স্লোভেনিয়াতে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ

ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য মেডিকেল ইকুয়েপমেন্ট ক্রয়ে সরকারের করা চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবি: দ্য স্লোভেনিয়ান টাইমস
ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য মেডিকেল ইকুয়েপমেন্ট ক্রয়ে সরকারের করা চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবি: দ্য স্লোভেনিয়ান টাইমস

গত ১৫ মে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে স্লোভেনিয়া করোনা ভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতির অবসানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু গত কয়েক দিনে স্লোভেনিয়াতে নতুন করে আবারও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির অনেক গণমাধ্যম বলছে এটি হচ্ছে স্লোভেনিয়াতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ওয়েভ।

স্লোভেনিয়ার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গেল ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মধ্য ইউরোপের এ দেশটিতে নতুন করে ২১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত এপ্রিলের পর নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় যেটি ছিল সর্বোচ্চ। এ ছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৮ জুন স্লোভেনিয়াতে নতুন করে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

এখন পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৪। মৃত্যুবরণ করেছেন ১১১ জন এবং চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১ হাজার ৩৮৪ জন।

সেকেন্ড ওয়েভে সংক্রমণ তীব্রতার মাত্রা বিবেচনায় প্রথম ধাপকে অতিক্রম করতে পারে বলে ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানার ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের সংক্রমণ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ম্যাটেয়া লোগার। তিনি এক সংবাদ সম্মলনে বলেছেন, স্লোভেনিয়াতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সবাই আরোগ্য লাভ না করায় এবং একই সঙ্গে এখন পর্যন্ত যেহেতু ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার করাও সম্ভব হয়নি, তাই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত দুশ্চিন্তা রয়েই যাচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এখন ইউরোপে গ্রীষ্মকাল। বছরের এ সময়ে ইউরোপের অধিবাসীরা ঘর থেকে বাইরে সময় কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই মানুষের চলাচল বৃদ্ধির কারণে সেকেন্ড ওয়েভে স্লোভেনিয়াসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনসহ ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে অবশ্য বলছেন, দীর্ঘদিন পর লকডাউন ও জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার কারণে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত সংযোগ স্বাভাবিক করার পর ঘরে বাইরে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেতনতার অভাব হোক কিংবা খামখেয়ালিপনা যেভাবেই হোক না কেন মানুষ এখন আর আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, যা সেকেন্ড ওয়েভে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সূত্রপাতের বড় কারণ হিসেবে অনেক বিশেষজ্ঞ অভিমত পোষণ করছেন।

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিবেচনায় ইউরোপের মধ্যে রাশিয়ার পর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বলকান দেশগুলো। সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া, মেসিডোনিয়ার মতো দেশে দ্বিতীয় ধাপে আবারও করোনার আঘাত আসতে শুরু করেছে। আইনের যথার্থ অনুশাসনের অভাব, সরকারের খামখেয়ালিপনা ও জনসাধারণের মাঝে সচেতনতার অভাবের কারণে ফের এসব দেশে করোনার আঘাত আসতে শুরু করেছে। বলকান দেশগুলো থেকে মানুষের অবাধ যাতায়াতের ফলে স্লোভেনিয়া এবং একই সঙ্গে স্লোভেনিয়ার প্রতিবেশী ক্রোয়েশিয়াতে ফের করোনা ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশ দুটির বিভিন্ন গণমাধ্যম। উল্লেখ্য, ২৫ জুন ক্রোয়েশিয়াতে নতুন করে ৯৫ জনের শরীরে কোভিড-১৯–এর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়, যা আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় দেশটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তাই সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, কসোভো, মেসিডোনিয়া বলকান দেশের নাগরিকদের স্লোভেনিয়াতে যাতায়াত করার ক্ষেত্রে এখন থেকে বিশেষ কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে তাদের সবাইকে স্লোভেনিয়াতে প্রবেশের পূর্বে বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড-১৯–এর টেস্ট করাতে হবে এবং স্লোভেনিয়াতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বলকান দেশের নাগরিকদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের সেলফ আইসোলেশনে পাঠানো হবে।

স্লোভেনিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যদি প্রথম ধাপের মতো এবারও পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে তাহলে পূর্বের মতো প্রয়োজনবোধে আবারও জরুরি অবস্থা জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হবে।

করোনা চিকিৎসায় ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য মেডিকেল ইকুয়েপমেন্ট ক্রয়ের জন্য স্লোভেনিয়ার সরকার স্থানীয় একটি সংস্থা জেনোপ্ল্যানেটের সঙ্গে আট মিলিয়ন ইউরোর একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু স্লোভেনিয়ার স্থানীয় জনগনের এক অংশের দাবি সরকারের এ চুক্তিতে বেশ কিছু অস্বচ্ছতা রয়েছে। প্রতিবাদ হিসেবে তারা রাজধানী লুবলিয়ানাসহ দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে সাইকেল মিছিল বের করে। এরই জেরে গত মঙ্গলবার স্লোভেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালেস হোস ও পুলিশের মহাপরিদর্শক অ্যান্টন ট্রাভনার পদত্যাগ করেছেন এবং দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী জড্রাভকো পোছিভালস্ককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

* শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া