চাই বিষণ্নতার ছুটি

মানুষের বয়স থাকে, তবে হতাশার কোনো বয়স নেই। জীবনের গল্পে কম-বেশি সবাই যোদ্ধা। তবুও কেন আমাদের অনেকেই পরাজয় বরণ করেন? এ কি শুধুই নিয়তি, নাকি নিজের প্রতি বিশ্বাসের অপমৃত্যু? হঠাৎ সিদ্ধান্তের জয় কিঞ্চিৎ। তাই কথায় আছে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।

একজন মানুষের হতাশার কারণ অনেক, তবে ভিন্নতা নতুন কিছু নয়। প্রতিটি মানুষ বাঁচার জন্য লড়ে, কিন্তু লড়বে বলে বাঁচে না। কিছু ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের মানসিকতাকে সব সময়ই পিছিয়ে দেয়। আজকে কিছু হতাশার কারণ জানব, সমাধানও খুঁজতে চেষ্টা করব।

১. হীনম্মন্যতা
আমাদের নিজের প্রতি বিশ্বাসহীনতা সব সময় হীনম্মন্যতার দিকে ঠেলে দেয়। আমি কি পারব? নাকি পারব না—এই প্রশ্নবাণে যেন এলোমেলো হয়ে যায় হৃদয়ের নগরী। পৃথিবীতে পারব না বলে কিছু নেই। তাই তো কবি বলে গেছেন, একবার না পারিলে দেখো শতবার। রবার্ট ব্রুস কিংবা মাশরাফি বিন মুর্তজার লড়াকু ইতিহাস কে না জানে? তাই নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন।

২. বিরহ
জীবনে প্রেম থাকলে বিরহ আসবেই। প্রেম আর বিরহ জ্যামিতীয় আকারে বিদ্যমান। আপনার সুস্থ সুন্দর জীবনে বিরহ কখনো ৯০ ডিগ্রি বাঁকে, আবার কখনো বা ১৮০ ডিগ্রি বাঁকে আপনাকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো তছনছ করে দেবে। আর এতেই যদি আপনি নিঃশেষ হয়ে যান, তাহলে আপনার জীবন এখানেই থেমে যাবে। তাই বেশি বেশি গল্পের বই পড়ুন আর অজানায় ভ্রমণ করে আসুন। বিশেষ করে পাহাড় কিংবা সমুদ্র, এতে আপনার মনে বাড়তি খোরাকের জোগান দেবে। একটি সুন্দর ভ্রমণ আপনার জীবনকে আগের মতো বদলে দিতে পারে। তবে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে মোটেও ভুলবেন না। প্রাণ খুলে হাসতে চেষ্টা করুন। সার্বক্ষণিক ধর্মীয় বই পড়ুন। নিয়মিত শরীরের যত্ন নিন। অর্থাৎ নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন, তাহলেই অন্যদের ভালোবাসতে পারবেন।

৩. বেকারত্ব ও চাকরি
পৃথিবীতে বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিনিয়ত অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন। তাহলে কী করা উচিত? একটা ছোট ব্যবসা অথবা সৃজনশীল কোনো সময় উপযোগী কাজ। একজন কর্মজীবী বৃদ্ধি পেলে, দেশে একজন বেকার কমে যায়। তবুও আর্থিক সংকটে অনিশ্চিত জীবন। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট মধ্যবিত্তের। নিম্নবিত্তের সংসারের বাতিটুকু নিভু নিভু, এই বাতি নিভলে কখনোই জ্বলে না। আর মধ্যবিত্তের আশার প্রদীপ আত্মসম্মানের কাছে জ্বালানির মতো। এই বুঝি শেষ হলো! তবুও স্বপ্নের দিগন্তে আকাশ ছাড়ি মহাকাশ।

একদিন সব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যাবে। অবশ্যই একদিন আসবেই সোনালি দিন।

৪. অর্থসম্পত্তি
ধনসম্পত্তি জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই পৃথিবীতে কারও কম, কারও বা বেশি। আপনার কম বলেই, নিজেকে ছোট মনে করা ঠিক নয়। জীবনে অর্থসম্পত্তিই সব নয়। জীবনকে হালালভাবে উপভোগ করুন। আমাদের জন্য দুনিয়াটা খুব অল্প দিনের। তাই সৎ পথে চলুন। সর্বদা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন।

৫. ক্ষমতা
পৃথিবীর মাঝে ক্ষমতার আধিপত্য যুগ যুগ থেকে চলে আসছে। ক্ষমতা আর শরীরের শক্তি কখনোই স্থায়ী নয়। তাই আপনার ক্ষমতা ভালো কাজে ব্যবহার করুন। সবার কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। গরিব ও মজলুমের পাশে এসে দাঁড়ান। যেভাবে এক মুসলিম আর এক মুসলিমের পাশে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।

৬. অহংকার ও খারাপ আচরণ
অনেকেই খারাপ আচরণে অভ্যস্ত, যা প্রতিনিয়ত মানুষকে বিকারগ্রস্ত করে। অহংকার অস্বচ্ছ কাচের মতো, যার ওপাশটা স্পষ্ট নয়। একটি মানুষের ব্যবহার সুন্দর ও সাবলীল হওয়া উচিত। আপনার সুন্দর আচরণ সবাইকে মুগ্ধ করবে। ঠিক সেভাবেই কথা বলুন, যেভাবে কথা বললে হৃদয়ের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পায়। তাই বিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন।

৭. মিথ্যা ও অসততা
সত্য সর্বদা প্রতিষ্ঠিত, আর মিথ্যা নিগৃহীত। অসততা মানুষকে সাময়িক শান্তি দিলেও, স্থায়ী শান্তি দিতে অপারগ। তাই সত্যের মৃত্যু নেই। আপনার অসততা আপনার পেছনে তাড়া করবে, আর আপনার সততা আপনাকে শান্তি ও তৃপ্তি দেবে। সৎ পথে অনেক বাধা-বিপত্তি থাকতেই পারে, কারণ এটি সবচেয়ে দামি জিনিস। যেটা শুধু সৎ মানুষই অর্জন করতে পারেন। তাই সততার সঙ্গে সৎ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন।

৮. অনৈতিকতা ও চরিত্র
অনৈতিকতায় জীবনের অনেকটা সময় কেটে যায়। প্রতিটি মানুষের চরিত্র গঠনে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ সব শেষ করে দিয়ে একটা সময় হয়তো উপলব্ধি আসে, তবে সেটা অনেক আগেই আসা উচিত। পরবর্তী জীবনের জন্য নীতিগতভাবে সৎ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিষণ্নতার ছুটি হওয়া চাই। সফলতার গল্পে আমিও একজন হব। তাই আমাদের জীবন আমাদেরই সাজাতে হবে। তবেই সুস্থ সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারব। সত্যিই জীবন অনেক সুন্দর।

সবার জন্য শুভ কামনা।


*শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি হায়ার স্কুল অব ইকোনমিকস, মস্কো, রাশিয়া