্তু পোশাকশ্রমিকটার ভাগ্য কেন বদলায় না, বলতে পারো।
জানি তোমরা জানলেও বলবে না
কারণ তার শ্রমের টাকার ওপরেই তো তোমাদের সুদৃশ্য ইমারত

বাসস্থান.
আচ্ছা, তোমাদের বাসস্থান নাকি অনেক ছোট
হাজার হাজার স্কয়ার ফিটের কক্ষেও নাকি তোমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে
জায়গার জন্য তোমাদের ইমারত প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে
তবুও তোমাদের ফুসফুস খুঁজে ফিরে বাতাসের অক্সিজেন
অবশ্য তোমরা যতই আকাশের পানে যাবে, ততই তোমাদের ফুসফুস করবে হাহাকার
কারণ তোমার কক্ষের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য লাগাওনি একটা গাছ
গাছগুলো পড়ে আছে তোমাদের দু-একটা পার্কে বেওয়ারিশ হয়ে
যেকোনো অছিলাতেই তোমরা আবার সেটাকে কেটেও ফেলো
আর আকাশে তো নদী নেই তাই চাইলেই পারো না দিতে ডুব
পারো না ভাসতে স্রোতে
তোমাদের বাথটাবে তোমাদের নাকি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

চিকিৎসা.
আচ্ছা, তোমরা যে এত হাইজিন মেনে চলো
তবুও তোমরা কেন অসুস্থ হও বলো তো
আর ছেলেমেয়েগুলোকে করেছো বাক্সবন্দী
হাত চলায় ফেঁদেছো নিয়মের বেড়াজাল
এটা কোরো না, ওটা কোরো না, ওটা খারাপ
এসব ভাবতে ভাবতে ওরা হয় নাকাল
বড় হতে হতে বুঝে যায় শহরের বাইরের সবকিছুই খারাপ, সবকিছুই অপাঙ্‌ক্তেয়
আসলেই কি তাই
আর তোমাদের চিকিৎসাসেবা
কী বলব তার কথা
সামান্য একটু গরম বায়ু নির্গত হলেও তোমরা যাও কবিরাজের কাছে
যত বড় ফর্দ তত ভালো তার চিকিৎসা
আচ্ছা, তোমাদের রোগটা আসলে কোথায় বলো তো
মনে, নাকি শরীরে, নাকি তোমাদের সমাজব্যবস্থায়।

শিক্ষা.
আর তোমাদের শিক্ষার কথা কী বলব বলো
এই শিক্ষাটাই তো তোমাদের আসল অশিক্ষা
এই শিক্ষাটার কারণেই তো তুমি আজ উঁচুতলার মানুষ
আর বাকি সবাই নিচুতলার ছোট
আচ্ছা বলো তো এই শিক্ষা দিয়ে তোমরা দুনিয়ার কী উদ্ধার করেছো
গড়েছো তো পুঁজিবাদ
নিজের আখের গোছানোর আশায়
এতে কি তোমাদের শেষ রক্ষা হচ্ছে
আর তোমরা তোমার চাষা বাবার রক্ত ঘাম করা যে পয়সা দিয়ে শিক্ষাটা নিয়েছিলে
কেন সকলের সামনে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিতে তোমাদের বাধে
তোমাকে তো এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলেন তোমার অশিক্ষিত বাবা-মা
তাঁরা তো কখনো তোমার কাছ থেকে কিছু চাননি
তবুও শুধু সম্মানটুকু দিতেও তোমার বাধে
আচ্ছা সম্মান না দিলে অসম্মানটা তো না করলেও পারতে

উপসংহার.
এই যে তোমাদের আয়েশের জীবন
একটু জোরে ঢেকুর উঠলেই যেটা হয়ে যায় ছারখার
সেটা নিয়ে তোমরা কী করবে
তুমি কি একটিবারের জন্যও তোমার প্রতিবেশী বা শিকড়ের খবর নিয়েছো
নাকি তাতে তোমার পানশালার খরচ কমে যাবে
কমে যাবে তোমার ফুকো স্ট্যাটাস
আহারে তোমাদের বালির বাঁধ
করোনা এসে দিল তো উড়িয়ে
এরপরও কি তোমাদের টনক নড়বে
উঠবে কি জেগে বিবেক
সবাইকে নিয়ে শিখবে কি বাঁচতে
নাকি হয়ে যাবে আগের চেয়েও স্বার্থপর
হলে হও সেটা তোমাদেরই নিয়তি
গ্রামের চাষা ভুষোরা সবকিছুকেই মানেন নিয়তির খেলা
তাই অকালে মরে গেলেও থাকে না কোন আক্ষেপ
মনে মনে ভেবে নেন সবই বিধাতার ইচ্ছে।

পাদটীকা:
আচ্ছা তোমাদের মনে কি শান্তি আছে
আছে কি দুদণ্ড অবসর
যাও অন্যকে নিয়ে ভাবা লাগবে না
নিজেকে নিয়ে কি ভেবেছো একটিবার
কী চাও তুমি, কোথা থেকে এসেছো, যাবেই বা কোথা
ভাবো ভাবো অন্তত একটিবার
না হলে শুধু একটি সংখ্যা হয়েই কাটিয়ে দেবে একটা জীবন
জীবন হয়ে জন্ম নিয়ে কাটাবে জড়ের জীবন
এই কি ছিল তবে তোমাদের ভবিতব্য?