সাজসজ্জায় আত্মবিশ্বাস

আমার প্রতিটা শখের গয়নার পেছনে কোনো না কোনো গল্প থাকে। আমি সুন্দরী কি না, সে তর্কে মোটেও যেতে চাইছি না, কারণ খোদা তাআলার প্রতিটি সৃষ্টিই কোনো না কোনো সুন্দর বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। আর নারীর বেলায় তার সৌন্দর্য কেবল তার ত্বকের বরণ বা দেহের গড়ন—এমনটি আমি মানতে রাজি নই মোটেও।

আর নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি, আর আকর্ষণীয় মানবিক আচরণ—দুই–ই আমাকে ভীষণভাবে টানে। আজ সে তর্কেও যেতে চাইছি না।

আজ আমি বলতে চাই সাজসজ্জা নিয়ে। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান বা কোনো বিশেষ মানুষের জন্যই কি সাজতে হয়? শুধু নিজের জন্যই কি নিজেকে একটু গুছিয়ে চলা যায় না? পরিবারের যে মানুষগুলোর সামনে দিয়ে প্রতিদিন ঘুরছেন, চান না তাদের চোখেও আপনাকে একটু গোছানো দেখাক?

প্রতিদিন হাজার কাজের ভিড়ে ক্লান্তি তো আসতেই পারে দেহে। মনে হতে পারে, দূর ছাই এখন সারা দিন পরে কে আবার চুল আঁচড়াতে বসে? বা ঘরেই তো আছি, কোঁচকানো গেঞ্জি পরেছি আর দুদিন না ধোয়া প্যান্ট পরেছি, তাতে কার কি যায়–আসে?

যায়–আসে রে আপু–ভাইয়া, হাজারবার যায়–আসে। ওই না ধোয়া পোশাক বা জট পাকানো চুলের প্রভাব আপনার মনে পড়ছে না বলতে চান? অবশ্যই পড়ছে।

আমি বলছি না অতি আত্মপ্রেমে নিজের ভেতরই ডুবে থাকুন কেবল, তবে নিজেকে ভালো না বাসতে পারলে যে অন্যদেরও আপনি ভালো রাখতে পারবেন না।

যে নারী মাত্রই মা হয়েছেন, নতুন শিশুর আগমনে আনন্দের পাশাপাশি সে বেচারি হয়তো ঠিকমতো নিজের যত্ন নিতে পারছেন না। কিছুক্ষণের জন্য পরিবারের অন্যরা (একদম যদি কেউ নাই থাকে, বাবা তো আছেন, তাই না?) যদি শিশুটির দায়িত্ব নেন, মা হয়তো নিজের একটু যত্ন নিয়ে নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে আসতে পারেন।

হয়তো বাড়ির পুরুষটি সারা দিন কাজ করে ক্লান্ত। অধোয়া কাপড় আর ঘর্মাক্ত শরীরে বিছানায় লম্বা হওয়ার আগে ভাবুন! কি করছেন কি? উঠুন রে ভাই! গোসলে যান! পরিষ্কার কাপড় পরুন, কিছুটা উদরপূর্তি করুন, তবে শুতে যান, অনেক ভালো লাগবে।

এই আমি যেমন, হালকা গয়না পরতে ভীষণ ভালোবাসি সেই ছোটবেলা থেকে। ভীষণ ভালো লাগে কাচের চুড়ি। এসব দিয়ে ঘরের ভেতরেই নিজেকে গোছাই, শুধু বাইরে গেলেই কেবল আমি সাজতে বাধ্য নই। একটু গুছিয়ে থাকা আমার মনের খোরাক, তাই গোছাই।

অনেকের আবার মেকআপ বেশ প্রিয়, তাদের মেকআপে বেশ সুন্দর দেখায়। আমি আবার অতি মেকআপকে তেমন ভালোবাসি না, কেবল একটুখানি কাজল (কখনো অল্প একটু রং চোখের ওপরের পাতায়) আর একটু লিপস্টিক, তা–ও মাঝেমধ্যে। তবে অনেকের মনের খোরাক একটু ভারী মেকআপ, যা তাদের বেশ মানিয়ে যায়।

শুধু অনুষ্ঠানে বাধ্য হয়ে যদি সাজতে হয়, দরকার নেই অমন সাজের। সাজুন, পরিষ্কার থাকুন, নিজেকে ভালো রাখতে। ভালো থাকুন, নিজের আশপাশকে ভালো রাখুন।